এই যাদুটি শুধু নারীদের ক্ষেত্রেই হয়। এই যাদুর কারণে জাদুগস্থ নারীর অনবরত বা আনকন্ট্রোলড ব্লিডিং এর সমস্যা হয়ে থাকে। শুনতে অবাক লাগলেও এ যাদুটি খুবই প্রসিদ্ধ ও বহুল প্রচলিত।
ইস্তেহাজা কী?
ইস্তেহাজা হলো নারীদের হায়েজের নির্ধারিত দিনগুলোর বাহিরে ঋতুস্রাব হওয়া। অর্থাৎ তিন দিনের কম বা দশ দিনের বেশি সময় ধরে ঋতুস্রাব হওয়া।
আরবীতে এপ্রকারের যাদুকে ইস্তেহাজা বা সিহরুন নাযীফ বলা হয়। এ যাদুর কারণে নারীদের হায়েজ বা মাসিকের নির্ধারিত দিন গুলোর পরেও অনবরত ব্লিডিং হতে থাকে। কখনও কখনও এটি তার স্বাভাবিক মাসিকের আগে হয়ে যায়। কখনোও এক মাসে দুই তিন বার হয়ে যায়। কখনোও তিন চার মাস পর্যন্ত বা আরো বেশি সময় অফ থাকে কিংবা স্বায়ী ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। মেডিক্যাল চিকিৎসা করেও তা আরোগ্য হয়না। দেখা যায় যতদিন ওষুধ খায় ততদিন ভালো থাকে, ওষুধ না খেলেই যেই সেই। আর বিবাহিত নারীদের ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায় সবসময় ভালো থাকলেও স্বামী স্ত্রী ঘনিষ্ট হলেই ঋতুস্রাব শুরু হয়ে যায়।
বাস্তবতা ও প্রমাণ:
হযরত হামনাহ বিনতে জাহশ রাঃ যখন নিজের ইস্তেহাজা ব্যাধি সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গিয়ে বিধান জানতে চাইলেন তখন তিনি বললেন –
“ إِنَّمَا هِيَ رَكْضَةٌ مِنَ الشَّيْطَانِ
এটা শাইতানের আঘাতের ফল বা স্পর্শবিশেষ।
আবু দাউদ ২৮৭, তিরমিযী ১২৮,
( অর্থ্যাৎ তা শয়তানের স্পর্শ বা আছরের কারণে হয়ে থাকে)
সুতরাং প্রতীয়মান হয় যে, কোনো নারীর জরায়ুর রগে শয়তানের পদাঘাত বা আছরের কারণেও মূলত ইস্তেহাজা হয়।
এই যাদুর বিভিন্ন উদ্দেশ্য-
এই জাদু সাধারণত বিভিন্ন জাদুর সহায়ক হিসেবে করা হয়ে থাকে; যেমন –
১) বিবাহ বিচ্ছেদের যাদু
২) বন্ধ্যাত্বের যাদু
৩) বিবাহ বন্ধের যাদু
৪) অসুস্থতার যাদু
৫) এছাড়াও আশিক জ্বীনের কারণেও এই সমস্যা হয়ে থাকে, যেন স্বামী তার থেকে দূরে থাকে এবং কাছে না আসে।
৬) আইন হাসাদের কারণেও হতে পারে (জ্বীনের বা মানুষের)
রুকইয়াহ চিকিৎসা
আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে আল্লাহ চাহে তু এই যাদুর চিকিৎসা খুবই সহজ এবং খুব সহজেই ভালো হয়ে যায়। রাকি’র কাছে যাওয়া ছাড়াও নিজে নিজে রুকইয়াহ করলেও সাধারণত তা ভালো হয়ে যায়। অবশ্য রোগীর শরীরে জ্বীন তখন বিষয়টি একটু জটিল হয়ে যায়।
প্রেশক্রিপশন
১) প্রথমে কিছু পানি নিন, তারপর সূরা হুদ এর ৪৪ নং আয়াতটি –
وَقِيلَ يَٰٓأَرْضُ ٱبْلَعِى مَآءَكِ وَيَٰسَمَآءُ أَقْلِعِى وَغِيضَ ٱلْمَآءُ وَقُضِىَ ٱلْأَمْرُ وَٱسْتَوَتْ عَلَى ٱلْجُودِىِّ ۖ وَقِيلَ بُعْدًا لِّلْقَوْمِ ٱلظَّٰلِمِينَ
সাতবার বা বেজোড় সংখ্যকবার যতবেশি সম্ভব হয় পাঠ করুন এবং পাঠ করা শেষে পানিতে ফুঁ দিন, এরপর এই পানি থেকে কিছু পান করুন। আর কিছু পানি দিয়ে পেট ও গর্ভাশয় বরাবর পেটে ছিটিয়ে দিন এবং কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করুন। এভাবে প্রতিদিন ৩ বার করুন।
২. প্রতিদিন আধা ঘন্টা বা এক ঘন্টা করে সকাল বিকাল দুইবার তিলাওয়াত করবেন। ( তিলাওয়াতের সময় তলপেটে হাত রাখা ভালো হবে)
৩. গোসলের সময় পান করার জন্য তৈরি করা পানি থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে গোসলের পানিতে মিশিয়ে দিবেন।
৪. যখন-ই আয়াত তিলাওয়াত করবেন তখনই শেষে পানিতে ফুঁ দিবেন।
৫. প্রতিদিনের সকাল সন্ধ্যার নিরাপত্তা বা হেফাজতের মাসনুন আমল নিয়মিত গুরুত্বসহকারে আদায় করবেন।
৬. যদি কয়েক সপ্তাহ এমন করার পরেও ভালো না হয়, তবে সুরা আন’আম ৬৭ নং আয়াতের প্রথমাংশ
لِّـكُلِّ نَبَاٍ مُّسْتَقَرٌّ
৭০ বার পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে কয়েকদিন খেতে হবে।
অনেক আলেম এক্ষেত্রে সাজেস্ট করেছেন- আয়াতটি পবিত্র কালি দিয়ে লিখে সেটা পানিতে গুলিয়ে নিতে, পরে ওই পানি কয়েকদিন খেতে।
৭. হিজামা এই সমস্যার জন্য খুবই উপকারী। তাই ১৫ দিন পরপর তিন সেশন নিতে পারেন।
আমার এমন অনেক পেশেন্ট আছেন যারা রুকইয়াহ ও হিজামা করে এখন এই সমস্যা থেকে পুরোপুরি সুস্থ আছেন আলহামদুলিল্লাহ।