উপযুক্ত বয়স হওয়ার পরও যে সব বাচ্চারা কথা বলতে পারছেনা, অথচ শ্রবণশক্তি ঠিক আছে। কিংবা দুয়েকটা শব্দ ছাড়া আর কিছুই বলতে পারছে না। বা শুরুতে একটু একটু বা ঠিকমতো কথা বললেও পরে হঠাৎ বা ধীরে ধীরে কথা বলা বন্ধ হয়ে গেছে। অথবা শুরুতে কথাবার্তা ঠিকঠাক থাকলেও এখন কথা বললেই তোতলায়।
বাচ্চাদের এই সমস্যা গুলো বদনজরের কারণে হতে পারে। বাচ্চাদের অনেক সমস্যাই বদনজরের কারণে হয়ে থাকে। শুধু বাচ্চাদের না, বড়দের ক্ষেত্রেও বদনজর, জ্বীন ও জাদুর কারণে এরকম সমস্যা হতে পারে।
সুতরাং স্পিচ ডিলে বা শিশুদের কথা বলতে দেরী হলে বা উপরোক্ত সমস্যাগুলোর জন্য নিম্নোক্ত নিয়মে রুকইয়াহ করুন—
নিচের আয়াত গুলো ৩/৭ বার করে পড়ে বাচ্চার গায়ে ফুঁ দিন। প্রতিদিন এভাবে দুই তিন বার রুকইয়াহ করবেন—
১. সূরা ফাতিহা
২. সূরা আল ইমরান-৪৬
৩. সূরা ত্বা-হা-২৫-২৮
৪. সূরা শুআরা-১৩
৫. সূরা কাসাস- ৩৪
৬. সূরা ফুছছিলাত- ২১
৭. সূরা দুখান- ৫৮
৮. সূরা মারইয়াম- ৯৭
৯. সূরা আর-রহমান ১-৪
১০. সূরা ক্বিয়ামাহ- ১৬
১১. সূরা আল আলাক্ব ১-৫
১২. সূরা ফালাক
১৩. সূরা নাস
পড়ার সুবিধার্থে আয়াত গুলো নিম্নে উল্লেখ করে দিচ্ছি ইনশাআল্লাহ।
২. সূরা আল ইমরান ৪৬
وَيُكَلِّمُ النَّاسَ فِي الْمَهْدِ وَكَهْلًا وَمِنَ الصَّالِحِينَ
৩. সূরা ত্বহা; ২৫-২৮
رَبِّ اشۡرَحۡ لِیۡ صَدۡرِیۡ – وَ یَسِّرۡ لِیۡۤ اَمۡرِیۡ – وَ احۡلُلۡ عُقۡدَۃً مِّنۡ لِّسَانِیۡ – یَفۡقَهُوۡا قَوۡلِیۡ
৪. সূরা শুআরা ১৩
وَيَضِيقُ صَدْرِي وَلَا يَنطَلِقُ لِسَانِي فَأَرْسِلْ إِلَىٰ هَارُونَ
৫. সূরা কাসাস ৩৪
وَأَخِي هَٰرُونُ هُوَ أَفۡصَحُ مِنِّي لِسَانٗا فَأَرۡسِلۡهُ مَعِيَ رِدۡءٗا يُصَدِّقُنِيٓۖ إِنِّيٓ أَخَافُ أَن يُكَذِّبُونِ ﴿٣٤﴾
৬. সূরা হা-মীম আস-সিজদাহ্ (ফুছছিলাত) ২১
وَقَالُوۡا لِجُلُوۡدِہِمۡ لِمَ شَہِدۡتُّمۡ عَلَیۡنَا ؕ قَالُوۡۤا اَنۡطَقَنَا اللّٰہُ الَّذِیۡۤ اَنۡطَقَ کُلَّ شَیۡءٍ وَّہُوَ خَلَقَکُمۡ اَوَّلَ مَرَّۃٍ وَّاِلَیۡہِ تُرۡجَعُوۡنَ
৭. সূরা দুখান ৫৮
فَإِنَّمَا يَسَّرۡنَٰهُ بِلِسَانِكَ لَعَلَّهُمۡ يَتَذَكَّرُونَ ﴿٥٨﴾
৮. সূরা মারইয়াম ৯৭
فَإِنَّمَا يَسَّرۡنَٰهُ بِلِسَانِكَ لِتُبَشِّرَ بِهِ ٱلۡمُتَّقِينَ وَتُنذِرَ بِهِۦ قَوۡمٗا لُّدّٗا ﴿٩٧﴾
৯. সূরা আর-রহমান ১-৪
اَلرَّحۡمٰنُ (1) عَلَّمَ الۡقُرۡاٰنَ (2) خَلَقَ الۡاِنۡسَانَ (3) عَلَّمَهُ الۡبَیَانَ (4)
১০. সূরা ক্বিয়ামাহ ১৬
لَا تُحَرِّكۡ بِهِۦ لِسَانَكَ لِتَعۡجَلَ بِهِۦٓ ﴿١٦﴾
১১. সূরা আলাক্ব ১-৫
إِقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ- خَلَقَ الْإِنسَانَ مِنْ عَلَقٍ- إِقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ- الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ- عَلَّمَ الْإِنسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ.
২) এইগুলো ৩/৭ বার করে পড়ে পানিতে ফুঁ দিন। তারপর এই পানি থেকে অল্প অল্প দৈনিক তিন-চার বার আরো বেশি পান করাবেন। সাধারণ পানির চেয়ে জমজমের পানি বা বৃষ্টির পানি হলে ভালো। জমজম বা বৃষ্টির পানি পর্যাপ্ত পাওয়া না গেলে নরমাল পানির সাথে অল্প পরিমাণ মিশিয়ে নিতে পারেন। অন্যথায় শুধু নরমাল পানিও যথেষ্ট।
প্রতিদিনের পানি প্রতিদিন তৈরি করতে পারেন বা বেশি পরিমাণে তৈরি করে রেখে দিতে পারেন। শেষ হয়ে গেলে আবার নতুন করে পড়ে তৈরি করে নিবেন। কিংবা শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই নতুন পানি মিশিয়ে নিতে পারেন। তবে বেশি পরিমাণে তৈরি করে রেখে দিলে বাচ্চাকে রুকইয়াহ করার পর প্রতিবার বা মাঝেমধ্যে এই পানিতেও ফুঁ দিবেন।
বড়দের মধ্যেও এই ধরনের সমস্যা থাকলে তারাও এভাবে রুকইয়াহ করতে পারেন। খুবই উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ।
আমার এরকম অনেক পেশেন্ট আছে যাদের বদনজর বা জ্বীন জাদু কারণে ঠিকমতো কথা বলতে পারতো না বা আটকে আসতো , রুকইয়াহ করার পর এখন আলহামদুলিল্লাহ পুরোপুরি সুস্থ আছেন। কিছুদিন আগেও একটা ২২/২৩ বছরের মেয়ে পেশেন্ট আসছিলেন এরকম। কথা বললেই আটকে আসতো, অথচ আগে এরকম ছিল না। পরিপূর্ণ সুস্থ হওয়ার আগেই রুকইয়াহ করে এই সমস্যা প্রায় ৯০-৯৫% ভালো হয়ে গেছে।
এভাবে লাগাতার অন্তত ৩০-৪০দিন রুকইয়াহ করুন। ইনশাআল্লাহ ঠিক হয়ে যাবে। আর শারীরিক সমস্যা হলে রুকইয়াহ’র পাশাপাশি অবশ্যই স্পিস থেরাপি দিবেন। বদনজর বা প্যারানরমাল সমস্যার কারণে হলেও যদি বাচ্চাদের রুকইয়াহ করে সমস্যা ঠিক হতে বিলম্ব হয় তখনও স্পিস থেরাপি দিতে পারেন।
আর অবশ্যই স্মার্টফোন, টিভি, কার্টুন কিংবা মুভিসহ বিভিন্ন মেধা বিকাশে প্রতিবন্ধক বিষয়াদি থেকে শিশু সন্তানকে দূরে রাখবেন। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী অন্যান্য ট্রেইনিং চালু রাখবেন।
এসবের পাশাপাশি কথা শিখাতে চেষ্টা করুন, আর প্রতিদিন দোয়া করতে থাকুন। সুস্থতার নিয়তে মাঝেমাঝে সাদকাহ করুন। আল্লাহ চায়তো যথেষ্ট উপকার পাবেন। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ রাক্বীর পরামর্শ নিন।