পাগল করার জাদুর রুকইয়াহ

অন্যান্য যাদুর মত পাগল করার যাদুতেও সাধারণত আস্তে আস্তে এর প্রভাব পড়ে, একদিনেই মাথা নষ্ট হয় না, পাগল হয়ে যায় না। ধীরে ধীরে এর প্রভাব প্রকাশ পেতে থাকে, সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা করতে না পারলে সমস্যা জটিল হয়ে এক পর্যায়ে পাগল হয়ে যায়। পাগল করার জাদু মানে হচ্ছে যাদু করে কাউকে পাগল বানিয়ে দেওয়া বা কাউকে পাগল করার উদ্দেশ্যে যাদু করা। এই যাদুতে সাধারণত জ্বীনের সাহায্য নেওয়া হয়। এজন্য প্রথমে সরাসরি রুকইয়াহ করাই উত্তম, পরে সাজেশন অনুযায়ী তিলাওয়াত করা যেতে পারে বা অডিও শোনা যেতে পারে।

এক সাহাবী এক পাগল রোগীকে রুকইয়াহ’র ঘটনা

খারেজা বিনতে সালত তার চাচা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। অতঃপর তিনি তাঁর নিকট থেকে ফিরে আসছিলেন। পথিমধ্যে তিনি এমন এক গোত্রের নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলেন যাদের মধ্যে এক পাগল ব্যক্তি শিকলে আবদ্ধ ছিল। তখন এই পাগল লোকটির পরিবারের লোকেরা বলল আমরা জানতে পেরেছি যে তোমাদের সাথি (মুহাম্মাদ স.) নাকি আল্লাহর পক্ষ থেকে কল্যাণসহ আবির্ভূত হয়েছেন। সুতরাং আপনাদের নিকট এমন কিছু কি আছে যা দ্বারা এ পাগলকে চিকিৎসা করতে পারেন?

অতঃপর আমি সূরা ফাতিহা পড়ে তাকে ঝাড়ফুঁক করলে সে সুস্থ হয়ে গেল। তারা আমাকে এর বিনিময়ে ১০০টি ছাগল দিল। আমি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে পূর্ণ ঘটনা বর্ণনা করলাম। তিনি বললেন তুমি কি এ ছাড়া অন্য কিছুও পড়েছিলে? আমি বললামঃ না। অতঃপর তিনি বললেনঃ আল্লাহর শপথ! কত মানুষ ভ্রান্ত ঝাড়ফুকের দ্বারা কামাই করে খায়; আর তুমি তো সঠিক ঝাড়ফুকে অর্জন করেছ।”

অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে যে, সেই সাহাবী সূরা ফাতেহা পড়ে তিন দিন সকাল সন্ধ্যা ঝাড়ফুক করেন। যখনই সূরা ফাতেহা পড়া শেষ করতেন তখন তিনি থুতু মিশ্রিত ফুঁ দিতেন । (আবু দাউদঃ ত্বিব ১৯, ইমাম নববী সহীহ বলেছেন এবং শায়খ আলবানীও।)

পাগল করা যাদুর লক্ষনসমূহ

১। মানসিক অস্থিরতা, দিশাহারা
২। নিজেকে অন্যদের থেকে দূরে রাখার এবং বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করা।
৩। কথা-বার্তা ও কাজকর্মে ভুলভ্রান্তি ও সামঞ্জস্যহীনতা।
৪। প্রচুর পরিমাণে ভুলে যাওয়া।
৫। চেহারা ও চোখের অবস্থা অস্বাভাবিক অসুন্দর হয়ে যাওয়া।
৬। চেহারার অসুন্দর অবস্থার গুরুত্বহীনতা
কোন এক স্থানে স্থীর থাকতে না পারা।
৭। ধীরস্থিরভাবে কোনো কাজ করতে না পারা।
৮। নিজের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় উদাসীনতা।
৯। ঠিকমতো ঘুমাতে না পারা
১০। কোনো কারণ ছাড়াই অজানা পথে চলতে থাকা, কখনও নির্জন স্থানে শুয়ে যাওয়া।
১১। অবস্থা বেশি খারাপ হলে একদম পাগলের মত আচরণ করবে

পাগল করা যাদু কিভাবে করা হয়?

যেই জ্বিনের উপর এই যাদুর কাজ অপিত হয় (যাদুকরের নির্দেশ অনুযায়ী) সেই জ্বিন রোগীর মস্তিষ্কে অবস্থান করে তার স্মরণশক্তি ও চালিকা শক্তির উপর এমনভাবে চাপ সৃষ্টি করে ও কন্ট্রোল করে যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। যার ফলে পাগলের অবস্থায় পতিত হয়।

পাগলামি যাদুর রুকইয়াহ

প্রাথমিক কিছু কথা
এই যাদুতে যেহেতু জ্বীনের সাহায্য নেয়া হয় বা বডিতে যাদুর খাদেম জ্বীন থাকতে পারে আর অনেকের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায় তাই এজন্য প্রথমে সরাসরি রুকইয়াহ করাই উচিত। অথবা পরিবারের কেউ রুকইয়াহ’র আয়াত গুলো পড়ে রুকইয়াহ করে দিতে পারেন এবং অন্যান্য নিয়মগুলো করে দিবেন বা করাবেন।

আর সেলফ রুকইয়াহ’র ক্ষেত্রে বা সেলফ রুকইয়াহ করতে চাইলে যদি রোগীর মানসিক অবস্থা মোটামুটি ঠিক থাকে, হিতাহিত জ্ঞান থাকে তাহলে নিজেই নিচের নিয়মে রুকইয়াহ করবেন। তবে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য কেউ থাকলে ভালো হবে। কিন্তু যদি মানসিক অবস্থা ঠিক না থাকে, বা পুরোপুরি পাগল হয়ে যায় তাহলে পরিবারের লোকজন নিচের নিয়মে তাকে রুকইয়াহ করাবেন।

পাগল করা যাদুর সেলফ রুকইয়াহ-

প্রথমে পাক পবিত্র হয়ে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে আপনার সমস্যার কথা বলে সুস্থতার জন্য প্রাণভরে দু’আ করুন, তারপর দরুদ ইস্তিগফার পড়ে ট্রিটমেন্ট শুরু করুন।

১. সিহরের আয়াত গুলো প্রতিদিন দুইবার তিলাওয়াত করবেন।
২. কোরআনে যেসকল আয়াতে জুনুন শব্দ উল্লেখ আছে বা পাগলামি সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে সেসব আয়াত প্রতিদিন দুইবার বা ৪০/৪৫ মিনিট করে তিলাওয়াত করবেন।
৩. সূরা বাকারা, হুদ, হিজর, সাফফাত, ক্বাফ, আর-রহমান, মূলক, জ্বিন, আ’লা, যিলযাল, হুমাযা, কাফিরুন, ফালাক, ও সূরা নাস এগুলো প্রতিদিন এক দুই বার তিলাওয়াত করবেন।
৪. তিলাওয়াত করা সম্ভব না হলে এগুলোর অডিও শুনবেন।
৫. সবমিলিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩ ঘণ্টার মতো রুকইয়াহ তিলাওয়াত করবেন বা অডিও শুনবেন। যদি আরো বেশি শুনতে পারেন, আরো ভালো!

৬. চার পাঁচ লিটার পানি, কালোজিরা, অলিভ অয়েল, খাঁটি মধু নিয়ে সিহরের কমন আয়াত ও আয়াতুল জুনুন কয়েকবার (৩/৭ বার) করে পড়ে এইগুলোতে তিনটি ফুঁ দিবেন। তারপর নিচের নিয়মে এইগুলো ব্যবহার করবেন।

১. গোসলের সময় এই পানি থেকে এক বা হাফ গ্লাস পানি নিয়ে গোসলের পানিতে মিশিয়ে গোসল করবেন।

২. আর প্রতিদিন তিন-চার বার বা যখনই পানি পানের প্রয়োজন হয় উক্ত পড়া পানি থেকে পান করবেন।

৩. প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ও দিনে রাতে মিলিয়ে কয়েকবার অল্প অল্প করে কালোজিরা চিবিয়ে খাবেন।

৪. আর দৈনিক কয়েকবার ব্যথার জায়গায় অলিভ অয়েল মালিশ করবেন।

৮. মাঝেমধ্যে একাধারে ৩/৭/১৪ দিন বরই পাতার গোসল করবেন। ( বরই পাতা গোসলের নিয়ম পরে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ)

৯. পাশাপাশি পাগলামি যাদুর চিকিৎসায় হিজামা খুবই কার্যকরী। এরজন্য অবশ্যই হিজামা করবেন।

লক্ষণীয়ঃ
১। রুকইয়াহ চলাকালীন সময়ে অর্থাৎ যে কয়দিন রুকইয়াহ চলবে এর মাঝে ব্যাথানাশক কোনো ঔষধ খাওয়া যাবেনা। কেননা এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খারাপ হতে পারে। চাইলে হিজামা করাতে পারেন, ইনশাআল্লাহ উপকার হবে।

২। যদি ইতোমধ্যেই ব্রেইনের স্থায়ী ক্ষতি হয়ে যায়, তবে অবশ্যই রুকইয়ার সাথে ডাক্তারের চিকিৎসা করাতে হবে। তবে আপনার রাকির সাথে পরামর্শ করে নিবেন।

৩। রুকইয়াহ শুনতে কষ্ট হতে পারে, অসহ্য ও পাগল পাগল লাগতে, রাগ লাগতে পারে তবুও রুকইয়াহ অফ করা বা ছেড়ে দেয়া যাবেনা বরং গুরুত্ব দিয়ে রুকইয়াহ শুনতে হবে। রোগী রুকইয়াহ করতে না চাইলেও অবশ্যই তাকে রুকইয়াহ শোনাতে হবে।

৪. প্রথমদিকে রোগী পাগলামি ও ভাংচুর ও চিৎকার চেঁচামেচি করতে পারে, এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বরং ধরে বেঁধে যেভাবেই হোক রুকইয়াহ শোনাবেন। আস্তে আস্তে সমস্যা কমে আসলে ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

৫. এমনও হতে পারে, রুকইয়াহ শুনতে শুনতে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে, জ্বিন ভর করে আবোলতাবোল বকতে পারে। এক্ষেত্রে রুকইয়াহ বন্ধ করা যাবেনা, শুনাতেই থাকতে হবে। না শুনতে চাইলে জোর করে বা কৌশলে শোনাতে হবে।

৬। আর সমস্যা ভালো হওয়ার পরেও অন্তত এক-দুই সপ্তাহ রুকইয়াহ শুনতে হবে/শোনাতে হবে। আর আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করতে হবে।

শেয়ার করুন -

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top