প্রথমে জেনে নিন যে আপনার সিহর তথা জাদু বা ব্ল্যাক ম্যাজিক এর সমস্যা আছে কিনা। জ্বীন, জাদু বা বদনজর প্রতিটার ভিন্ন ভিন্ন লক্ষণ আছে, এগুলোর মাধ্যমে প্রাথমিক ধারণা ও রোগ নির্ণয় করতে পারবেন। এরপর নিজে বা রাকির কাছে রুকইয়াহ টেস্ট করে শিওর হতে পারবেন। রুকইয়াহ ডায়াগনোসিস এর ক্ষেত্রে রুকইয়াহ অডিও শুনলে বা রোগীর সামনে রাকি রুকইয়াহ’র আয়াত ও দুআ পাঠ করলে সাময়িক বিভিন্ন ইফেক্ট হয়। রুকইয়াহ’র সময় ইফেক্ট হওয়া মানে শিওর যে তার জ্বীন, জাদু বা বদনজরের সমস্যা আছে। জাদু আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখে যদি মনে হয় যে আপনার জাদুর সমস্যা আছে বা আপনি জাদুতে আক্রান্ত আছেন তাহলে জাদু নষ্টের রুকইয়াহ করতে পারেন। পাশাপাশি অন্যান্য সমস্যা থাকলে সেগুলোর জন্যও রুকইয়াহ করতে হবে।
জাদু আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ:
১. প্রায়ই বিকাল থেকে খারাপ লাগা, অস্বস্তি ও অস্থিরতা লাগা।
২. বুকে সংকীর্ণ ভাব ও দমবন্ধ অনুভব করা, বিশেষত বিকেল বা আছরের পর থেকে।
৩. চোখ অসুন্দর হয়ে যাওয়া বা অস্বাভাবিক লাগা।
৪. হুট করে কাউকে প্রচন্ড ভালোলাগা বা প্রচন্ড ঘৃনা করা।
৫. অতিরিক্ত রাগ, অল্পতেই রেগে যাওয়া।
৬. পরিবারের মধ্যে ঝগড়া-ঝাটি লেগেই থাকা। বিশেষতঃ স্বামীস্ত্রীর মাঝে।
৭. পরিবার, বাসা, সমাজের প্রতি তীব্র বিতৃষ্ণা লাগা।
৮. শরীরের জয়েন্টে জয়েন্টে অতিরিক্ত ব্যথা।
৯. ব্যাকপেইন। বিশেষত মেরুদণ্ডের নিচের অংশে ব্যথা করা।
১০. নারীদের মাসিক অনিয়মিত হওয়া।
১১. বারবার প্রস্রাব ইনফেকশন হওয়া।
১২. কোনো কারণ ছাড়াই ঘর থেকে বের হয়ে যেতে চাওয়া।
১৩. উদ্দেশ্যবিহীনভাবে রাস্তায় রাস্তায় ঘোরা।
১৪. কোনো সমস্যা না থাকলেও বিয়ে না হওয়া।
১৫. কনসিভ না হওয়া বা বারবার মিসক্যারেজ হওয়া।
১৬. সহবাসে অক্ষমতা। মিলন করলে স্ত্রীর ব্লিডিং হওয়া। ১৭. সকালে বিছানা থেকে উঠতে কষ্ট হওয়া।
১৮. তীব্র মাথাব্যথা যা চিকিৎসা করেও ভালো হয়না।
১৯. প্রায়শই পেটব্যথা করা। বমি বমি ভাব লাগা, কখনও কখনও বমি হওয়া।
২০. আইবিএস, দীর্ঘদিন ধরে কোষ্টকাঠিন্য থাকা বা প্রায়ই পেট খারাপ হওয়া।
২১. প্রায়ই মাথা গরম থাকা, মাথা দিয়ে গরম তাপ বের হওয়া।
২২. উল্লেখযোগ্য কারণ ছাড়াই দিন দিন শুকিয়ে যাওয়া বা স্বাস্থ্য বেড়ে যাওয়া।
২৩. ঠিকমতো ঘুম না হওয়া, ঘুমালেও ভয়ংকর স্বপ্ন দেখা।
২৪. অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও মেডিকেল টেস্টে সমস্যা ধরা না পড়া।
২৫. দীর্ঘদিন চিকিৎসা করেও সুস্থ না হওয়া।
২৬. স্বপ্নে কাউকে জাদু করতে দেখা।
২৭. স্বপ্নে কোনো গাড়ি বা প্রাণীকে আক্রমণ করতে দেখা। ( যেমন সাপ, কুকুর, গরু, সিংহ ইত্যাদি )
২৮. স্বপ্নে কোনো ফাঁকা বাড়ি, মরুভূমি দেখা।
২৯. স্বপ্নে কবরস্থানে নিজেকে হাঁটাচলা করতে দেখা।
৩০. স্বপ্নে ঘনঘন কোথাও আগুন জ্বালতে থাকা বা কোনো কিছু পোড়াতে দেখা।
৩১. স্বপ্নে মৃত মানুষ/লাশ/কবরস্থান দেখা।
৩২. স্বপ্নে সাগর/নদী/পানি/সাঁতরানো/পানিতে ডুবে যাওয়া দেখা।
উল্লেখিত লক্ষণসমূহের দুই একটা যদি হঠাৎ কখনো কারো মধ্যে পাওয়া যায় তাহলে টেনশনের কিছু নেই। আপনার রুকইয়াহ করা লাগবে না। দুই একটা এমনিতেই মিলে যেতে পারে। কারণ তা শারীরিক মানসিক সমস্যার কারণেও হতে পারে। এক্ষেত্রে ফরজ ইবাদত ও আমলগুলো গুরুত্ব দিয়ে করতে হবে এবং হেফাজতের মাসনূন আমলগুলো গুরুত্ব দিয়ে করতে হবে যেন ভবিষ্যতে এসবে আক্রান্ত না হোন। আর প্রয়োজনে মেডিকেল চিকিৎসা নিন। মেডিকেল চিকিৎসার পাশাপাশি বেশি বেশি দুআ করবেন এবং চাইলে সেলফ রুকইয়াহ করতে পারেন। এতে আল্লাহর রহমতে দ্রুত সুস্থ হবেন ইনশাআল্লাহ।
এসব লক্ষণ যদি ৪-৫ টা বা তারও বেশি মিলে যায় কিংবা কোনো এক বা একাধিক লক্ষণ যদি প্রায়ই দেখা যায় তাহলে ধরে নেয়া যায় সমস্যা আছে। এক্ষেত্রে রুকইয়াহ অডিও শুনে বা রাকির কাছে রুকইয়াহ টেস্ট করা উচিত সমস্যা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য। বিভিন্ন ক্বারিদের সাধারণ বা কমন রুকইয়াহ’র যেকোনো অডিও বা জাদু নষ্টের রুকইয়াহ অডিও কিংবা আমাদের Sunnah Cure BD ইউটিউব চ্যানেল থেকে “রুকইয়াহ ডায়াগনোসিস” অডিও শুনে টেস্ট করতে পারেন।
যাদুর সমস্যা থাকলে রাকি রুকইয়াহ করার সময় বা নিজে রুকইয়াহ অডিও শ্রাবনের সময় বেশকিছু প্রতিক্রিয়া হতে পারে। যেমন- বমি হওয়া অথবা বমি বমি ভাব হওয়া, পেটে অথবা ঘারে অথবা মাথায় তীব্র ব্যথা হওয়া, কান্না পাওয়া ইত্যাদি। রুকইয়াহ শুনে যদি এরকম যেকোন প্রতিক্রিয়া হয় তাহলে বুঝতে হবে যে নিশ্চিত আপনার সমস্যা আছে। সমস্যা বুঝতে পারলে আপনার উচিত অন্তত দুই সপ্তাহ যাদু নষ্টের সেলফ রুকইয়াহ গাইডলাইন ফলো করা।
রুকইয়াহ প্রেসক্রিপশন ও গাইডলাইন:
তিলাওয়াত:
সিহর বা জাদু নষ্টের আয়াত প্রতিদিন অন্তত এক থেকে দুই বার তিলাওয়াত করবেন। সবগুলো সম্ভব না হলে অন্তত কমন আয়াত গুলো তিলাওয়াত করবেন। অন্তত ৪৫ মিনিট করে প্রতিদিন এক থেকে দুই বার।
আয়াতুল কুরসি তিলাওয়াত করবেন ৫০-১০০ বার। তিনকুল বা সূরা ইখলাস, ফালাক ও সূরা নাস প্রতিদিন আধা ঘন্টা করে দুইবার তিলাওয়াত করবেন।
অডিও শোনা:
তিলাওয়াত করা সম্ভব না হলে বা তিলাওয়াত বিশুদ্ধ না হলে কিংবা নারীদের পিরিয়ডের সময় তিলাওয়াতের বিকল্প হিসেবে রুকইয়াহ’র অডিও শুনবেন। চাইলে তিলাওয়াতের পাশাপাশিও রুকইয়াহ অডিও শুনতে পারেন। এক্ষেত্রে যেসব অডিও শুনতে পারেন…
জাদু নষ্টের রুকইয়াহ, আয়াতুল কুরসি, তিনকুল তথা সূরা ইখলাস, ফালাক ও সূরা নাস এর অডিও।
বিভিন্ন ক্বারিদের সাধারণ রুকইয়াহ। এক্ষেত্রে শায়েখ লুহাইদানের সাধারণ বা কমন রুকইয়াহ শুনতে পারেন।
প্রতিদিন অন্তত আড়াই থেকে তিন ঘন্টা রুকইয়াহর আয়াত ও সূরা তিলাওয়াত করবেন অথবা রুকইয়াহ’র অডিও শুনবেন। যতবেশি রুকইয়াহ করবেন ততই ভালো।
যদি মোটামুটি কুরআন বা আয়াতুল কুরসি ও তিনকুল তিলাওয়াত করতে পারেন তাহলে অডিও শোনার পাশাপাশি আয়াতুল ও তিনকুল প্রতিদিন আধা ঘন্টা বা এক ঘন্টা তিলাওয়াত করবেন।
সিহর বা জাদু নষ্টের কমন আয়াত:
সূরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সূরা বাকারাহ ১০২ নং আয়াত, সূরা আরাফ ১১৭-১২২ নং আয়াত, সূরা ইউনুস ৮১-৮২ নং আয়াত, সূরা ত্বা-হা ৬৯ নং আয়াত, সূরা ফুরক্বান ২৩ নং আয়াত, সূরা কাফিরুন, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস।
এইগুলো মুখস্থও পড়তে পারবেন আবার মুখস্থ না থাকলে কুরআন থেকে দেখে বা কোথাও নোট করে সেখান থেকেও দেখতে পড়তে পারবেন।
রুকইয়াহ গোসল:
প্রতিদিন বা সপ্তাহে অন্তত তিন থেকে চার দিন রুকইয়াহ’র গোসল করবেন। এক্ষেত্রে নিয়মিত রুকইয়াহ’র কমন গোসল বা জাদু নষ্টের সাধারণ গোসল করবেন এবং মাঝেমধ্যে একাধারে ৩দিন বা ৭দিন বা ১৪ দিন বরই পাতার গোসল করবেন।
সিহরের কমন গোসল: শুরুতে যেকোনো দরুদ শরীফ, সিহরের কমন আয়াত, শেষে আবার কোনো দরুদ শরীফ– প্রতিটা সাতবার করে পড়ে এক বালতি পানিতে সামান্য থুতু সহ ৩ টি ফুঁ দিবেন। এরপর এই পানি দিয়ে গোসল করবেন। প্রথমে এই পানি দিয়ে গোসল করবেন, এরপর চাইলে সাধারণ পানি নিয়ে ইচ্ছামত গোসল করতে পারবেন। রোগী নিজে পড়তে না পারলে অন্য কেউ এভাবে পড়া পানি তৈরি করে দিতে পারবে।
বরই পাতার গোসল: সাতটি তাজা বরইপাতা নিন। এগুলো পাঠায় বেটে বা ব্লেন্ড করে পেস্ট বানিয়ে ফেলুন। তারপর এক বালতি পানি নিয়ে এগুলো গোলান। এরপর সিহরের কমন আয়াত গুলো প্রতিটা ৩/৭ বার করে পড়ুন। পড়ার মাঝে ফুঁ দিতে পারেন অথবা একেবারে শেষে ফু দিবেন। এরপর এখান থেকে এক গ্লাস পানি খাবেন। বাকিটা দিয়ে গোসল করে নিবেন।
সতর্কতা
১. বালতির পানি খাওয়ার উপযুক্ত না হলে বরইপাতার অল্প একটু পেস্ট মিশিয়ে আলাদা এক গ্লাস খাবার পানি রাখবেন। বালতির পানিতে ফুঁ দেয়ার সময় এতেও ফু দিয়ে খেয়ে তারপর গোসল করবেন।
২. ওয়াশ রুম ও গোসলখানা একই হলে এইগুলো বাহিরে পড়বেন। অথবা এক জগ পানিতে মিশিয়ে পড়ার তাতে এবং বালতির পানিতে ফুঁ দিবেন এরপর তা একসাথে মিশিয়ে গোসল করে নিবেন।
৩. এটা সাধারণ পানি হতে হবে। শীতকালে একান্ত অপারগতায় কুসুম গরম পানি দেয়া যায়। তবে ঠান্ডা পানি হওয়াই ভালো।
৪. বরইপাতা না পেলে কর্পূর পাতা বা নিমপাতা ব্যবহার করতে পারেন। একসাথে অনেকগুলো নিয়ে ফ্রিজে রেখেও ব্যবহার করা যাবে নষ্ট হওয়া বা শুঁকিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত।
৫. বরইপাতা গুড়া পাওয়া যায়, ওটা হলেও চলবে। সাতটার আনুমানিক হিসাব বা এক চামম ব্যবহার করবেন।
নোটঃ জাদুর জন্য উল্লেখিত পদ্ধতি বেশ কার্যকরী ও উপকারী মাধ্যম। কারো শরীরে জাদু বা তার প্রভাব থাকলে ৩/৭/১৪ দিন এই গোসল করলে কেটে যাবে ইনশাআল্লাহ।
রুকইয়াহ সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার:
সিহরের কমন আয়াত গুলো ৩/৭ বার করে পড়ে পানি, অলিভ অয়েল, কালোজিরা ও মধু সবগুলোতে তিনটি করে ফুঁ দিবেন। এরপর প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস পানি, এক চিমটি কালোজিরা, এক বা দুই চা-চামচ মধু মিক্স করে খেয়ে নিবেন। এভাবে রাতেও ঘুমের পূর্বে খাবেন। ব্যথার স্থানে, এলার্জি বা চুলকানির জায়গায়, আক্রান্ত স্থানে তেল মালিশ করবেন। এছাড়াও যখনই পানি পানের প্রয়োজন হবে নরমাল পানি পান না করে চেষ্টা করবেন পড়া পানি পান করার। মাঝেমধ্যে বাড়িতে, ঘরে পড়া পানি স্প্রে করে বা ছিটিয়ে দিবেন এবং ফ্লোর মুছে দিবেন। কোনো উপাদান বা সবগুলো শেষ হয়ে গেলে আবার নতুন করে তৈরি করে নিবেন।
পেটের জাদু নষ্ট করা:
পেটের জাদু সবচেয়ে ক্ষতিকর। পেটে জাদু থাকলে উপরোক্ত নিয়মগুলোর সাথে পেটের জাদু নষ্টের জন্য বিশেষ দুটি পদ্ধতিতে পেটের জাদু করতে হবে। প্রথমে ৩/৫/৭ দিন ইস্তেফরাগ করবেন এরপর ১/২/৩ দিন লুজ মোশন করবেন।
ক) ইস্তেফরাগ বা বমি করা–
দেড় বা দুই লিটার পানি + দুই চামচ কালোজিরা+ দুই চামচ মধু+তিন চামচ ভিনেগার+দুই চামচ অলিভ অয়েল+দুই চামচ লবণ+১৪ টা পাঠায় পিষা বড়ই পাতার পেষ্ট + গোলাপজল ২-৩ চামচ ( যেটা খাওয়া যায়)
সব গুলো এক সাথে মিশিয়ে সামনে রেখে সিহরের আয়াত গুলো ৩/৫/৭ করে পড়ে কিংবা যতবেশি সম্ভব বেজোড় সংখ্যকবার পড়ে সবগুলোতে তিনটি ফুঁ দিবেন।
এরপর তা থেকে দ্রুত পেট ভরে বা হাফ লিটার পরিমাণ পান করবেন। পান করার সাথে সাথে হয়তো অটোমেটিক বমি চলে আসবে। বমি আসলে বমি করবেন। এরপর আবার খাবেন এবং বমি করবেন। এভাবে শেষ পর্যন্ত খাবেন।
আর যদি পেট ভরে খাওয়ার পর বমি না আসে তাহলে আরেকটু খাবেন। তখনও বমি না আসলে মুখে আঙ্গুল ঢুকিয়ে বমি করার চেষ্টা করবেন। এরপরও বমি না হলে আর খাবেন না।
উল্লেখ্য যে, এভাবে খাওয়ার কখনোও বমি হলেও পাশাপাশি লুজ মোশন বা টয়লেটের চাপও হতে পারে। বমি না হলেও এরকম হতে পারে। যদি লুজ মোশন হয় তবে আরো ভালো। চিন্তার কিছু নেই।
এভাবে বরই পাতা মিশ্রিত পড়া পানি ৩-৭ দিন খাবেন। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খাবেন। প্রথম দিন বমি না হলেও দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিনও হতে পারে। আর বমি না হলে অতিরিক্ত পানিটুকু ফেলে না দিয়ে বরং গোসলের বা রুকইয়াহ গোসলের পানিতে মিশিয়ে গোসল করে নিতে পারেন। গর্ভবতী নারীরা উক্ত নিয়মে ইস্তেফরাগ করবেন না।
খ) লুজ মোশন করা-
২/৩ চা-চামচ সোনাপাতার গুঁড়ো বা ২০-২৫ গ্রাম সোনাপাতা হাফ লিটার পানিতে রাতে ভিজিয়ে রাখবেন। সকালে তা উথলানো বা বলক উঠা পর্যন্ত আগুনে ঝাল করবেন। ঝাল দেয়া হয়ে গেলে তা একটি পাত্রে চেকে নিবেন। এরপর এর সাথে ৪-৫ চা-চামচের মতো মধু মিশিয়ে নিবেন। তারপর খাওয়ার উপযোগী পরিমাণ ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন এবং এরপর সিহরের কমন আয়াত পাঠ করে তাতে ফুঁ দিবেন।
এরপর খাওয়ার উপযোগী ঠান্ডা হয়ে গেলে খালি পেটে তা খেয়ে নিবেন। খাওয়ার পর দুই তিন গ্লাস বা একটু বেশি পরিমাণে পানি পান করে নিবেন। এটা খাওয়ার ১-২ ঘন্টা পর টয়লেটের বেগ হবে। এরকম কয়েকবার টয়লেট হতে পারে। ৪/৫ ঘন্টা এর কার্যকারিতা থাকতে পারে। এটা খাওয়ার পর সম্ভব হলে তিন চার ঘন্টা বা দুপুর পর্যন্ত কিছু না খেয়ে থাকার চেষ্টা করবেন। লুজ মোশন হওয়ার ফলে যেহেতু দুর্বল লাগতে পারে এজন্য স্যালাইন বা গ্লকোজ খেয়ে নিতে পারেন।
কারো কারো টয়লেট নাও হতে পারে। এতে চিন্তার কিছু নেই। কারো ক্ষেত্রে উল্টো টয়লেট কষা হয়ে যেতে পারে। এরকম হলেও টেনশন করবেন না। এটা দ্বিতীয় দিন খাওয়ার পরেও যদি সেইদিন ও টয়লেট না হয় বা কষা হয় তাহলে আর খাবেন না। বরং অন্য পদ্ধতি গুলো ফলো কিছু পর আবার ট্রাই করবেন।
সতর্কতা–
পেটের জাদু নষ্টের এই দুটি পদ্ধতি মাসে একবারের বেশি করবেন না। অর্থাৎ উল্লেখিত নিয়ম অনুযায়ী মাসে সর্বোচ্চ একবার করবেন। আর নারীরা গর্ভাবস্থায় এ দুটি পদ্ধতি থেকে বিরত থাকবেন। বরং এদুটি পদ্ধতি ছাড়া অন্য নিয়মগুলো মেনে রুকইয়াহ করবেন।
স্বপ্নে জাদুর জিনিস খাওয়া বন্ধ করা:
স্বপ্নে খেতে দেখা অনেক সময় জাদুর লক্ষণ। জাদুকর নিজে সরাসরি জাদুর খাওয়াতে না পারলে তখন জ্বীনের সাহায্য নেয়। জাদুর খাদেম জ্বীন শয়তান তখন স্বপ্নের মাধ্যমে জাদু খাওয়ানোর মাধ্যমে জাদু রিনিউ করে। জ্বীন নিজে আসলেও এভাবে স্বপ্নে খাওয়ানোর মাধ্যমে জাদু করে এবং শক্তিশালী হয়। স্বপ্নে জাদুর জিনিস খাওয়া বন্ধ এবং পেটের জাদু নষ্ট করতে না পারলে জ্বীন জাদু থেকে সুস্থ হওয়া অনেকটাই কঠিন।
স্বপ্নে জাদুর জিনিস খাওয়া বন্ধের জন্য পানি, কালোজিরা ও মধু মিক্স করে খাবেন ঘুমের পূর্বে যেভাবে “যেভাবে রুকইয়াহ সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার” এ আলোচনায় বলা হয়েছে। অলিভ অয়েল লিপজলের মতো ঠোঁটে মালিশ করবেন। তবে এক্ষেত্রে এগুলো খাওয়া ও অলিভ অয়েল ঠোঁটে ব্যবহারের পূর্বে সূরা ইয়াসিন ৯ নং আয়াত ও সূরা বনী ইসরাইল ৪৫ নং আয়াত ৩/৭ বার করে পড়ে এইগুলো ফুঁ দিয়ে নিবেন। আর কোনদিন স্বপ্নে খেতে দেখলে ঘুম থেকে উঠে সকালেই ইস্তেফরাগ ও লুজ মোশন করবেন।
মনে রাখতে হবে যে, শয়তান স্বপ্নে খাওয়ানোর জন্য সুযোগ খুঁজে এবং সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। বিশেষ করে নারীদের পিরিয়ড অবস্থায়। তাই শয়তান সুযোগ দিবেন না, আমলে অবহেলা করবেন না এবং নারীরা নামাজ বন্ধের সময় গুলোতে গুরুত্ব দিয়ে রুকইয়াহ করবেন। পিরিয়ডের সময় আগে থেকেই এইগুলো তৈরি করে রাখবেন আয়াত গুলো পড়ে অথবা অন্য কেউ পড়ে দিবে।
তাবিজ ও জাদুর জিনিস নষ্ট করা:
জাদু করা হয়েছে এমন কোনো জিনিস, তাবিজ ইত্যাদি অথবা সন্দেহজনক কিছু খুঁজে পেলে সেগুলো তাবিজ নষ্টের নিয়মে নষ্ট করে ফেলতে হবে।
গায়ে ও বাড়িতে কোনো তাবিজ থাকলে সেগুলো খুলবেন, এরপর কাগজ থাকলে তা কেটে টুকরো করবেন, তাবিজের ভেতর থেকে কাগজ ইত্যাদি বের করবেন, চুল বা সুতায় গিঁট থাকলে সেগুলো খুলবেন বা কেটে ফেলবেন। এরপর সিহরের আয়াত গুলো বা সূরা ফাতিহা, সূরা ইউনুস ৮১-৮২, সূরা ইখলাস, ফালাক ও সূরা নাস প্রতিটা ৩/৭ বার করে পানিতে ফুঁ দিন। এরপর তাবিজ অথবা জাদুর জিনিস গুলো তাতে ডুবিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ, তাহলে ইনশাআল্লাহ নষ্ট হয়ে যাবে। প্রেম সেগুলো আগুনে পুড়িয়ে ফেলুন বা নষ্ট করে দূর কোথাও ফেলে দিন।
হেফাজত বা সুরক্ষার মাসনুন আমল:
নতুন করে যেন জাদু করতে পারে বা জাদু নবায়ন করলেও যেন এর প্রভাব কার্যকর না হয়, এর প্রভাব বিস্তার না করে, জ্বীন যেন নতুন করে কিছু করতে না পারে সেজন্য হাদীসে বর্ণিত সকাল-সন্ধ্যা ও ঘুমের সময়ের হেফাজত বা নিরাপত্তার মাসনুন আমল গুলো নিয়মিত করতে হবে। কেউ যদি আক্রান্ত হওয়ার পূর্বে থেকেই এই গুলো নিয়মিত গুরুত্বসহকারে আমল করে তাহলে সে কখনই জ্বীন, জাদু বা নজর-হাসাদে আক্রান্ত হবে বা এইগুলো তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ। আর যদি আক্রান্ত হয়ে যায় তাহলে রুকইয়াহ’র পাশাপাশি অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে সেগুলো আমল করতে হবে যেন নতুন করে জ্বীন জাদু ক্ষতি করতে না পারে এবং করলেও এইগুলোর প্রভাব কার্যকর না হয় এবং শরীর বন্ধ থাকে। শরীর বন্ধের জন্য তাবিজ কবজ ব্যবহার করবেন না। সুস্থ হয়ে গেলেও নিরাপত্তার মাসনুন আমল গুলো মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিয়মিত পালন করতে হবে।
নিরাপত্তার মাসনুন আমল পাবেন এই লিংকে– মাসনুন আমল
বিশেষ নোটঃ
১। মেয়েরা পিরিয়ড অবস্থায়ও রুকইয়াহ করতে পারবে। পানি ও অন্যান্য সাপ্লিমেন্ট অন্য কেউ পড়ে দিবে।
২। একজন পানি ও অন্যান্য সাপ্লিমেন্ট তৈরি করে দিলে রোগী তা ব্যবহার করতে পারবে।
৩। রুকইয়াহ শুরু করলে প্রথমদিকে শরীর খারাপ করতে পারে। তখন রুকইয়াহ বন্ধ করা যাবে না। ধৈর্য্য ধরে রুকইয়াহ চালিয়ে যেতে হবে। ইনশা আল্লাহ সাফল্য আসবে।
জাদু, জ্বিন, বদনজর সম্পর্কিত একাধিক সমস্যায় আক্রান্ত হলে প্রথমে বদনজরের জন্য রুকইয়া করতে হবে, এরপর জ্বিনের রুকইয়া এবং যাদুর জন্য রুকইয়াহ। অথবা যে সমস্যা অনুভব হবে সেটার রুকইয়াহ আগে করবেন।
দুই সপ্তাহ করে পুরোপুরি ভালো না হলে প্রয়োজনে তিন সপ্তাহ করতে পারেন। দুই বা তিন সপ্তাহ করে গ্রুপে নতুন পোস্ট দিয়ে আপনার আপডেট জানাতে পারেন।
পুরো লেখাটা মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। একবার না বুঝলে কয়েকবার পড়ুন। এরপর আল্লাহর সাহায্য কামনা করে সেলফ রুকইয়াহ শুরু করুন। তবে আপনার অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
আল্লাহ আপনাকে এমন আরোগ্য দান করুন যাতে আর কোন রোগ বাকি না থাকে। আমীন।