জ্বীনের পরিচয়:
জ্বীন (الجن) একটি আরবী শব্দ। জ্বীন শব্দটি জান্নাহ ক্রিয়া থেকে নির্গত। অর্থ হচ্ছে গোপন, অদৃশ্য, অন্তরাল, লুকায়িত আবৃত, আড়াল ইত্যাদি। জ্বীনকে যেহেতু দেখা যায় না এবং তা মানুষের দৃষ্টি থেকে গোপন থাকে এজন্যই জ্বীন কে জ্বীন বলা হয়। জ্বীনদের জগৎ মানুষ ও ফেরেশতাদের জগৎ থেকে ভিন্ন। যদিও কিছু ক্ষেত্রে জ্বীন ও মানুষের বৈশিষ্ট্যের মাঝে সাদৃশ্য রয়েছে।
মানুষ জ্বীন দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা জ্বীন মানুষকে ক্ষতি, মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তার করে তখন আরবীতে একে বলা হয় আল মাসসু (المس) এমনিভাবে আস সার’ঊ ( الصرع ) ও বলা হয়। মৃগীরোগ বোঝাতেও আস সার’ঊ শব্দটি ব্যবহার হয়। ইংরেজিতে বলা হয় Possession of Jin বা Demon is possession । বাংলা বলা হয় জ্বীনে ধরা, জ্বীনের আছর, জ্বীন ভর করা ইত্যাদি। সাধারণ জনগণ, গ্রামের মানুষ এবং কবিরাজ তান্ত্রিকরা এটাকে বলে বাতাস লাগা, আলগা সমস্যা নামে।
জ্বীনের পরিচয়:
জ্বীন (الجن) একটি আরবী শব্দ। অর্থ হচ্ছে গোপন, অদৃশ্য, অন্তরাল, লুকায়িত ইত্যাদি। জ্বীনকে যেহেতু দেখা যায় না এবং সে মানুষের দৃষ্টি থেকে গোপন থাকে এজন্যই জ্বীন কে জ্বীন বলা হয়। জ্বীন যখন মানুষকে ক্ষতি করে, মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তার করে তখন আরবীতে একে বলা হয় আল মাসসু (المس) এমনিভাবে আস সার’ঊ ( الصرع ) ও বলা হয়। মৃগীরোগ বোঝাতেও আস সার’ঊ শব্দটি ব্যবহার হয়। ইংরেজিতে বলা হয় Possession of Jin বা Demon is possession । বাংলা বলা হয় জ্বীনে ধরা, জ্বীনের আছর, জ্বীন ভর করা ইত্যাদি। সাধারণ মানুষ যাকে বাতাস লাগা ও আলগা সমস্যা নামে চিনে।
জ্বীনের অস্তিত্ব ও বাস্তবতা:
জ্বীনের অস্তিত্ব স্বীকার করা ঈমান বিল গাইব অদৃশ্যের ওপর ঈমান আনার অন্তর্ভুক্ত। কোনো মুসলিম যদি জ্বীনের অস্তিত্বকে অস্বীকার তাহলে সে আর মুমিন থাকবে না, কাফের হয়ে যাবে।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন–
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
আমি জ্বীন এবং মানুষকে সৃষ্টি করেছি কেবল আমার আমার ইবাদাতের জন্য। (সূরা আয যারিয়াত ৫৬)
অন্যত্র আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَإِذْ صَرَفْنَا إِلَيْكَ نَفَرًا مِّنَ الْجِنِّ يَسْتَمِعُونَ الْقُرْآنَ
আর ( হে রাসূল স্মরণ করো) যখন আমি জ্বীনদের একটি দলকে কোরআন শ্রবণের জন্য তোমার অভিমুখী করে দিয়েছিলাম। ( সূরা আহক্বাফ ২৯)
এছাড়াও কোরআনের প্রায় ৪০ টির বেশি আয়াতে আল্লাহ তাআলা জ্বীনের আলোচনা করেছেন। এমনকি সূরা জ্বীন নামে আল্লাহ তাআলা স্বতন্ত্র একটি সূরা-ই অবতীর্ণ করেছেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু বলেছেন–
إِنَّ الشَّيْطَانَ يَجْرِي مِنَ الإِنْسَانِ مَجْرَى الدَّمِ،
আলী ইবনে হুসাইন রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় শয়তান মানুষের শিরাউপশিরায় চলাচল করে। ( বুখারী ২০৩৮, মুসলিম ২১৭৪)
জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহ আনহু বর্ণনা করেন, গাযওয়ায়ে যাতুর রিকা অভিযানে আমরা রাসূল সা. এর সাথে ছিলাম, এক মহিলা তার বাচ্চাকে নিয়ে এসে বললো ইয়া রাসুলুল্লাহ শয়তান এর ওপর ভর করেছে। রাসুল সা. বাচ্চাটাকে একদম কাছে নিয়ে আসলেন, এরপর “উখরুজ আদুওয়াল্লাহ, আনা রাসুলুল্লাহ!” বলে ছেলেটার মুখে ফু দিলেন তিনবার, তারপর বললেন, যাও এর আর কোনো সমস্যা নাই। (মুজামুল আওসাত, মাজমাউয যাওয়ায়েদ)
জ্বীনের আছর ও রোগব্যাধি:
জ্বীন মানুষকে আছর করতে পারে এবং জ্বীন শয়তানের কারণে মানুষের শারীরিক মানসিক বিভিন্ন রোগব্যাধিও হতে পারে।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন-
الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ
যারা সুদ খায়, তারা কিমামতে ওই ব্যক্তির মতো দণ্ডায়মান হবে, যাকে শয়তান আছর করে পাগল বানিয়ে দিয়েছে।
পাগলামী একটি মানসিক সমস্যা। জ্বীনের কারণে যদি পাগলামির মতো সমস্যা হতে পারে তাহলে বোঝা গেল জ্বীনের কারণে শারীরিক মানসিক যেকোনো রোগব্যাধিও হতে পারে।
এছাড়াও উপরেও আয়াত ও হাদিস গুলো থেকেও বুঝতে পেরেছেন। তাছাড়া এমন অসংখ্য আয়াত ও হাদিস রয়েছে যেখানে জ্বীনের কারণে বিভিন্ন রোগব্যাধির কথা উল্লেখিত হয়েছে। সংক্ষেপ করার কারণে আমরা এখানে বিস্তারিত আলোচনা করছি না।
জ্বীন কেন মানুষের কাছে আসে বা আছর করে:
অনেকের মনেই এই প্রশ্ন যে, জ্বীন কেন আসে, কেন আছর করে, লাভটা কি তার? তো এবার জেনে নিই কেন মানুষকে জ্বীন আছর করে। এর বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যেমন:
১. কাউকে পছন্দ হলে, ভালোবাসলে কিংবা শারীরিক চাহিদা পূরণের করতে চাইলে তখন আসর করে।
২. যদি কোনোভাবে জ্বীনকে জুলুম করা বা কষ্ট দেয়া হয় অথবা আঘাত করা হয়।
২. যদি কোনো জিনের ওপর গরম পানি ফেলা হয়
৩. অথবা কোনো জিনের গায়ে প্রসাব করা হয়
৪. আগের কোনো শত্রুতার জেরে আসর করতে পারে, বা ক্ষতি করতে পারে। যেমন পিতা-মাতা বা দাদাদাদি কেউ কষ্ট দিয়েছিল, এজন্য প্রতিশোধ নিতে আসতে পারে।
৫. কোনো কারণ ছাড়াই অহেতুক কষ্ট দেয়ার জন্য আসর করতে পারে।
৬. সালাত বা ইবাদতে বাধা দেয়ার জন্য আসতে পারে।
৭. আগে সালাত পড়তো না কিন্তু হঠাৎ ইসলাম পালন শুরু করলে সেটা কোনো জ্বীন শয়তানের কাছে ভালো না লাগলে হিংসায় জ্বলে কষ্ট ও সালাতে বাধা দেয়ার জন্য আসতে পারে।
৮. মাদ্রাসায় পড়ালেখা করতে বা কুরআন হিফজ করতে না দেয়ার জন্য আসতে পারে। কারণ শয়তান জ্বীন রা চায়না কেউ আলেম হয়ে জান্নাতে যাক এবং অন্যদেরকেও ইসলামের দাওয়াত দিক।
৯. কেউ অতিরিক্ত মেধাবী হলে বা খুব বেশি পড়ালেখা করলেও তার প্রতি হিংসাত্মক হয়ে পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটানোর জন্যও আসতে পারে।
১০. কেউ কাউকে ক্ষতি করার জন্য, যেমন বিয়ে বন্ধ, বিবাহ বিচ্ছেদ, পাগল করা, বাচ্চা না হওয়া এরকম বিভিন্ন উদ্দেশ্যে জাদু করে পাঠালে তখন আসতে পারে।
১১. যদি তাদের কাউকে ইচ্ছাকৃত বা ভুলক্রমে মেরে ফেলা হয়, এজন্য বদলা নিতে ক্ষতি করতে পারে।
এখানে জেনে রাখা উচিত, মানুষকে বিনাদোষে কষ্ট দেয়া যেমন হারাম তেমন জিনদের কষ্ট দেয়াও হারাম। ইচ্ছাকৃতভাবে বিনাদোষে জিনকে হত্যা করলেও কিসাস লাযিম হয়। তবে অনিচ্ছাকৃত ভাবে আঘাত করলে বা হত্যা করলে কিসাস (বদলা) নেয়া বৈধ হবে না।
এক্ষেত্রে রাসুল সা. একটা সহজ উসুল (মূলনীতি) বর্ণনা করেছেন, কোনো ক্ষতিকর প্রাণী যেমন- সাপ দেখলে তিনবার বলতে হবে, “তুমি জ্বিন হলে এখান থেকে চলে যাও।” এরপরও না গেলে তখন মারলে কিসাস নেয়া যাবেনা। একজন মুহাদ্দিসের ঘটনা প্রসিদ্ধ আছে, যিনি একটা সাপকে হত্যা করেছিলেন, সেটি আসলে জ্বিন ছিলো। তখন জ্বিনেরা উনাকে জ্বিনদের আদালতে নিয়ে যায়। উনি হাদিসটি শুনিয়ে বলেন, আমি তো তিনবার চলে যেতে বলেছিলাম। সেখানে একজন জ্বিন সাহাবী ছিলো, তিনি বলেন- এটা আমিও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি।
এরপর জ্বিনেরা উক্ত মুহাদ্দিসকে নিজ বাড়িতে ফেরত দিয়ে যায়।
জ্বীন কখন আছর বা মানুষের শরীরের প্রবেশ করে:
খবিস জ্বিন ৪ অবস্থায় মানুষের ভেতর ঢুকতে পারে।
১. খুব ভীত অবস্থায় বা খুব বেশি ভয় পেলে।
২. খুব রাগান্বিত অবস্থায়।
৩. খুব উদাসীন অবস্থায়।
৪. কুপ্রবৃত্তিতে মত্ত ও নাপাক অবস্থায়।
(মানে যখন কোনো খারাপ কাজ করছে এই অবস্থায়)
জ্বীন আছর করার লক্ষণসমূহ:
(ক) ঘুমন্ত অবস্থায় লক্ষণসমূহ-
১. নিদ্রাহীনতা। রাতে ঠিকমতো ঘুম না হওয়া। ঘুমানোর চেষ্টা করেও ঘুম না আসা।
২. ঘুমালেও হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া, এরপর আর সহজে ঘুম না আসা।
৩. অস্থিরতা: রাতে বারবার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া।
৪. উদ্বিগ্নতা, হঠাৎ ঘুমের মধ্যে লাফিয়ে উঠা।
৫. স্লিপ প্যারালাইসিস (বোবায় ধরা), নাড়াচাড়া করতে না পারা। ঘুমের মধ্যে কেউ কষ্ট দিচ্ছে বা চেপে ধরেছে কিন্তু চেষ্টা করেও জাগ্রত হতে না পারা।
৬. স্বপ্নে বিভিন্ন প্রাণী দেখা। যেমন: কুকুর, বিড়াল, সাপ, উট, গরু, শিয়াল ইঁদুর, সিংহ ইত্যাদি।
৭. প্রায়ই দুঃস্বপ্ন, ভয়ানক, স্বপ্ন দেখা বা বিরক্তিকর স্বপ্ন দেখা। স্বপ্ন দেখে চমকে ওঠা।
৮. ঘুমন্ত অবস্থায় হাসি-কান্না করা, জোরে চিৎকার করে উঠা।
৯. ঘুমের মধ্যে উচ্চস্বরে কথা বলা, গোঙানো বা জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেয়া।
১০. ঘুমের মধ্যে দাঁত কাটা বা কটমট করা।
১১. ঘুমের মধ্যে অবচেতন অবস্থায় হাঁটাহাঁটি করা, ঘর বের হয়ে যাওয়া।
১২. ঘুমের মধ্যে নিজেকে উঁচু স্থান থেকে নিচে পড়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখা।
১৩. স্বপ্নে নিজেকে কবরস্থানে, ময়লা জায়গায় বা ভয়ংকর রাস্তায় দেখা।
১৪. স্বপ্নে অদ্ভুত আকৃতির মানুষ দেখা। যেমন: বিশাল লম্বা, খুবই কালো, অনেক খাটো ইত্যাদি।
১৫. কোনো বিপদ হলে সেগুলো আগে স্বপ্ন দেখা। কোনো কিছু স্বপ্ন দেখলে অধিকাংশই সত্যি হয়ে যাওয়া।
১৬. স্বপ্নে প্রায়শই খেতে দেখা। কেউ জোর করে খাওয়াচ্ছে বা নিজেই খাচ্ছেন এরকম স্বপ্ন দেখা।
(ক) জাগ্রত অবস্থায় লক্ষণসমূহ-
১. প্রায়ই বা সর্বদা মাথাব্যথা: যা কোনো কারণে নয় এবং ওষুধ খেয়েও ভালো হয়না।
২. ইবাদত বিমূখতা: যিকির, সালাত ও অন্যান্য ইবাদাতের প্রতি অনিহা এবং দিন দিন আগ্রহ হারিয়ে যাওয়া।
৩. কুরআন তিলাওয়াত করলে বা শুনলে অস্বস্তি ও বিরক্তি লাগা।
৪. আজান শুনলে অসহ্য, অস্বস্তি ও বিরক্তি লাগা।
৫. মানসিক অস্থিরতা, চাপ, দুশ্চিন্তা, হতাশা, অতিরিক্ত সন্দেহ এবং সবকিছু ভুলে যাওয়া।
৬. শারীরিক দুর্বলতা ও নিষ্কৃয়তা, কোনো কিছু করতে না চাওয়া, অলস লাগা।
৭. মাঝেমধ্যে খিঁচুনি ও মৃগীরোগ হওয়া।
৮. কেউ ডাকছে এরকম অনুভব হওয়া অথচ বাস্তবে কেউ ডাকেনি বা আশেপাশে কেউ নেই।
৯. প্রায়ই একা একা কারো সাথে কথা বলা।
১০. অদৃশ্য আওয়াজ কথা বা আওয়াজ শোনা যা অন্য কেউ শুনতে পায়না।
১১. হ্যালুসিনেশন: তথা জাগ্রত অবস্থায় স্বপ্নের বিভিন্ন কিছু দেখতে পাওয়া।
১২. আশেপাশে কেউ আছে বা পাশ দিয়ে দৌড়ে চলে গেছে অনুভব করা।
১৩. সর্বদা মেজাজ বিগড়ে থাকা, হুটহাট রেগে যাওয়া।
১৪. শরীরের কোনো অঙ্গ বিকল বা প্যারালাইজড হয়ে যাওয়া, যা চিকিৎসা করেও ভালো হয়না।
১৫. মনযোগ বিক্ষিপ্ততা। কোনো কিছুতেই মন না বসা।
১৬. অকারণে কান্নাকাটি করা, হঠাৎ হঠাৎ কান্না করতে প্রচণ্ড ইচ্ছে হওয়া এবং কান্না করলে ভালো লাগা।
১৭. হঠাৎ হঠাৎ ভিন্ন ভাষায় কথা।
১৮. অস্বাভাবিক আচরণ করা।
১৯. খারাপ আচরণ করতে না চাইলেও অনিয়ন্ত্রিতভাবে খারাপ আচরণ করে ফেলা।
২০. হঠাৎ অজ্ঞান বা বেহুঁশ হয়ে যাওয়া।
২১. উল্লেখযোগ্য কারণ ছাড়াই হৃদস্পন্দন বা হার্টবিট বেড়ে যাওয়া। শ্বাসকষ্ট হওয়া।
২২. দাঁতে দাঁতে খিল লেগে যাওয়া, মুখ থেকে ফেনা বের হওয়া।
২৩. চেহারার রঙ ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া। অতিরিক্ত ব্রণ উঠা।
২৪. একাকিত্বতা: একাকী ও নির্জনে থাকতে পছন্দ করা।
২৫. আতঙ্কভাব: প্রায় সময় মনের মধ্যে এক ধরনের ভয় কাজ করা।
২৬. ভিন্নধর্ম ও ধর্মীয় কার্যকলাপ, সাজসজ্জা ও রীতিনীতি পছন্দ করা।
২৭. সন্তান বুকের দুধ খেতে চাওয়া বা সন্তানকে বুকের দুধ খেতে না দেওয়া।
২৮. মহিলাদের অনিয়মিত ঋতুশ্রাব। অস্বাভাবিক (কম বা বেশী) ঋতুশ্রাব। যা চিকিৎসা করেও ভালো হয়না।
২৯. কোনো অঙ্গে প্রায়ই ব্যথা থাকা, চিকিৎসা করেও ভালো না হওয়া।
৩০. শরীরে পিঁপড়া হাঁটার মতো অনুভব হওয়া, বিশেষ করে পায়ে ও পাতে।
৩১. অকারণে শরীরে ক্ষত, নীল বা লাল দাগ দেখতে পাওয়া।
৩২. অকারণে ছাদে গিয়ে বসে থাকা, চিৎকার করা, ভাঙচুর করা।
রুকইয়াহ পরামর্শ-
জ্বীনের সমস্যার জন্য সাধারণত সরাসরি রুকইয়াহ করতে হয়। পাশাপাশি সেলফ রুকইয়াহ ও চালিয়ে যেতে হয়। অর্থাৎ সেলফ রুকইয়াহ ও সরাসরি রুকইয়াহ দুটোই আবশ্যক। কারো জ্বীনের সমস্যা থাকলে বা কেউ যদি জ্বীনের সমস্যা আছে ধারণা করেন, তাহলে চেষ্টা করবেন অভিজ্ঞ রাক্বীর শরণাপন্ন হয়ে সরাসরি করার। আর যদি সম্ভব না হয় বা আপাতত সরাসরি রুকইয়াহ করার সুযোগ নেই, তাহলে নিচের নিয়মে সেলফ রুকইয়াহ করুন।
প্রতিদিন যা যা তেলাওয়াত করতে হবেঃ
১। ফজরের পর সুরা ইয়াসিন, ইশার পর সূরা মূলক পড়বেন।
২। সুরা বাকারাহ তেলাওয়াত করা। পুরোটা না পারলে অন্তত ৮০-১০০ আয়াত তেলাওয়াত করা, এভাবে প্রতি তিনদিনে একবার পড়া।
৩। আয়াতুল কুরসি আধা ঘন্টা করে একবার বা দুইবার পড়বেন।
৪। আয়াতুল হারক বা হারকের আয়াত প্রতিদিন একবার বা দুইবার পাঠ করবেন।
৫। সুরা সফফাত, জিন, দুখান, যিলযাল, ইখলাস, ফালাক, নাস এক বসায় একবার করে পড়া।
৬। সুরা আল ইমরান, তাওবাহ, কাহাফ, মারইয়াম, হা-মীম সাজদাহ (সুরা ফুসসিলাত), সুরা আর-রাহমান, সুরা তাকভীর, সুরা ইনফিতার, সুরা বুরুজ, সুরা ত্বরিক, সুরা আ’লা এবং কুরআনের শেষ ১৫ টি সুরা। সব একবার করে। (যে কয়টা পড়তে পারেন পড়বেন। সবগুলা পড়তে পারলে বেশি ভাল ইংশা আল্লাহ।)
৭। এছাড়া যাদেরকে জিন শারিরিকভাবে লাঞ্চিত করে, প্রাইভেসি নষ্ট করে রুকইয়াহ যিনার আয়াত, সুরা ইউসুফ, সুরা নূর পড়বেন।
অডিও শ্রবণ:
যদি তিলাওয়াত করতে না পারেন, বা তিলাওয়াত সহিহ না হয় কিংবা নারীরা হায়েজ-নেফাস অবস্থায় থাকেন তাহলে নিম্নের অডিও গুলো শুনতে পারেন।
১। আট সুরার রুকইয়ার অডিও ( সুরা ফাতিহা, সুরা ইয়াসিন, সুরা সফফাত, সুরা জিন, সুরা দুখান, সুরা যিলযাল, সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস)
২। সূরা বাকারার অডিও, আয়াতুল কুরসি, তিনকুলের অডিও, রুকইয়াহ যিনার অডিও।
৩। আয়াতুল হারক এর অডিও
৪। কুরআনুল কারীমের শেষ ১৫ সূরার অডিও।
( অনেকেই চিন্তা করছেন এতকিছু কিভাবে পড়বেন বা শুনবেন, চিন্তা করার কিছু নেই। প্রতিদিন অন্তত ২-৩ ঘন্টা বা ৩-৪ ঘন্টা রুকইয়াহ করবেন। তাও যদি সম্ভব না হয় তাহলে যতটুকু পারেন ততটুকুই রুকইয়াহ করবেন। সূরা ও আয়াত ধারাবাহিকভাবে তিলাওয়াত করবেন বা অডিও গুলো ধারাবাহিকভাবে একেরপর এক শুনবেন। মনে রাখবেন, আপনি যেমন ইফোর্ট দিবেন, রেজাল্টও তেমন পাবেন। যতবেশি সময় দিবেন তত বেশি উপকার হবে। এবার আপনি চিন্তা করুন কতটুকু সময় রুকইয়াহ করবেন। আপনি যদি আরও বেশি সময় দিতে পারেন তবে আরও বেশি উপকৃত হবেন। বেশি সময় দিলে অসুবিধা নেই। যত বেশি রুকইয়াহ করবেন তত বেশি ফায়দা হবে)
রুকইয়াহ সাপ্লিমেন্ট:
হাতের কাছে কালোজিরা, মধু, পানি, অলিভ অয়েল নিয়ে বসুন। তারপর বদনজর, জাদু ও জ্বীন আছরের কিছু আয়াত বা রুকইয়াহ’র সাধারণ আয়াত গুলো কয়েকবার করে পড়ে এইগুলোতে ফুঁ দিন। এভাবে সবকিছু তৈরি করা হয়ে গেলে নিচের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবহার করবেন।
সকালে খালি পেটে ও রাতে এক গ্লাস পানি, এক চিমটি কালোজিরা, এক চা-চামচ মধু প্রতিদিন খাবেন।
এছাড়াও দিনে ও রাতে যেকোনো সময় খেতে পারেন। পড়া পানি বেশি বেশি পান করবেন। নরমাল পানি পান না করে যখনই পানি পানের প্রয়োজন হয় পড়া পানি পান করবেন।
শরীরে যেসব জায়গায় ব্যথা হয়, গোশত লাফালাফি করে, জ্বালাপোড়া করে এসব জায়গায় পড়া তেল মালিশ করবেন। আর রাতে ঘুমের আগে সারা গায়ে মালিশ করে ঘুমাবেন।
বিঃদ্রঃ এই গুলো শেষ হয়ে গেলে নতুন করে পড়ে নিবেন না, এইগুলোর সাথে কিছু মিশাবেন না।
রুকইয়াহ গোসল:
সম্ভব হলে প্রতিদিন রুকইয়াহ গোসল করবেন। গোসলের জন্য উপরের পড়া পানি থেকে এক গ্লাস পানি গোসলের পানিতে মিশিয়ে গোসল করবেন।
আর মাঝেমধ্যে একাধারে ৩/৫/৭ দিন বরই পাতার গোসল করবেন। প্রতিমাসে অন্তত দুইবার এভাবে বরই পাতার গোসল করবেন। এক্ষেত্রে আরবি মাসের মাঝে এবং শেষের দিনগুলোতে বরই পাতার গোসল দিতে পারেন।
প্রাত্যহিক পালনীয় আমল:
১। ফরয ইবাদাতে মনযোগী হওয়া। অবহেলা না করা। গান-বাজনা, নাটক-সিনেমা, প্রেম-ভালবাসাসহ যাবতীয় কবীরা গুনাহ থেকে তওবা করা, বিরত থাকা।
২। সকাল, সন্ধ্যা ও ঘুমের আগের মাসনুন আমল প্রতিদিন করবেন। মেয়েরা হায়েজ, নেফাস থাকলেও করবেন।
৩। সাধ্যানুযায়ী ইস্তেগফার করা। মাঝে মাঝে সাদকাহ করা। তাহাজ্জুদ, সালাতুল হাজত পড়ে আল্লাহর কাছে দুআ করা।
সেলফ রুকইয়াহ করলে জিন হাজির হবে না ইংশা আল্লাহ। সেলফ রুকইয়াহ করলে সাধারণত জ্বীন হাজির হয়না। ৯৫-৯৮% রোগীর ক্ষেত্রেই সেলফ রুকইয়াহ’তে জ্বীন এক্টিভ হয়না। সুতরাং ভয়ের কিছু নেই। আর আপনি নিয়তও এমন করবেন না যে, জ্বীন থাকলে যেন হাজির হয়। বরং জিন পরাস্থ হয়ে যেন চলে যায়, আপনি যেন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যান এই নিয়ত করবেন।
আল্লাহ আপনাকে এমন সুস্থতা দিন যেন আর কোনো অসুস্থতা বাকি না থাকে। আমীন।
জ্বীনের আক্রমণ থেকে বাঁচার উপায়:
কেউ যদি জ্বীন জাদু ও বদনজর হাসাদ আক্রান্ত না থাকেন তাহলে ভবিষ্যতে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা পেতে এবং প্রতিরোধের জন্য নিম্নোক্ত আমল নিয়মিত করবেন। কেউ আক্রান্ত হয়ে গেলেও বা রুকইয়াহ করে সুস্থ হয়ে গেলেও এইগুলো পালন করবেন।
১. সকাল-সন্ধ্যা ও ঘুমের সময়ের মাসনুন আমল গুলো প্রতিদিন গুরুত্বসহকারে পালন করা।
২. সালাত ও অন্যান্য ইবাদাতের প্রতি গুরুত্ব দেয়া। পুরুষ হলে জামাতের সঙ্গে সালাত আদায় করা।
৩. সব কাজে বিসমিল্লাহ বলা, যেমন খাবার সময় এবং ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করার সময় ইত্যাদি।
৪. উঁচু থেকে লাফ দেয়ার সময় বিসমিল্লাহ বলা।
৫. কিছু ফেলার সময়, অন্ধকারে কিছু করার সময়ও বিসমিল্লাহ বলা।
৬. কোনো গর্তে প্রসাব না করা। হাদিসে এব্যাপারে পরিষ্কার নিষেধাজ্ঞা আছে।
৭. কুকুর-বিড়াল না মারা, সাপ বা সন্দেহজনক কোনো প্রাণী মারতে চাইলে আগে উঁচু আওয়াজে ৩ বার বলা “জ্বিন হলে চলে যাও..”
৮. ঘরে প্রবেশের এবং বের হওয়ার দোয়া পড়া, দোয়া না জানলে অন্তত বিসমিল্লাহ বলা।
৯. সন্ধ্যার সময় ঘরের জানালা বিসমিল্লাহ বলে বন্ধ করে দেয়া। প্রয়োজনে কিছুক্ষণ পর জানালা খুলতে পারেন।
১০. সন্ধ্যার সময় বাচ্চাদের বাহিরে বের হতে না দেয়া। তবে সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর বাচ্চাদের বের হতে পারবে।
১১. ঘুমানোর পূর্বে বিসমিল্লাহ বলে তিনবার বিছানা ঝাড়ু দেয়া।
১২. স্ত্রী সহবাসের পুর্বে অবশ্যই দু’আ পড়া। বিয়ের প্রথম রাতের দোয়াটি পড়া।
১৩. টয়লেটে প্রবেশ এবং টয়লেট থেকে বের হওয়ার সময় দু’আ পড়া।
১৪. একা না ঘুমানো, ঘুমাতে হলে অযু করে নেয়া।
১৫. গর্তে, জমিন বা বেসিনে গরম পানি না ফেলা। ফেলতে হলে শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা।
১৬. রাতে মরুভূমি বা নির্জন জায়গায় একা চলাফেরা না করা।
উপরে উল্লেখিত পরামর্শ বিভিন্ন হাদিস থেকে নেয়া, লেখা দীর্ঘ হয়ে যাবে এজন্য সবগুলো হাদিস উল্লেখ করা সম্ভব হয়নি।