বাচ্চাদের জন্য বনজরের রুকইয়াহ

বাচ্চাদের ইমিউন সিস্টেম তথা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকায় তারা অল্পতেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। আবার বাচ্চাদের ওপর বদনজরও লাগে অনেক বেশি। তাদের ওপর খুব দ্রুত নজর লেগে যায়। বড়দের তুলনায় বাচ্চারা সাধারণত বদনজরে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। বাচ্চাদের বদনজর লাগলে বা বদনজার কিংবা প্যারানরমাল সমস্যার কারণে বিভিন্ন সমস্যা ও রোগব্যাধি হলে কিভাবে রুকইয়াহ করবেন এর নিয়মপদ্ধতি উল্লেখ করছি ইনশাআল্লাহ।

বাচ্চাদের নজর লক্ষ্মণসমূহ:
১৷ বুকের দুধ বা খাবার খেতে না চাওয়া৷
২। অস্বাভাবিক কান্নাকাটি করা।
৩। ঘুমের মধ্যে হঠাৎ ভয় পেয়ে চমকে ওঠা। তারপর কান্না করতে থাকা।
৪। অস্বাভাবিক দুষ্টামি করা।
৫। কথা বলতে লেট করা।
৬৷ যথেষ্ট বয়স হওয়া সত্বেও ছেলে/মেয়েদের বিছানায় প্রস্রাব করা।
৭। অটিজমে আক্রান্ত বা অটিস্টিক হয়ে যাওয়া
৮। হাইপার এক্টিভিটি বা ওভার থিংকিং।

বদনজরের রুকইয়া’র নিয়ম:

বাচ্চাদের অতিরিক্ত কান্নাকাটি, রাগ-জেদ, খেতে না চাওয়া, এলার্জি বা চর্মরোগ, দুষ্টামি, ভয় পাওয়া, ঠিকভাবে কথা বলতে না পারা, খিঁচুনি, অটিজম ইত্যাদি; যেকোনো সমস্যা বদনজর হাসাদ এর কারণে হতে পারে। জাদু বা বংশগত জাদু কিংবা জ্বীনের কারণেও হতে পারে। মা-বাবার নজরের কারণেও সমস্যা হতে পারে। যেকোনো সমস্যাই হোক না কেন নিচের পদ্ধতিতে রুকইয়াহ করুন। ইনশাআল্লাহ ভালো হয়ে যাবে।

১ম পদ্ধতি: যদি জানা যায় কার নজর লেগেছে তাহলে নিচের নিয়মটি ফলো করুন —

১. যার নজর লেগেছে তাকে অযু করতে বলবেন।
২. অযুর পানিগুলো একটি পাত্রে জমা করবেন।

  1. সেই পানি মাথার পিছন দিক থেকে বাচ্চার গায়ে ঢেলে দিবেন।

ফলাফল: ইনশাআল্লাহ, নজর কেটে যাবে।

  1. প্রয়োজনে ২-৩ দিন পর্যন্ত এটি চালিয়ে যেতে পারেন।

বিশেষ নোট:
সন্দেহ হতে পারে মা-বাবার নজর আবার কিভাবে লাগে? উত্তর হচ্ছে, জী হ্যাঁ নিজের নজরও নিজের ওপর লাগতে পারে। কেউ নিজের কোনো বিষয়ে হিংসা করে না, কিন্তু ভালো কিছুতে মুগ্ধ হয় ঠিকই। আর এই ভালোলাগা, মুগ্ধতা ও প্রশংসা থেকেও বদনজর লেগে যায়। তাই বাচ্চাদের ওপর মা-বাবার নজরও লাগতে পারে। ফলে আপনার সন্তান যদি অসুস্থ হয় তাহলে আপনারা মা-বাবার অযুর পানি দিয়েও গোসল করাবেন।

📌 লক্ষণীয়:

এই পদ্ধতির পরে অনেকের পায়খানা বা প্রসাবের বেগ হতে পারে। এটি হলে দ্রুত সুস্থতা আশা করা যায়।

প্রশ্ন ও উত্তর:

প্রশ্ন-১: কুলির পানি জমা করতে হবে কি?

উত্তর: না, অধিকাংশ ক্ষেত্রে কুলির পানি না নিলেও চলে।

প্রশ্ন-২: নিজের নজর নিজের বাচ্চার ওপর পড়লে কী করবেন?

উত্তর: আপনি নিজে অযু করবেন। অযুর পানি জমিয়ে তা বাচ্চার গায়ে ঢেলে দিবেন।

২য় পদ্ধতি: যদি জানা না যায় কার নজর লেগেছে তাহলে নিচের নিয়মে রুকইয়াহ করবেন।

১. বাচ্চার মাথায় হাত রেখে নিচের আয়াত ও দোয়াগুলো পড়বেন এবং মাঝে মাঝে বাচ্চার গায়ে ফুঁ দিবেন:

কুরআনের আয়াত:
১. সূরা ফাতিহা, সম্পূর্ণ।
২. সূরা বাকারাহ ১-৫ নং আয়াত।
৩. সূরা বাকারাহ ৬৯ নং আয়াত।
৪. সূরা বাকারাহ ১০৯ নং আয়াত।
৫. আয়াতুল কুরসি
৬. সূরা বাকারাহ শেষ দুই আয়াত।
৭. সূরা নিসা ৩২ নং আয়াত।
৮. সূরা নিসা ৫৪ নং আয়াত।
৯. সূরা কাহাফ ৩৯ নং আয়াত।
১০. সূরা মুলক ১-৪ নং আয়াত।
১১. সূরা ক্বলম ১-৫ নং আয়াত
১২. সূরা ক্বলম ৫১-৫২ নং আয়াত।
১৩. সূরা দাহর ৬ নং আয়াত।
১৪. সূরা মু’মিনুন শেষ চার আয়াত।
১৫. সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস।

হাদীসে বর্ণিত দুআ:

১ম দোয়া:

أُعِيْذُكَ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّةِ ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ

উচ্চারণ:
উঈযুকা বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মাহ, মিং কুল্লি শাইত্বা-নিও ওয়া হা-ম্মাহ, ওয়া মিং কুল্লি ‘আঈনিল লা-ম্মাহ।

২য় দোয়া:

بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللَّهُ يَشْفِيكَ، بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ

উচ্চারণ:
বিসমিল্লা-হি আরক্কীক, মিং কুল্লি শাইয়িঈ ইউ’যীক, মিং শাররি কুল্লি নাফসিন আও ‘আইনি হা-সিদ, আল্লা-হু ইয়াশফীক, বিসমিল্লা-হি আরক্কীক।

৩য় দোয়া:

بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ، وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ، وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ، وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ

উচ্চারণ:
বিসমিল্লা-হি ইউবরীক, ওয়া মিং কুল্লি দা-ঈই ইয়াশফীক, ওয়া মিং শাররি হা-সিদিন ইযা-হাসাদ, ওয়া শাররি কুল্লি যী ‘আঈন।

৪র্থ দোয়া:

اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبْ الْبَاسَ، اشْفِ وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا

উচ্চারণ:
আল্লা-হুম্মা রাব্বান না-স, আযহিবিল বা’স, ইশফি ওয়া আংতাশ শা-ফী, লা-শিফা-আ ইল্লা-শিফা-উক, শিফা-আল লা-ইউগা-দিরু সাক্বামা।

২. পানি ও তেলের মাধ্যমে রুকইয়াহ:

দোয়া ও সূরাগুলো ৩ বার বা ৭ বার পড়ে পানিতে ফুঁক দিবেন। সেই পানি বাচ্চাকে খাওয়াবেন এবং গোসল করাবেন।

বাচ্চা খুব ছোট হওয়ার কারণে পানি পান করানো সম্ভব না হলে এটা স্কিপ করবেন।

প্রয়োজনে তেলে ফুঁ দিয়ে আক্রান্ত ও ব্যথার স্থানে প্রতিদিন আলতুভাবে মালিশ করবেন।

৩. বাচ্চা বুকের দুধ খেতে না চাইলে বাচ্চাকে রুকইয়াহ করার পাশাপাশি মা’য়ের বুক ধুয়ে দিবেন দৈনিক ৩-৪ বার। বদনজরের রুকইয়াহ করতে পারলে ভালো হবে। আর প্যারানরমাল সমস্যা থাকলে সে অনুযায়ী রুকইয়াহ করতে হবে।

বিশেষ নির্দেশনা:

প্রতিদিন এই পদ্ধতিগুলো চালিয়ে যান যতদিন না ভালো হয়।

সুরা ফালাক ও সুরা নাস বারবার পড়া অত্যন্ত উপকারী।

১০-২০ দিন এভাবে রুকইয়াহ করলেই ইনশাআল্লাহ সুস্থ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু যদি এরপরও সমস্যা থাকে তাহলে অবশ্যই অভিজ্ঞ রাকির নিকট সরাসরি রুকইয়াহ করবেন।

আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখুন। ইনশাআল্লাহ, সুস্থতা লাভ করবেন।

শেয়ার করুন -

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top