পিরিয়ড অবস্থায় রুকইয়াহ করা যাবে কি না ?

পিরিয়ড অবস্থায় রুকইয়াহ করা যাবে কি না, নিরাপত্তার আমল করা যাবে কি না; বোনদের অনেকেই এই প্রশ্ন করে থাকেন। আমাদের কাছে বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নগুলোর এটি একটি।

পিরিয়ড চলাকালীন রুকইয়াহ’র অডিও শোনা যাবে। সরাসরি বা মোবাইল কিংবা কোনো ডিভাইসে কোরআন তিলাওয়াত শোনা যাবে। নেফাস ( সন্তান প্রসবের পরবর্তী রক্তস্রাবের সময় ) অবস্থায় ও নারীদের একই হুকুম।

হযরত আয়িশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন আমি হায়েজ অবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার আমার কোলে হেলান দিয়ে কুরআন পাঠ করতেন। বুখারী-২৯৭, মুসলিম-৫৮০

সুতরাং হায়েজ তথা পিরিয়ড অবস্থায় সরাসরি রুকইয়াহও করতে পারেন। তবে রুকইয়াহ’র সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকবেন। যত বেশি পবিত্র থাকবেন, রুকইয়ার তত বেশি ইফেক্ট হবে। তাই সম্ভব হলে রুকইয়াহ করার আগে একবার ওযু করে নিন।

পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে হেফাজতের বা নিরাপত্তার মামনুন আমল ও দুআ করতে করবেন। যিকির, দরুদ ও তাসবিহ-ও পড়া যাবে। নিরাপত্তা হিসেবে বর্ণিত ও অনুমতি আছে এমন কোরআনের আয়াত গুলোও পড়তে পারবেন। এমনকি কোরআনের দুআ সংক্রান্ত আয়াত গুলোও দুআ হিসেবে পড়া যাবে।

এসময় রুকইয়াহ’র পানি পান, তেল মালিশ ও গোসল ইত্যাদি যথানিয়মে ব্যবহার করতে পারবেন। এজন্য এইগুলো আগেই তৈরি করে নিবেন। যদি তৈরি করা না থাকে বা নিজে পড়তে না পারেন তাহলে অন্য কাউকে দিয়ে তৈরি করে নিবেন। কিংবা অন্য কেউ আয়াত ও দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়ে তৈরি করে দিলে আপনি ব্যবহার করতে পারবেন।

পানি, তেল, মধু ইত্যাদি প্রস্তুত করা না থাকলে, আর তৈরি করে দেয়ার মতো কেউ না থাকলে আপনি নিজেই রুকইয়াহ’র দুআগুলো পড়ে তৈরি করে নিতে পারবেন। এরপর সেগুলো নিয়ম অনুযায়ী ব্যবহার করবেন।

দুআগুলো প্রত্যেকটি আপনার যতবার ইচ্ছা ততবার পড়তে পারবেন। বেজোড় সংখ্যকবার পড়বেন। যতবেশি পড়বেন তত ভাল হবে ইন শা আল্লাহ।

রুকইয়াহ হিসেবে তিলাওয়াতের জন্য হাদীসে বর্ণিত দুআসমূহ এবং যেকোনো পড়তে পারবেন। ইচ্ছা হলে রুকইয়াহ হিসেবে রুকইয়ার দু’আ গুলো পাঠ করতেও পারবেন। একেকটা বারবার পড়ে ৩০-৪০ মিনিট তেলাওয়াত করবেন। অনেক ফায়দা হবে ইনশাআল্লাহ।

জ্বীন-জাদুর সমস্যা গুরুত্বর হলে, জ্বীন সবসময় কষ্ট দিলে রুকইয়াহ বা চিকিৎসা হিসেবে কোরআনের যেকোনো সূরা এবং আয়াত পাঠ করতে পারবেন। বরং ক্ষেত্রে বিশেষে সুস্থতার জন্য তিলাওয়াত করা আবশ্যক হয়ে যায়।

হায়েয ও নেফাস চলাকালীন সাধারণ কোরআন তিলাওয়াত করা জায়েয নয়। শিক্ষা দেওয়া ও স্পর্শ করাও নিষেধ। কিন্তু একান্ত প্রয়োজনে কুরআনের সাথে সর্বাবস্থায় লাগানো না এমন ভিন্ন পবিত্র কাপড় দ্বারা স্পর্শ করা জায়েয হবে এবং কলম ইত্যাদি দ্বারা পৃষ্ঠা উল্টানোও জায়েয হবে৷ এজন্য কুরআনের গিলাফের উপর স্পর্শ করা জায়েয হবেনা।

আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ঋতুমতি মহিলা ও গোসল ফরয হয়েছে এমন ব্যক্তি যেন কুরআন মজীদ না পড়ে।-আলইলাল, ইবনে আবী হাতিম ১/৪৯

তাই যে সকল মহিলা কুরআন মাজীদ শেখা-শেখানোর সাথে সম্পৃক্ত তারা অপবিত্রতার সময় তা থেকে বিরত থাকবে। প্রয়োজনে অন্য মহিলা দ্বারা কাজ সমাধা করে নিবে। যদি তাও সম্ভব না হয় তাহলে তারা কেবল শিার্থীদের পড়া শুনতে পারবে এবং প্রয়োজনের সময় দু-এক শব্দ বলে দিতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে পূর্ণ আয়াত একত্রে তিলাওয়াত করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।

এসময় মেয়েদের সালাত এবং সাওম (রোজা) ও আল্লাহ তাআলা মাফ করেছেন। তবে সালাত একেবারে মাফ হলেও, সাওম পরবর্তীতে কাযা পালন করতে হয়।

ইস্তিহাযার সময় নামাজ-তেলাওয়াত সবই করা যায় বা করতে হয়। সুতরাং ইস্তিহাযা তথা হায়েজ ও নিফাসের নির্ধারিত সময়ের বাহিরে রক্তস্রাবের সময় রুকইয়াহ’র সবকিছুই করতে পারবেন।

বিঃদ্রঃ পিরিয়ড অবস্থায় “সাধারণ কুরআন তিলাওয়াত নিষেধ” হওয়ার কারণে অনেকেই মনে করেন রুকইয়াহও করা যাবে না। অনেকে মনে করেন মুখ দিয়ে “আল্লাহ” শব্দটাও বের করা যাবে না। অনেকে এই সময় হিফাজতের আমলে অবহেলা করেন, একেবারে গাফেল হয়ে যান। অলসতার কারনেই হোক বা অজ্ঞতার কারণেই হোক অনেকেই এই সময় আমলে দুর্বল হয়ে যান, করেন না বা করতে চান না।

এটা উচিত না। এতে শয়তান ক্ষতি করার সুযোগ পেয়ে বসে। বরং যিকির ও দুআ পড়া যায়। এ সময় নিজের সুরক্ষা ও শয়তান থেকে হেফাজতের জন্য দৈনন্দিন নিরাপত্তার মাসনূন আমল, দুআ, যিকির, রুকইয়াহ করতে পারবেন। আপনাদের উচিত হবে আল্লাহর যিকর, দুআ, দরূদ ও ইস্তেগফার করতে থাকা। বরং অন্য সময়ের তুলনায় এ সময় আরো গুরুত্ব দিয়ে আমল করতে হবে।

অনেকেই একধাপ এগিয়ে এই কথাও বলেন যে, পিরিয়ড বা নেফাসের সময়টাতে মেয়েরা প্রতি সালাতের ওয়াক্তে সালাতের সমপরিমাণ সময় জিকির দুআ করবে। অন্তত কিছু না কিছু হলেও [এটা বাধ্যতামূলক না, গুরুত্ব বোঝানোর জন্য লিখলাম ]

সারকথাঃ পিরিয়ড চলাকালীন কুরআন তিলাওয়াত করা জায়েয নয়। শিক্ষা দেওয়া ও স্পর্শ করা কোনোটিই জায়েয নয়। কিন্তু তিলাওয়াত শোনা নিষেধ নয়। এ সময় বিভিন্ন যিকির, দুআ, দরুদ, তাসবিহ ও ইস্তিগফার ইত্যাদি করা যায়।

পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে রুকইয়াহ অডিও শোনা যাবে, নিরাপত্তার আমল করা যাবে। পিরিয়ডের পূর্বে পানি, তেল মধু ইত্যাদি প্রস্তুত থাকলে সেগুলো ব্যবহার করতে পারবেন, গোসল করতে পারবেন। আর তৈরি করা না থাকলে অন্য কেউ তৈরি করে দিলে ব্যবহার করতে পারবেন।

যদি তৈরি করে দেয়ার মতো কেউ না থাকে তাহলে আপনি নিজেই রুকইয়াহ’র দুআগুলো পড়ে তৈরি করে ব্যবহার করতে পারবেন। রাকির কাছে গিয়ে সরাসরি রুকইয়াহও করতে পারবেন। কোরআনের আয়াত পাঠ করা যাবে না। তবে সমস্যা খুবই জটিল হলে ও জ্বীন খুব বেশি কষ্ট দিলে রুকইয়াহ হিসেবে যেকোনো সূরা ও আয়াত পাঠ করা যাবে। আল্লাহু আ’লাম ।

আল্লাহ তায়ালা নেক আমল করা সহজ করে দিন, তৌফিক দান করুন, কবুল করে নিন এবং সুস্থতা দান করুন। আমীন।

প্রমাণ্যগ্রন্থাবলীঃ নাসরুল বারী শরহে বুখারী ২/১৮৪; আদ দুর্রুল মুখতার ১/২৯৩; আলবাহরুর রায়েক ১/১৯৯; ফাতহুল কাদীর ১/১৪৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪৭৯; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৪০১; ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/১১৭; ফতোয়ায়ে কাসেমিয়া ১/১৩০; ফতোয়ায়ে রহিমীয়া ৪/২৮০; আহসানুল ফতোয়া ২/৬৭; মারাকিউল ফালাহ ৭৭।

শেয়ার করুন -

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top