বিবাহ বিচ্ছেদের জাদুর পরিচয়:
এটি মূলত সম্পর্ক বিচ্ছেদের জাদুর অন্তর্ভুক্ত। এটি এমন এক নিকৃষ্ট কর্ম বা জাদু যা স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা, ভাই ভাই , বোন বোন, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব বা ব্যবসায়ীক দুই অংশীদারের মাঝে হিংসা, বিদ্বেষ, ঘৃণা , বিভেদ ও বিচ্ছেদ সৃষ্টি করে। বিচ্ছেদের জাদুটির লক্ষ্যই হল পরিবারের সদস্য বা একে অপরের মাঝে বিচ্ছিন্ন করা, আলাদা করা, তাদের মধ্যে ঘৃণা ছড়ানো, বিভেদ ও বিচ্ছেদ সৃষ্টি করা এবং অশান্তি সৃষ্টি করা। পবিত্র কুরআন ও হাদীসে এ যাদু সম্পর্কে স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে।
প্রিয় মুসলিম ভাই বোনদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ থাকবে যে বিবাহ বিচ্ছেদের মত এত বড় একটি বিষয়ে ফাইনাল সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে এই লেখাটি একবার বিস্তারিত পড়ুন এবং একবার রুকইয়াহ চিকিৎসা করে দেখুন।
বিচ্ছেদের জাদুর প্রকারভেদ:
১ । মা ও সন্তানের মাঝে বিচ্ছেদ
২। পিতা ও সন্তানের মাঝে বিচ্ছেদ
৩। দুই ভাইয়ের মাঝে বিচ্ছেদ
৪। বন্ধুদের মাঝে বিচ্ছেদ
৫। ব্যবসায়ীক অংশীদারের মাঝে বিচ্ছেদ
৬। চাকরিজীবী কলিগদের মাঝে বিচ্ছেদ
৭। বসের সাথে বিচ্ছেদ
৮। স্বামী ও স্ত্রীর বিচ্ছেদ ঘটানো।
আর শেষের প্রকারটি সর্বাপেক্ষা ভয়ানক এবং বেশি প্রচলিত। আলোচনার সুবিধার্থে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক নষ্ট বা বিবাহ বিচ্ছেদের যাদু নিয়ে আলোচনা করা হলো।
কুরআন কারিমে সূরা বাকারায় আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- তথাপি তারা তাদের কাছ থেকে এমন বিষয় (জাদু) শিক্ষা করতো যা দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটানো হয়। (সূরা বাকারাঃ ১০২)
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে- হযরত জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, ইবলীস পানিতে (সমুদ্রে) তার আসন/সিংহাসন স্থাপন করে এবং সে তার বাহিনীকে অভিযানে প্রেরণ করে আর সর্বাপেক্ষা প্রিয় সেই শয়তান হয়, যে সবার থেকে বেশি ফেতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে। অভিযান শেষে সকলেই অভিযানের সফলতা সরদার শয়তানের কাছে পেশ করতে থাকে। অতঃপর সরদার বলে, তোমরা কেউ কোন বড় ধরনের কাজ করে আসতে পারনি। অতঃপর সরদারের কাছে এক ছোট শয়তান এসে বলে, আমি অমুক ব্যক্তিকে ততক্ষণ পর্যন্ত ত্যাগ করিনি যতক্ষণ না আমি তার ও তার স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটিয়েছি। এরপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, শয়তানের সরদার সেই ছোট শয়তানকে তার নিকটতম করে নেয় ও বলে, তুমি কতইনা উত্তম কাজ করেছো। অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, বড় শয়তান ছোট শয়তানের সাথে আলিঙ্গন করে (মুসলিম-৬৮৪৬/২৮১২)
ইবনে কাসীর (রাহেমাহুল্লাহ) বলেনঃ স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছন্নতার যাদুর ফলে যাদুগ্ৰস্ত অপরজনকে কুদৃষ্টিতে দেখবে বা সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখবে বা এ ধরনের অন্যান্য বিচ্ছেদ সৃষ্টিকারী বিষয়ে পতিত হবে। (তাফসীর ইবনে কাসীরঃ ১/১৪৪)
আল্লাহর কাছে সবচেয়ে অপছন্দনীয় ও অপ্রিয় হালাল হচ্ছে তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ। প্রতিবছরই দেশে তালাকের হার বেড়েই চলছে। অনেকেই এর বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করলেও এর অন্যতম প্রধান একটি কারণ যে জাদু সেটি আলোচনার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। অনেকেই বিষয়টি জানেও না বা কল্পনাও করে না যে তা জাদুর কারণেও হতে পারে। অথচ কোরআন হাদিসে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট বর্ণনা এসেছে। আশিক জ্বীনের কারণেও স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিভিন্ন ঝামেলা, মনোমালিন্য ও বিচ্ছেদের সমস্যা হতে পারে।
যেকোনো সমস্যা বা রোগই প্রথম দিকেই চিহ্নিত করতে পারলে এবং চিকিৎসা শুরু করলে আল্লাহ চাহে তু দ্রুত এর থেকে সুস্থতা লাভ করা যায়। তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদের জাদুর ক্ষেত্রেও বিষয়টি তেমন। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো জটিলতা বা উপরোক্ত লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত রুকইয়াহ টেস্ট বা ডায়াগনোসিস রুকইয়াহ কিংবা বিচ্ছেদের জাদু নষ্টের রুকইয়াহ করে দেখা উচিত।
বিবাহ বিচ্ছেদের যাদুর লক্ষণসমূহ:
১। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হঠাৎ ভালবাসা থেকে শক্রতায় পরিণত হওয়া ।
২। উভয়ের মাঝে সন্দেহপ্রবণতা বেড়ে যাওয়া, একে অপরকে মাত্রাতিরিক্ত সন্দেহ করা।
৩। স্বামী-স্ত্রী উভয়ে বা কোনো একজন তুচ্ছ কারণে অতিরিক্ত রাগ করা। একটুতেই রেগে যাওয়া।
৪। কোনো চিন্তাভাবনা ছাড়াই বা অবচেতন মনে স্বামীর কাছে বারবার তালাক চাওয়া।
৫। উল্লেখযোগ্য ও যৌক্তিক কারণ ছাড়াই একজন অপরকে সহ্য করতে না পারা।
৬। অন্যদের সাথে ভালো ব্যবহার করলেও স্বামী স্ত্রী একেঅপরের সাথে অনিচ্ছা সত্ত্বেও দুর্ব্যবহার করা।
৭। সামান্য বিষয়কে কেন্দ্র করেই অতিমাত্রায় মতবিরোধ সৃষ্টি হওয়া এবং ঝগড়াঝাঁটি লেগে যাওয়া।
৮। কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি না হওয়া।
৯। পরস্পর ক্ষমা না চাওয়া বা ক্ষমা না করা। মনের মধ্যে জেদ পোষে রাখা।
১০। বিয়ের পর স্বাভাবিক থাকলেও বা সুশ্রী হওয়া সত্ত্বেও একজনের কাছে অপরজনকে অসুন্দর লাগা।
১১। একে অপরের সংস্পর্শে আসলেই মাথা ব্যথা করা বা অস্থিরতা লাগা।
১২। স্বামী-স্ত্রীর কেউ ঘরের বাহিরে বা দূরে থাকলে খুব ভালো কিন্তু ঘরে বা কাছে আসলেই উভয়ের বা একজনের মেজাজ খারাপ হয়ে যাওয়া।
১৩। স্বামী-স্ত্রীর নিকট একে অপর জনের প্রত্যেক কৰ্মই অপছন্দ হওয়া।
১৪। স্বামী-স্ত্রীর কারোর অপর পক্ষের বসার স্থানকেও অপছন্দ করা।
১৫। একজন অপরজনের ব্যবহৃত জিনিসপত্রও অপছন্দ লাগা।
১৬। স্বামী-স্ত্রীর হাস্যোজ্জল, প্রাণবন্ত চেহারাকেও একে অপরের কাছে অপছন্দ, গুমরোমুখো বা ভয়ংকর মনে হওয়া।
১৭। স্ত্রীর কাছে স্বামীর কথাবার্তা কিংবা স্বামীর কাছে স্ত্রীর কথাবার্তা সহ্য না হওয়া।
১৮। স্বামী-স্ত্রী উভয়ের বা একজনের একে অপরের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে অনিহা ও ঘৃণা লাগা।
১৯। স্বামী-স্ত্রী উভয়েই বা একজন সহবাসে আনন্দ বা তৃপ্তি না পাওয়া।
২০। কোনো কিছুতে একটু হেরফের হলেই স্ত্রীকে মারধর শুরু করা।
২১। ভালো কথাবার্তা ও সুন্দর আচরণও একেঅপরের কাছে বিরক্তিকর লাগা।
২২। স্বামীর জন্য স্ত্রীর অন্তরে ভালোবাসা রয়েছে কিন্তু কাছে আসতেই বিরক্ত লাগা।
২৩। বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ব্যথা করা। যেমন মাথা, পেট, বুক,, পা, কোমর ও মেরুদন্ড ইত্যাদি। ওষুধ খেয়েও ভালো না হওয়া।
২৪। অনিদ্রা ও উদ্বিগ্নতা; রাতে ঠিকঠাক মত ঘুম না হওয়া। ঘুমালে ও বারবার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া।
২৫। ভয়ংকর স্বপ্ন দেখা, স্বপ্ন দেখে চমকে উঠা।
২৬। আসরের পর হতে মধ্যরাত পর্যন্ত পেরেশানি ও অস্থিরতা লাগা।
২৭। মাঝেমাঝে স্বামী বা স্ত্রীর উপস্থিতে কারো প্রচুর পরিমাণে মৃগী রোগ বা খিঁচুনির সমস্যা হওয়া এবং অনুপস্থিতিতে স্বাভাবিক থাকা।
পাশাপাশি জ্বীন, আশিক জ্বীন ও জাদুর অন্যান্য লক্ষণও থাকতে পারে। সেগুলোও দেখে নিতে পারেন
রুকইয়াহ চিকিৎসা:
১. নিজে নিজে বা সেলফ রুকইয়াহ করতে চাইলে প্রথমে ভালোভাবে পাক-পবিত্র হয়ে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ুন। এরপর দু’হাত তুলে আল্লাহর কাছে আপনার সমস্যা থেকে ‘পরিত্রাণের’ জন্য এবং সুস্থতার জন্য দু’আ করে ইস্তিগফার দরুদ শরিফ পড়ে ট্রিটমেন্ট শুরু করুন।
২. সূরা বাকারা ১০২ নং আয়াত প্রতিদিন আধা ঘন্টা করে সকাল বিকাল দৈনিক দুই বার তিলাওয়াত করবেন।
৩. প্রতিদিন সকাল বিকাল দুইবার বা একবার সূরা সুরা ইয়াসিন, সুরা সফফাত, সুরা দুখান, সুরা জ্বিন তিলাওয়াত করবেন।
৪. সিহরের আয়াত গুলো প্রতিদিন একবার বা দুইবার তিলাওয়াত করবেন।
৫. প্রতিদিন সকাল বিকাল দৈনিক দুই বার সূরা বাকারাহ তিলাওয়াত করুন। (সম্ভব না হলে ভাগ করে প্রতি তিন দিনে একবার পড়তে পারেন।)
৬. তিলাওয়াত করতে না পারলে এইগুলোর অডিও রেকর্ড শুনবেন।
৭. সময় কম পেলে সিহরের কমন আয়াত ও সূরা বাকারাহ ১০২ নং আয়াত প্রতিদিন আধা ঘন্টা বা এক ঘন্টা পাঠ করবেন কিংবা অডিও শুনবেন।
৮. প্রতিদিন ১০০বার ইস্তিগফার এবং “লা-হাওলা ওয়ালা ক্বুওওয়াতা ইল্লা-বিল্লাহ” পড়বেন। বেশি পড়লে আরো ভালো।
৯. আর নিচের আয়াত গুলো স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মাঝে মহব্বত ভালোবাসা বৃদ্ধি এবং মনোমালিন্য ও অপছন্দনীয়তা দূর হওয়ার নিয়তে প্রতিদিন এক দুই বার তিলাওয়াত করবেন বা অডিও শুনবেন। পাশাপাশি পানি ইত্যাদি কিছুতে ফুঁ দিয়ে পান করবেন। সম্ভব হলে দুইজনেই পান করবেন।
সূরা বাকারাহ ২৮৫
آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْهِ مِن رَّبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ ۚ كُلٌّ آمَنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّن رُّسُلِهِ ۚ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا ۖ غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ
সূরা আল ইমরান ১০৩
وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا ۚ وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنتُمْ عَلَىٰ شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنْهَا ۗ
সূরা আল ইমরান ৮৩
أَفَغَيْرَ دِينِ اللَّهِ يَبْغُونَ وَلَهُ أَسْلَمَ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَإِلَيْهِ يُرْجَعُونَ
সূরা আল ইমরান ১৫৯
فَبِمَا رَحۡمَۃٍ مِّنَ اللّٰہِ لِنۡتَ لَہُمۡ ۚ وَ لَوۡ کُنۡتَ فَظًّا غَلِیۡظَ الۡقَلۡبِ لَانۡفَضُّوۡا مِنۡ حَوۡلِکَ ۪ فَاعۡفُ عَنۡہُمۡ وَ اسۡتَغۡفِرۡ لَہُمۡ وَ شَاوِرۡہُمۡ فِی الۡاَمۡرِ ۚ فَاِذَا عَزَمۡتَ فَتَوَکَّلۡ عَلَی اللّٰہِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ یُحِبُّ الۡمُتَوَکِّلِیۡنَ
সূরা আরাফ ৪৩
وَنَزَعْنَا مَا فِي صُدُورِهِم مِّنْ غِلٍّ تَجْرِي مِن تَحْتِهِمُ الْأَنْهَارُ ۖ وَقَالُوا الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي هَدَانَا لِهَٰذَا وَمَا كُنَّا لِنَهْتَدِيَ لَوْلَا أَنْ هَدَانَا اللَّهُ ۖ
সূরা আরাফ ৮৯
قَدِ افْتَرَيْنَا عَلَى اللَّهِ كَذِبًا إِنْ عُدْنَا فِي مِلَّتِكُم بَعْدَ إِذْ نَجَّانَا اللَّهُ مِنْهَا ۚ وَمَا يَكُونُ لَنَا أَن نَّعُودَ فِيهَا إِلَّا أَن يَشَاءَ اللَّهُ رَبُّنَا ۚ وَسِعَ رَبُّنَا كُلَّ شَيْءٍ عِلْمًا ۚ عَلَى اللَّهِ تَوَكَّلْنَا ۚ رَبَّنَا افْتَحْ بَيْنَنَا وَبَيْنَ قَوْمِنَا بِالْحَقِّ وَأَنتَ خَيْرُ الْفَاتِحِينَ.
সূরাতুল হিজর ৪৭
وَنَزَعْنَا مَا فِي صُدُورِهِم مِّنْ غِلٍّ إِخْوَانًا عَلَىٰ سُرُرٍ مُّتَقَابِلِينَ
সূরা আনফাল ৬৩
وَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِهِمْ ۚ لَوْ أَنفَقْتَ مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا مَّا أَلَّفْتَ بَيْنَ قُلُوبِهِمْ وَلَٰكِنَّ اللَّهَ أَلَّفَ بَيْنَهُمْ ۚ إِنَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
সূরা ত্বা-হা ৩৯-৪০
أَنِ اقْذِفِيهِ فِي التَّابُوتِ فَاقْذِفِيهِ فِي الْيَمِّ فَلْيُلْقِهِ الْيَمُّ بِالسَّاحِلِ يَأْخُذْهُ عَدُوٌّ لِّي وَعَدُوٌّ لَّهُ ۚ وَأَلْقَيْتُ عَلَيْكَ مَحَبَّةً مِّنِّي وَلِتُصْنَعَ عَلَىٰ عَيْنِي (٣٩) إِذْ تَمْشِي أُخْتُكَ فَتَقُولُ هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَىٰ مَن يَكْفُلُهُ ۖ فَرَجَعْنَاكَ إِلَىٰ أُمِّكَ كَيْ تَقَرَّ عَيْنُهَا وَلَا تَحْزَنَ ۚ وَقَتَلْتَ نَفْسًا فَنَجَّيْنَاكَ مِنَ الْغَمِّ وَفَتَنَّاكَ فُتُونًا ۚ فَلَبِثْتَ سِنِينَ فِي أَهْلِ مَدْيَنَ ثُمَّ جِئْتَ عَلَىٰ قَدَرٍ يَا مُوسَىٰ (٤٠)
সূরা রূম ২১
وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
সূরা ইউসুফ ২৯-৩০
يُوسُفُ أَعْرِضْ عَنْ هَٰذَا ۚ وَاسْتَغْفِرِي لِذَنبِكِ ۖ إِنَّكِ كُنتِ مِنَ الْخَاطِئِينَ(٢٩) وَقَالَ نِسْوَةٌ فِي الْمَدِينَةِ امْرَأَتُ الْعَزِيزِ تُرَاوِدُ فَتَاهَا عَن نَّفْسِهِ ۖ قَدْ شَغَفَهَا حُبًّا ۖ إِنَّا لَنَرَاهَا فِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ (٣٠)
সূরা তাওবা ১২৮-১২৯
لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ (١٢٨) فَإِن تَوَلَّوْا فَقُلْ حَسْبِيَ اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ ۖ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ (١٢٩)
সূরা সোয়াদ ৩২-৩৩
فَقَالَ إِنِّي أَحْبَبْتُ حُبَّ الْخَيْرِ عَن ذِكْرِ رَبِّي حَتَّىٰ تَوَارَتْ بِالْحِجَابِ(٣٢) رُدُّوهَا عَلَيَّ ۖ فَطَفِقَ مَسْحًا بِالسُّوقِ وَالْأَعْنَاقِ (٣٣)
সূরা হুজরাত ১০
إِنّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُواْ بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ وَاتّقُواْ اللّهَ لَعَلّكُمْ تُرْحَمُونَ
সূরা মুমতাহিনা ৭
عَسَى اللّهُ أَن يَجْعَلَ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ الّذِينَ عَادَيْتُم مّنْهُم مّوَدّةً وَاللّهُ قَدِيرٌ
সূরা বনী ইসরাইল ৫৩
وَقُل لّعِبَادِي يَقُولُواْ الّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنّ الشّيْطَانَ يَنزَغُ بَيْنَهُمْ
সূরা হাশর ১০
وَالَّذِينَ جَاءُوا مِن بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِّلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ
সূরা বাকারাহ ২০
يَكَادُ الْبَرْقُ يَخْطَفُ أَبْصَارَهُمْ ۖ كُلَّمَا أَضَاءَ لَهُم مَّشَوْا فِيهِ وَإِذَا أَظْلَمَ عَلَيْهِمْ قَامُوا ۚ وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ لَذَهَبَ بِسَمْعِهِمْ وَأَبْصَارِهِمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
সূরা বাকারাহ ১০৫
مَّا يَوَدُّ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَلَا الْمُشْرِكِينَ أَن يُنَزَّلَ عَلَيْكُم مِّنْ خَيْرٍ مِّن رَّبِّكُمْ ۗ وَاللَّهُ يَخْتَصُّ بِرَحْمَتِهِ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ
সূরা বাকারাহ ১৩৭
فَإِنْ آمَنُوا بِمِثْلِ مَا آمَنتُم بِهِ فَقَدِ اهْتَدَوا ۖ وَّإِن تَوَلَّوْا فَإِنَّمَا هُمْ فِي شِقَاقٍ ۖ فَسَيَكْفِيكَهُمُ اللَّهُ ۚ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
সূরা বাকারাহ ১৬৪
وَإِلَٰهُكُمْ إِلَٰهٌ وَاحِدٌ ۖ لَّا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمَٰنُ الرَّحِيمُ
সূরা আল ইমরান ২৬-২৭
قُلِ اللَّهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَن تَشَاءُ وَتَنزِعُ الْمُلْكَ مِمَّن تَشَاءُ وَتُعِزُّ مَن تَشَاءُ وَتُذِلُّ مَن تَشَاءُ ۖ بِيَدِكَ الْخَيْرُ ۖ إِنَّكَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
রুকইয়াহ সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার:
১. সিহরের কমন আয়াত ও সূরা গুলো তিন বার করে পড়ে কালোজিরা, কালোজিরার তেল ও পানিতে শিফার নিয়তে সামান্য থুথু মিশ্রিত ফুঁ দিবেন।
এরপর ওই কালোজিরা প্রতিদিন অল্প অল্প করে খাবেন। আর কালোজিরার তেল কপালে এবং যে অঙ্গে ব্যথা হয় সেখানে মালিশ করবেন সকাল-বিকেল দৈনিক দুই বার।
২. আর পানি প্রতিদিন কয়েকবার পান করবেন এবং যখনই পানি পানের প্রয়োজন হবে তখনই পান করবেন। শেষ হওয়ার আগেই আবার মিশিয়ে নিবেন। তবে নতুন করে পড়ে নিলেই ভালো।
রুকইয়াহ গোসল:
১. পান করার জন্য তৈরি করা পড়া পানি থেকে আধা গ্লাস বা এক গ্লাস পানি নিয়ে গোসলের পানিতে মিশিয়ে গোসল করবেন। এভাবে প্রতিদিন গোসল করবেন, বা যেদিন গোসল করবেন সেদিনই রুকইয়াহ গোসল করবেন।
২. মাঝেমধ্যে একাধারে ৩/৭/১৪ দিন বরই পাতার গোসল করবেন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য:
১. যখনই রুকইয়াহ তিলাওয়াত করবেন তখনই তিলাওয়াত শেষে বা মাঝেমধ্যে রুকইয়াহ সাপ্লিমেন্ট গুলোতে ফুঁ দিবেন।
২. রুকইয়াহ ভালোভাবে কাজ করার জন্য গানবাজনা শোনা যাবেনা। নামাজ-কালাম ঠিকঠাক পড়তে হবে। ফরজ ইবাদাতে যেন ত্রুটি না হয়। পর্দা করতে হবে; মাহরাম ও নন মাহরাম মেনে চলতে হবে।
৩. আর হেফাজতের এবং নতুন করে যেন কিছুই করতে না পারে সে নিয়তে সকাল সন্ধ্যার মাসনুন দোয়া-কালাম এবং নিরাপত্তা এর আমল ঠিকমত স্থায়ীভাবে করবেন।
৪. আর পরিবারের কাউকে রুকইয়াহ করতে চাইলে প্রথমে আপনি নিরাপত্তার আমল করে তারপর রোগীর মাথায় হাত রেখে উপরোক্ত রুকইয়াহ’র আয়াত ও সূরা গুলো উচ্চ আওয়াজে তিলাওয়াত করুন।
৫. বিবাহ বিচ্ছেদ এর রুকইয়াহ শুরু করার পূর্বে এক সপ্তাহ বদনজরের রুকইয়াহ নিলে ভালো হবে।
শেষকথা:
এভাবে ৭ দিন থেকে এক মাস পর্যন্ত রুকইয়াহ করুন। যদি যদি সুস্থ হয়ে যান তো আলহামদুলিল্লাহ। এরপরও সমস্যা বুঝতে পারলে প্রেসক্রিপশনের মেয়াদ বাড়িয়ে নিন এবং একই নির্দেশনা ফলো করুন। প্রয়োজনে আবার রাকির কাছে সরাসরি রুকইয়াহ করুন এবং অবস্থার উন্নতি ও সমস্যা অনুযায়ী রাকির পরামর্শ ফলো করুন।
গুরুত্বপূর্ণ নোটঃ
এই যাদুর ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হচ্ছে, এই যাদুতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জ্বীনকে ব্যবহার করা হয়, পাশাপাশি এমনি যাদুও করা হয়। অর্থাৎ মাল্টিপল মাস! এটি খুবই জটিল ও মারাত্মক ভয়ানক জাদু।
এজন্য সাধারণত প্রথমেই কোনো অভিজ্ঞ রাক্বীর (যিনি রুকইয়াহ করেন) কাছে গিয়ে রুকইয়াহ করিয়ে নিন। তবুও সেলফ রুকইয়াহ বা নিজে নিজে রুকইয়াহ করতে চাইলে বলবো, এই সমস্যার জন্য সেলফ রুকইয়ায় ইনশাআল্লাহ অনেকেই ভালো ফল পাবেন, তবে যদি জ্বীনের সমস্যা বুঝতে পারেন, তবে কোনো অভিজ্ঞ রাক্বীর কাছে সরাসরি রুকইয়াহ করানোই উত্তম হবে।
দ্বিতীয়ত: এই যাদুর চিকিৎসার ক্ষেত্রে পুরোপুরি কিউর হতে অনেকের একটু লম্বা সময় লাগতে পারে, এজন্য ধৈর্যহারা হওয়া যাবেনা। সবরের সাথে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।
মনে রাখবেন, আপনার শত্রু আপনার ক্ষতি করলেই সফল হয়ে যায়না, সে তখনই সফল হয়, যখন আপনি সমাধানের ব্যাপারে হাল ছেড়ে দেন। শয়তান আপনাকে দিয়ে গুনাহ করালেই সফল হয়না, বরং শয়তান তখনই সফল হয়, যখন আপনি নিরাশ হয়ে তাওবা ও চেষ্টা করা ছেড়ে দেন। এজন্য একবার যদি বুঝতে পারেন সমস্যা আছে, তবে এর শেষ না দেখে ছাড়বেন না।
বিচ্ছেদের জাদু নিয়ে কিছু কথা!
নারীরা সাধারণত নিজের চেয়ে স্বামী নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত। স্বামী ঝগড়া করলে, কথা কম বললে , রাগ করলে অনেকেই মনে করে স্বামীর সমস্যা, স্বামীকে হয়তো জাদু করা হয়েছে।
অনেক বোন আমাদের কাছে মেসেজ দিয়ে জানতে চান স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা, প্রায়ই ঝগড়াঝাঁটি,কথা কাটাকাটি ও মনোমালিন্য হয়, স্বামী রাগারাগী করে , দূরে থাকে , কথা বলে না ইত্যাদি এখন করনীয় কি
যদি বলি রুকইয়াহ করেন তখন বলে সমস্যা আমার না বরং সমস্যা আমার স্বামীর! আমার হাজব্যান্ড তো এইগুলো বুঝে না, বিশ্বাস করে না, এইগুলো বললে আরো উল্টো ঝামেলা হবে, উনি রুকইয়াহ করবে না তাই দূর থেকে আপনারা কিছু করতে পারবেন? ইত্যাদি।
অনেক ভাইকেও দেখি মেসেজ দিয়ে চান আমাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়, ওয়াইফ অতিরিক্ত রাগ করে, সংসার করবেনা বলে, বাপের বাড়ি চলে গেছে ইত্যাদি এখন করণীয় কি? তাকে রুকইয়াহ করানো যাবে না ইত্যাদি।
মনে রাখবেন বিবাহ বিচ্ছেদের যাদু সাধারণত স্বামী স্ত্রী দুজনকেই করা হয়, কখনো কখনো কোনো একজনকে করা হয়। যদি শুধু স্ত্রী’কেই জাদু করা হয় তবুও এর প্রভাবে স্বামী দুর্ব্যবহার করতে পারে, স্ত্রীর উপর থাকা জাদু স্বামীর উপর প্রভাব ফেলতে পারে, আমাদের দেখা ৮০% থেকে ৯০% সমস্যা এমন। ঠিক তদ্রুপ স্বামীর ক্ষেত্রেও
কিন্তু অধিকাংশ বোনেরা মনে করে তার সমস্যা নেই বরং সমস্যা তার স্বামীর, তার স্বামীকে জাদু করা হয়েছে, কিন্তু নিজের যে সমস্যা থাকতে পারে বা তাকেও জাদু করা হতে পারে সেটা চিন্তাও করে না। তেমনি ভাইদের ক্ষেত্রেও।
তাই সম্ভব হলে দুইজনেই অর্থাৎ স্বামীর পাশাপাশি আপনিও রুকইয়াহ টেস্ট করুন অন্যথায় শুধু আপনি রুকইয়াহ টেস্ট করে দেখুন। ভাইদের ক্ষেত্রেও একই কথা, সম্ভব হলে দু’জনেই রুকইয়াহ করুন অন্যথায় শুধু আপনি রুকইয়াহ করে দেখুন।
হাজবেন্ড ওয়াইফ দুজনের কারো সাথে যদি আশিক জ্বীনের সমস্যা থাকে তখন এটা তো খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার যে রোগীর সাথে থাকা আশিক জ্বীনটা স্বামী/স্ত্রীকে উস্কানি ও ওয়াসওয়াসা দিয়ে অপর জনের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলে, মনের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি করে, নজর হাসাদ ও জাদুর মাধ্যমে মেজাজ খিটখিটে করে দেয়, শয়তান টা বিচ্ছেদের নজর হাসাদ দেয় ও জাদু করে, গিঁট দেয় ইত্যাদি। ফলে দুজনের মধ্যে প্রচুর ঝামেলা সৃষ্টি হয়, দুজনের দিক থেকেই ঝগড়া ও মনোমালিন্য হয়, একজন অপরজনকে অপছন্দ করে, বিচ্ছেদ চায় ইত্যাদি।
এজন্য প্রথমে বুঝতে হবে যে আসলে সমস্যা টা কি এবং কার মধ্যে মূলত সমস্যা। তাই প্রথমে ডায়াগনোসিস রুকইয়াহ করুন।