সহবাসে অক্ষমতার যাদু নষ্টের রুকইয়াহ

সহবাসে অক্ষমতা বিশেষ কোনো রোগ বা শারীরিক কোনো সমস্যার কারণেও হতে পারে আবার যাদুর কারণেও হতে পারে। এমন হলে প্রথমেই ডাক্তারী পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং চিকিৎসা করুন। বরং ডাক্তারী ও রুকইয়াহ উভয় পরীক্ষা-ই করে দেখুন সমস্যা মূলত কেন হয়েছে। যদি বিশেষ কোনো বা শারীরিক কোনো কারণে হয়ে থাকে তাহলে ডাক্তারী চিকিৎসা নিন। আর যদি যাদুর কারণে হয়ে থাকে তাহলে রুকইয়াহ করুন ইনশাআল্লাহ সুস্থতা আসবে। সহবাসে অক্ষমতা হলেই যে ধরে নিতে হবে তা যাদুর কারণে হয়েছে বিষয়টি এমন নয়। কারণ এটি অন্যান্য কারণেও হতে পারে। তবে যদি মেডিকেল পরীক্ষা ও চিকিৎসায় কোনো সমস্যা বুঝতে না পারেন এবং শারীরিক কোনো সমস্যা বা অন্য কোনো কারণ ছাড়াই হয়ে থাকে তাহলে ধরে নিতে পারেন যদুর কারণে হয়েছে।

এ যাদুতে সাধারণত জ্বিনের সাহায্য নেওয়া হয়। সহবাসে অক্ষমতা বা পুরুষত্বহীনতা যাদুর সমস্যা সাধারণ পুরুষত্বহীনতা থেকে ভিন্ন। পুরুষরা এ যাদুতে আক্রান্ত হলে অন্য সময় স্বাভাবিক থাকলেও স্ত্রীর কাছে গেলে বা সহবাসের সময় অপারগ হয়ে যায়। একাধিক স্ত্রীর ক্ষেত্রে দেখা যায় কোনো স্ত্রীর সাথে সহবাসের সময় স্বাভাবিক থাকলেও অন্য স্ত্রীর ক্ষেত্রে অক্ষম হয়ে পড়ে। নারীরা এ যাদুতে আক্রান্ত হলে জ্বিন শয়তান তার মস্তিষ্কে অবস্থান করে অনুভূতি নষ্ট করে ফেলে। ফলে সহবাসের সময় উত্তেজিত হয়না বা অনুভূতি হারিয়ে ফেলে । মনে হয় যেন অনুভূতিহীন এক জড় পদার্থ। পার্থক্যটা সাধারণত এখানেই যাদুর কারণে এমনটি হয়ে থাকলে বিশেষ কিছু লক্ষণ থাকে বা বিশেষ মূহুর্তে অপারগ ও অনুভূতিহীন হয়ে পড়ে অন্য সময় স্বাভাবিক থাকলেও। আর যাদুর কারণে না হয়ে শারীরিক বা বিশেষ কোনো কারণে হয়ে থাকে অন্য সময়েও সাধারণত যৌনাঙ্গ দূর্বল , শিথিল, উত্তেজনাহীন ও অনুভূতিহীন এবং আকর্ষণহীন থাকে।

সহবাসে অক্ষম করার যাদুর লক্ষণ

পুরুষের ক্ষেত্রে
১/ বিয়ের আগে সুস্থ থাকলেও বিয়ের পর ক্রমশ যৌন মিলনের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলা।
২/ সম্পূর্ণ শারীরিক সুস্থতা থাকা সত্ত্বেও স্ত্রীর সাথে সহবাসে হঠাৎ অক্ষম হয়ে পড়া।
৩/ মিলন পূর্ব সময়ে স্বাভাবিক থাকলেও মিলনের সময় পুরুষাঙ্গ দুর্বল ও নিস্তেজ হয়ে পড়া ।
৪/ সহবাসের সময় বা এর কিছুক্ষণ পূর্বে যৌন অনুভূতি হারিয়ে ফেলা।
৫/ অনেক সময় অল্প সময়ে বীর্যপাত হয়ে যায় দীর্ঘক্ষণ সহবাসে সক্ষম না হওয়া।
৬/ সহবাসে অক্ষম করার যাদুর সবচেয়ে বড় নিদর্শন হলো পুরুষ যখন তার স্ত্রী থেকে দূরে অবস্থান করবে তখন নিজের মধ্যে পূর্ণ সক্ষমতা অনুভব করা । কিন্তু যখনই সে স্ত্রীর নিকটবর্তী হবে বা সহবাসের ইচ্ছা করবে , ঠিক সেই মুহূর্তে তার পুরুষাঙ্গ স্তিমিত হয়ে যাওয়া ।এতে সে সহবাস করতে সক্ষম হওয়া।

নারীদের ক্ষেত্রে
১/কুমারী মেয়েকে বিয়ের পর অকুমারী মনে হওয়া । এতে স্বামীর মনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। কিন্তু এই যাদুর চিকিৎসা করে যাদু নষ্ট হওয়ার পর আর এমন মনে হয় না।
২/স্ত্রী তার স্বামীকে কাছে আসতে অনিচ্ছা নিয়ে বাধা দেওয়া।
৩/ সহবাসের সময় মিলনের পূর্ব মুহূর্তে যৌন অনুভূতি হারিয়ে ফেলা।
৪/ স্বামী কাছে আসতে চাইলে অনিচ্ছায় দুই ঊরু একত্রিত করে ফেলা।
৫/ কেবল সহবাসের সময় জরায়ু থেকে রক্ত বের হওয়া।( এমনিতে জরায়ু থেকে রক্তক্ষরণ জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ)
৬/ সহবাসের সময় তার স্বামী যৌনাঙ্গে মাংসের প্রতিবন্ধকতা টের পাওয়া, ফলে সহবাসে সফল না হওয়া।
৭/ জিন নারীর মস্তিষ্কে আসন করে তার যৌন চাহিদা নষ্ট করে দেয়। ফলে স্বামীর সাথে সহবাস করলেও তাতে কোনো স্বাদ অনুভব না করা , বরং সহবাসের সময় অর্ধচেতন অবস্থাই পড়ে থাকা ।
৮/ সহবাসের সময় শরীর গরম না হওয়া।
৯/ পানি বা সাদা তরল বীর্য না আসা।
১০/ অর্গাজম বা বীর্যপাত না হওয়া।
১১/ উত্তেজনা না আসা, আসলেও একটু পর শেষ হয়ে যাওয়া।
১২/ সহবাসের সময় প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করা।
এগুলো ছাড়াও উভয়ের ক্ষেত্রেই জিন আক্রান্ত হওয়ার কিছু লক্ষণ ও মিলে যেতে পারে।

অক্ষমতার যাদু নষ্টের রুকইয়াহ

সেলফ রুকইয়াহ সাজেশন –
সূরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সূরা আরাফ ১১৭-১২২ , সূরা ইউনুস ৮১-৮২, সূরা ত্বহা ৬৯, সূরা ফুরকান ২৩ , সূরা ইনশিরাহ, সূরা ইখলাস, ফালাক, সূরা নাস— ৩/৭ বার করে পড়ে ১০/১২ দিনের জন্য পানিতে ফু দিন।

১. এই পানি প্রতিদিন সকাল দুপুর রাতে এক গ্লাস করে পান করবেন। শেষ হয়ে গেলে আবার পড়ে নিবেন। নতুন পানি মিশাবেন না। তবে যদি সবসময় পড়া পানি খেতে পারেন নরমাল পানি না খেয়ে তাহলে আরো বেশি ভালো। এজন্য বেশি করে পানি পড়ে নিতে পারেন বা শেষ হয়ে গেলে নতুন করে পড়ে নিবেন কিংবা প্রতিদিনের পানি প্রতিদিন তৈরি করে নিতে পারেন।

২. প্রতিদিন এই পানি থেকে আধা গ্লাস বা এক গ্লাস পানি নিয়ে গোসলের পানিতে মিশিয়ে গোসল করবেন। প্রতিদিন গোসল করা সম্ভব না হলে যেদিন গোসল করবেন সেদিন এখান থেকে পানি নিয়ে গোসলের পানিতে মিশিয়ে গোসল করবেন। অথবা চাইলে বরই পাতার গোসল করতে পারেন। যাদু নষ্টের জন্য বরই পাথর গোসল খুবই উপকারী। কিংবা দুটোই করতে পারেন কিছুদিন বরই পাতার গোসল করলেন আর কিছুদিন পর পড়া পানি দিয়ে গোসল করলেন এভাবেও করতে পারেন।

৩. এইগুলোর পাশাপাশি তিন কুল (ইখলাস ফালাক নাস) রুকইয়াহ, রুকইয়াহ কালো যাদু বান, কোনো ক্বারীর সাধারণ রুকইয়াহ এবং সূরা ত্বরিক এর অডিও প্রতিদিন অন্তত একবার করে শুনবেন।

৪. অডিও গুলো শোনার পাশাপাশি সময় পেলে উপরে উল্লেখিত আয়াত ও সূরা ত্বরিখ প্রতিদিন ১৫/২০/৩০ মিনিট ধরে তিলাওয়াত করবেন।

৫. কেউ বা রাকি( রুকইয়াহ চিকিৎসক) রোগীর কানে সূরা ফুরকানের ২৩ নং আয়াত টি বেশি বেশি তিলাওয়াত করতে পারেন। কিংবা রোগী নিজেই তিলাওয়াত করবেন-
وَقَدِمۡنَاۤ اِلٰی مَا عَمِلُوۡا مِنۡ عَمَلٍ فَجَعَلۡنٰہُ ہَبَآءً مَّنۡثُوۡرًا
উচ্চারণ: ওয়া ক্বাদিমনা- ইলা- মা- আমিলু- মিন আমালিং ফাজাআলনা-হু হাবা-আম মানছূরা-।

৬. নিম্নের আয়াত ও সূরা পড়বেন বা কেউ রোগীর কানের কাছে পড়বেনঃ
১ । সূরা ফাতেহা ৭০ বারের অধিক।
২। আয়াতুল কুরসী ৭০ বারের অধিক।
৩। সূরা ফালাক ও নাস ৭০ বারের অধিক।
এগুলি পরপর তিন থেকে সাত দিন পর্যন্ত পড়বেন।

৭. পরিস্কার একটি পাত্রে পরিস্কার পবিত্র কালি দিয়ে সিহরের উপরে বর্ণিত আয়াতসমূহ বা শুধু সূরা ইউনুস ৮১- ৮২ ও সূরা ফুরকানের ২৩ আয়াত গুলো লিখবেঃ এই আয়াত লেখার পর সেই পাত্রে কালো জিরার তেল বা পানি ঢেলে তা নাড়াচাড়া করবে। এরপর রোগী সেই তেল পান করবে এবং কপালে ও বুকে কিছুদিন দৈনিক কয়েকবার মালিশ করবে।

৮. এক কেজি/আধা কেজি খাটি মধু ও ১০০/২০০ গ্রাম বা পরিমাণ মতো আটা কিংবা যেকোনো শক্তিবর্ধক খাবার নিন। তারপর তাতে-
(১) সূরা ফাতেহা।
(২) সূরা আলাম নাশরাহ।
(৩) সূরা ইখলাস।
(৪)সূরা ফালাক।
(৫)সূরা নাস।

এইগুলো ৩/৭ বার করে পড়ে ফুঁ দিবেন তারপর উয়টা মিক্স করে ফ্রিজে সংরক্ষণ করবেন
এরপর তা হতে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক চা-চামচ এবং দুপুরে খাবারের এক বা আধা ঘন্টা পূর্বে এবং রাতে খাবারের পরে এক চা-চামচ করে খাবেন। এ নিয়ম প্রথমে একমাস খাবেন। তবে রয়েল জেলি নিতে পারেন তাহলে সবচেয়ে ভালো। যদি এক মাসের মধ্যে অক্ষমতা এবং দুবলতা কাটিয়ে উঠা যায় তাহলে আলহামদুলিল্লাহ। অন্যথায় সময় আরও বাড়িয়ে নিন।

এটা খেলে গ্যাস হতে পারে যদি গ্যাস হয় তাহলে আপনি গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেতে পারেন।

৯. অবশ্যই এর জন্য হিজামা বা কাটিং থ্যারাপি করবেন। এর জন্য হিজামা/কাপিং খুবই কার্যকরী চিকিৎসা।

১০. উপরে (১নং এ ) উল্লেখিত আয়াত গুলো পড়ে কালোজিরা , মধু ,তিন ফল , খেজুর, অলিভ অয়েল, জমজম বা বৃষ্টির পানি এইগলো তে পড়ে ফুঁ দিয়ে খেতে পারেন। (খেজুর আজওয়া খেজুর নিলে ভালো হয়)

বিঃদ্রঃ –
১. নিরাপত্তার সকাল সন্ধ্যার মাসনুন আমল গুলো স্থায়ীভাবে চালিয়ে যাবেন। কোনদিন যেন মিস না হয়।

২. এইগুলো শুরু করার আগে ৭ দিনের ডিটক্স রুকইয়াহ করে করে নিতে পারেন।

৩. এইগুলো দুয়েক সপ্তাহ করলে ইনশাআল্লাহ যাদু নষ্ট হয়ে যাবে এবং সুস্থ হয়ে যাবেন। এরপরও যদি সমস্যা থাকে পুরোপুরি সুস্থ না হন তাহলে সময় আরো বাড়িয়ে নিন।

৪. এই যাদু তে যেহেতু অধিকাংশ সময় জ্বিনের আশ্রয় নেওয়া হয় তাই জ্বিনের সমস্যা থাকলে সময় একটু বেশি লাগতে পারে।

৫. যদি জ্বিনের সমস্যা থাকে তাহলে সরাসরি রুকইয়াহ করবেন। জ্বিনের সমস্যা না থাকলেও যাদু নষ্টের জন্য সরাসরি রুকইয়াহ করলে অনেক উপকারী হবে ইনশাআল্লাহ।

শেয়ার করুন -

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top