অসুস্থতার জাদু বলতে বোঝায় কোনো ব্যক্তিকে জাদু করে শারীরিক বা মানসিক ভাবে রোগাক্রান্ত বা অসুস্থ করে ফেলা। জাদুর বিভিন্ন প্রকারের মধ্যে এটিও একটি। এই জাদু একজন ব্যক্তিকে সুস্বাস্থ্য এবং সুস্থতা থেকে রোগ এবং অসুস্থতার দিকে নিয়ে যায় এবং শক্তি ও উদ্যমতা থেকে দুর্বলতা, অলসতা এবং শরীরের অঙ্গগুলি, উপলব্ধি ও চিন্তার কার্যকারিতায় দুর্বলতায় রূপান্তর করে। কাউকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যেও এই জাদু করা হয়। এই জাদু যে রোগের জন্য করা হয় সেই রোগই হতে পারে। এই জাদুর কারণে একেরপর এক বিভিন্ন রোগব্যাধি হতে পারে। মাথা ব্যথা, বিভিন্ন অঙ্গে ব্যথা, প্যারালাইসিস, অনিয়মিত পিরিয়ড, টিউমার ও ক্যান্সার সহ যেকোনো রোগ হতে পারে। আবার কখনো স্থায়ী কোনো রোগ হয়ে যায়, কখনো চিকিৎসা করলে সুস্থ হয়। কিছুদিন পর হয়তো একই রোগ বা অন্য রোগ দেখা দেয়।
এই যাদুর লক্ষণসমূহ
১ । শরীরের কোন অঙ্গে সর্বদায় ব্যাথা থাকা।
২। ঘন ঘন খিঁচুনি হওয়া বা শরীর ঝাঁকুনি দেওয়া।
৩। শরীরে ঝাকুনি বা খিচুনী এসে বেহুশ হয়ে যাওয়া।
৪। শরীরের কোন অঙ্গ অচল বা অবশ হয়ে যাওয়া।
৫। সমস্ত শরীর নির্জীব হয়ে যাওয়া।
৬। পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের কোন একটি সম্পূর্ণরূপে বা স্থায়ীভাবে কাজ না করা।
৭। পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের একটি বা একাধিক সাময়িকভাবে কাজ না করা।
৮। শরীরে সবসময় ক্লান্তি ও প্রচুর অলসতা অনুভব করা।
৯। প্রচুর দূর্বল লাগা, সবসময় শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করা, কোনো কাজ করতে ইচ্ছে না করা, অক্ষমবোধ করা।
১০। ব্যথা বা কোনো রোগ শরীরে দৌড়াদৌড়ি করা, এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরীত হওয়া।
১১। তীব্র শ্বাসকষ্ট হওয়া, বুক ভারি লাগা।
১২। শরীরে একেরপর এক রোগব্যাধি লেগেই থাকা।
এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট করতে হয় যে, এই লক্ষণসমূহ সাধারণ রোগের ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে, তবে এর পার্থক্য নির্ণয়ের জন্যে রোগীর উপর কুরআন পড়ে রুকইয়াহ করা হলে রোগীর যদি কোনরূপ ইফেক্ট বা রিয়াকশন হয় যেমন- রোগীর শরীর ঝাকুনি দিয়ে উঠা, বেহুঁশ হয়ে যাওয়া, খিঁচুনি, মাথা ঘোরা, অসাড়তা, মাথাব্যথা, বা তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে কাঁপুনি, বা তার শরীরে কোন পরিবর্তন অনুভব হয়, রোগীকে যাদু করা হয়েছে, এই গুলো জাদুর কারণে হয়েছে। আর এমনটি না হলে বুঝতে হবে যে এটা সাধারণ রোগ, এর জন্য মেডিক্যাল চিকিৎসা করতে হবে।
দ্বিতীয়ত যাদুটোনা বা জ্বিনের সমস্যার কারণে সমস্যা হলে সাধারণত ল্যাব টেস্ট, এক্স-রে, সিটি স্ক্যানে বা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় উল্লেখযোগ্য কিছুই পাওয়া যায়না। ডাক্তারের চিকিৎসায় ফায়দা হয়না, কোনো রোগ ভালো হয়না।
রুকইয়াহ চিকিৎসা
যদি বুঝতে পারেন সমস্যা আছে বা থাকতে পারে তাহলে সম্ভব হলে কাকীর সরণাপন্ন হয়ে সরাসরি রুকইয়াহ করতে পারেন। এই জাদুর ক্ষেত্রেও সাধারণত জ্বীনের সাহায্য নেয়া হয় বা ক্ষতি করার জন্য রোগীর সাথে জ্বীন নিযুক্ত করা হয়। তাই জ্বীনের সমস্যা থাকলে বা জাদুর প্রভাব জটিল ও প্রকট হলে সরাসরি রুকইয়াহ করা উচিত।
নিজে রুকইয়াহ করতে চাইলে প্রথমে পাকসাফ হয়ে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ুন। এরপর দু’হাত তুলে আল্লাহর কাছে আপনার সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য এবং সুস্থতার জন্য দু’আ করুন, তারপর দরুদ ইস্তিগফার পড়ে ট্রিটমেন্ট শুরু করুন।
রুকইয়াহ প্রেসক্রিপশন
১/ প্রতিদিন সূরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সূরা ইয়াসিন, সফফাত, দুখান, জ্বীন, সূরা দুহা থেকে সূরা ইখলাস পর্যন্ত এবং সূরা ফালাক ও সূরা নাস দুই থেকে তিন বার পাঠ করবেন।
২/ সিহরের আয়াত, আয়াতুশ শিফা ও আয়াতুস সাকিনাহ প্রতিদিন সকাল বিকাল দুই বার তিলাওয়াত করবেন।
৩/ তিলাওয়াত করতে না পারলে এইগুলো অডিও রেকর্ড শুনবেন।
৪/ সময় কম পেলে সিহরের কমন আয়াত ও তিন কুল প্রতিদিন আধা ঘন্টা বা এক ঘন্টা পাঠ করবেন কিংবা অডিও শুনবেন।
৫/ নিম্নের সূরা, আয়াত ও দোয়া গুলো প্রতিটা তিন বার করে পড়ে কালোজিরা, কালোজিরার তেল ও পানিতে শিফার নিয়তে সামান্য থুথু মিশ্রিত ফুঁ দিবেন।
এরপর ওই কালো জিরা প্রতিদিন অল্প করে খাবেন। আর কালোজিরার তেল কপালে এবং যে অঙ্গে ব্যথা সেখানে মালিশ করবেন সকাল-বিকেল দৈনিক দুই বার।
আর পানি প্রতিদিন কয়েকবার বা যখনই পানি পানের প্রয়োজন হবে তখনই পান করবেন। শেষ হওয়ার আগেই আবার মিশিয়ে নিবেন। তবে নতুন করে পড়ে নিলেই ভালো।
রুকইয়াহ আয়াত ও দোয়া-
১। সূরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সূরা ফালাক নাস।
২। সূরা আরাফ ১১৭-১২২, সূরা ইউনুস ৮১-৮২, সূরা ত্বাহা ৬৯, সূরা ফুরক্বান ২৩ ।
৩। ৬টি আয়াতে শিফা (৯/১৪, ১০/৫৭, ১৬/৬৯, ১৭/৮২, ২৬/৮০, ৪১/৪৪)
১. وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِينَ
২. وَشِفَاءٌ لِّمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ
৩. يخْرُجُ مِن بُطُونِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاء لِلنَّاسِ
৪. وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاء وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ
৫. وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ
৬. قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ آمَنُوا هُدًى وَشِفَاء
৪। এরপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত নিম্নোক্ত দোয়া গুলো –
১. اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبْ الْبَاسَ، اشْفِهِ وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا
২. بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللَّهُ يَشْفِيكَ بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ
৩. بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ، وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ، وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ، وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ
৪. اَسْأَلُ اللهَ الْعَظِيْم، رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيْم، اَنْ يَّشْفِيَكْ
৫. بِسْمِ اللَّه، بِسْمِ اللَّه، بِسْمِ اللَّه، أَعُوذُ بِعِزَّةِ اللَّهِ وَقُدْرَتِهِ، مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ
৬/ আর পড়া পানি থেকে আধা গ্লাস বা এক গ্লাস পানি গোসলের পানিতে মিশিয়ে গোসল করবেন। এভাবে প্রতিদিন বা যেদিন গোসল করবেন সেদিনই রুকইয়াহ গোসল করবেন।
৭/ মাঝেমধ্যে একাধারে ৩/৭/১৪ দিন বরই পাতার গোসল করবেন।
৮/ আর যখন রুকইয়াহ তিলাওয়াত করবেন তখন তিলাওয়াত শেষে বা মাঝেমধ্যে রুকইয়াহ সাপ্লিমেন্ট গুলো ফুঁ দিয়ে রাখবেন।
৯/ রুকইয়া ভালোভাবে কাজ করার জন্য গানবাজনা শোনা যাবেনা। নামাজ-কালাম ঠিকঠাক পড়তে হবে। ফরজ ইবাদাতে যেন ত্রুটি না হয়। পর্দা করতে হবে; মাহরাম ও নন মাহরাম মেনে চলতে হবে।
১০/ আর হেফাজতের এবং নতুন করে যেন কিছুই করতে না পারে সে নিয়তে সকাল সন্ধ্যার মাসনুন দোয়া-কালাম এবং নিরাপত্তা এর আমল ঠিকমত স্থায়ীভাবে করবেন।
এভাবে ৭ দিন থেকে এক মাস পর্যন্ত রুকইয়াহ করুন। যদি যদি সুস্থ হয়ে যান তো আলহামদুলিল্লাহ। এরপরও সমস্যা বুঝতে পারলে প্রেসক্রিপশনের মেয়াদ বাড়িয়ে নিন এবং একই নির্দেশনা ফলো করুন। প্রয়োজনে আবার রাকির কাছে সরাসরি রুকইয়াহ করুন এবং অবস্থার উন্নতি ও সমস্যা অনুযায়ী রাকির পরামর্শ ফলো করুন।