হিজামা (Hijama) বা Cupping Therapy কী?
হিজামা (حِجَامَة) বা কাপিং থেরাপি একটি জনপ্রিয় সুন্নাহ ও বিজ্ঞানসম্মত ইসলামিক চিকিৎসা। রাসূল (ﷺ) এটিকে শ্রেষ্ঠ চিকিৎসা হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি নিজেও হিজামা নিয়েছেন। অনেক আগে থেকেই এটি ইউনানী ও আয়ুর্বেদ চিকিৎসার অন্তর্ভূক্ত। এর মাধ্যমে শরীরের নির্দিষ্ট কিছু অংশ থেকে ভ্যাকুয়াম কাপের সাহায্যে ব্যথামুক্ত ভাবে নেগেটিভ প্রেশার দিয়ে শরীরের সব ধরনের টক্সিন, ইউরিক এসিড, নিস্তেজ প্রবাহহীন দূষিত রক্ত বের করে আনা হয়। এটা রোগের জন্য চিকিৎসা, সুস্থ ব্যক্তির জন্য প্রতিরোধক। হিজামা এন্টি এইজিং ট্রিটমেন্ট অর্থাৎ সারা দুনিয়ার মানুষ বয়সকে ধরে রাখতে এবং স্টেমিনা বাড়ানোর জন্য হিজামা পছন্দ করে থাকেন।
এটি World Health Organization (WHO) কর্তৃক অনুমোদিত ও স্বীকৃত চিকিৎসা। অল্টারনেটিভ ট্রিটমেন্টে এর যুগান্তকারী সফলতার কারণে একে মিরাকল ট্রিটমেন্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
হিজামার সবচেয়ে প্রাচীন ব্যবহার পাওয়া যায় Traditional Chinese Medicine, Arab Medicine ও Greek Unani Medical Science -এ।
রাসূল (ﷺ) কর্তৃক নির্দেশিত হওয়ার ফলে এই চিকিৎসা Prophetic Medicine এর গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
এমন অসংখ্য রোগ আছে হিজামা ব্যতীত যার সমাধান বা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। অধিকাংশ অসুস্থতা ও রোগ থেকে সুস্থতা অথবা রোগের তীব্রতা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে হিজামা যুগান্তকারী পদক্ষেপ রাখে। তবে এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সেশন ও সঠিকভাবে সমস্যার ডায়গ্নোসিস হওয়া জরুরী।
হিজামা নিয়ে বিস্তারিত

হিজামা কীভাবে করা হয়?
প্রাচীনকালে বাঁশ কিংবা প্রাণীর শিং ব্যবহার করে হিজামা করা হত। কিন্তু বর্তমানে প্লাস্টিকের ভ্যাকুয়াম কাপের সাহায্যে এই হিজামা করা হয়। প্রথমবার নেগেটিভ সাকশন বা প্রেশার দিয়ে শরীরে কাপ বসিয়ে নিতে হয়। এরপর কয়েক মিনিট রেখে তা উঠিয়ে নিডল কিংবা সার্জিক্যাল ব্লেট দিয়ে চামড়া বা ত্বকের প্রথম লেয়ারে সুক্ষভাবে ক্র্যাচ করা হয়। ক্র্যাচ করার সময় হালকা আঁচরের মতন ব্যথা অনুভব হয়, তবে ব্যথা তেমন কিছু না, এটাকে ব্যথা ধরা যায় না। এরপর দ্বিতীয়বারের মতো নেগেটিভ সাকশন বা প্রেশার দিয়ে কয়েক মিনিট কাপ বসিয়ে রাখতে হয়। এর মাধ্যমে দেহ থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় টক্সিন বা দূষিত রক্ত নিষ্কাশিত হয়। ফলে এর দ্বারা স্নায়ুর চাপ উত্তেজিত হয়, ব্যথা সৃষ্টিকারী উপাদান বের হয়ে আসে, শিরা গুলো পুনরুজ্জীবিত হয়, শরীরে রক্তপ্রবাহ দ্রততর হয়, নাইট্রিক অক্সাইড বুস্ট হয় ফলে শরীর সতেজ, উদ্যমী, বলবান হয়, মানুষ প্রশান্তি এবং রোগ থেকে মুক্তি লাভ করে।
হিজামা বা কাপিং একাধিক ধরনের হয়। তন্মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হচ্ছে– ড্রাই কাপিং এবং ওয়েট কাপিং। ড্রাই কাপিং হচ্ছে, যা মূলত ম্যাসাজ আর সাকশনের সমন্বয়ে হয়। আর ওয়েট কাপিং (Wet Cupping) এর ক্ষেত্রে ব্লেড দিয়ে আক্রান্ত স্থানে চামড়ার উপর হালকা স্ক্র্যাচ দেওয়া হয়। এরপর সেই স্থানের উপরে সাকশন কাপ ব্যবহার করে হিজামা সম্পন্ন করা হয়।
হিজামা কি বিজ্ঞান সম্মত?
প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থা কিংবা প্রচলিত চিকিৎসা বিজ্ঞান এটাকে বাতিল, অকার্যকর বা ক্ষতিকর বলে না বরং সমর্থন করে। এটি বিজ্ঞান সম্মত কিনা তা আরো স্পষ্টভাবে জানতে পারবেন “হিজামা কিভাবে কাজ করে” শিরোনামের অধিনে আলোচনা থেকে।
বহু দেশেই এ চিকিৎসাটি এখন করা হচ্ছে এবং প্রসিদ্ধ ও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে UK ও USA তে এ চিকিৎসার গুরুত্ব বুঝতে পেরে এর উপর রীতিমত হিজামা রিসার্চ সেন্টার করে রিসার্চ করা হচ্ছে। ক্যানসারের মত মরণ ঘাতক অসংক্রামক রোগের চিকিৎসাও সম্ভব সুলভ-মূল্যের এ চিকিৎসা দ্বারা।
হিজামার মাধ্যমে শরীরের বিষাক্ত বর্জ্য পানি বের করে ফেলা হয় যার ভেতর থাকে CPS, CRS and pathogens যার প্রকৃত উপকারিতা অনেক গুণ বেশি। যা সকল রোগ সারানোর একক ভূমিকা পালন করে। এর কোন সাইড ইফেক্ট ও নেই যদি তা expert (পারদর্শী বা অভিজ্ঞ) দের দ্বারা করানো হয়।
আধুনিক গবেষণা হিজামা নিয়ে বিস্ময়কর সব তথ্য দিচ্ছে। যা যা আল্লাহর রাসূল ১৪০০ শত বছর আগে বলে গেছেন সেগুলোরই বৈজ্ঞানিক প্রমাণ মিলছে বর্তমানের রিসার্চ পেপার গুলো থেকে।
হিজামার উপর গবেষণা প্রাপ্ত উপাত্ত বলে পৃথিবী তে এরকম আর দ্বিতীয় কোন চিকিৎসা নেই যা একই সাথে এত রোগের চিকিৎসা করে। হিজামা একই সাথে সংক্রামক ও অসংক্রামক উভয় ধরনের অসংখ্য রোগের চিকিৎসা।
হিজামা কিভাবে কাজ করে?
★ টক্সিন বা দুষিত-রক্ত রোগের জন্য দায়ী জীবাণু প্লাজমা বা ফ্লুইডের সাথে বের করে নিয়ে আসা হয়। যা শরীর থেকে রোগের জন্য দায়ী জীবাণু সরিয়ে ফেলে। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে ও রক্ত পরিষ্কার রাখে, শরীর থেকে টক্সিন বা বিষাক্ত জৈব-রাসায়নিক বর্জ্য নিষ্কাশন করে।
★ লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম সক্রিয় করে।
★ বড় রক্তনালী পরিষ্কার করে এবং রক্ত সঞ্চালন সক্রিয় করে।
★ হিজামা টিস্যু থেকে বিষ মুক্ত করতে সহায়তা করে।
★ লিম্ফ্যাটিক গ্রন্থি ও রক্ত নালী পরিষ্কার করে বিশেষ করে পায়ের পাতার, যাহা পরবর্তীতে সারা দেহে ছড়িয়ে পরে, ইহা দেহে থেকে যাওয়া ঔষধের পরিমাণও দেহ থেকে বের করে দেয়।
★ দেহের অভ্যন্তর (রিফ্লেক্স জোন) এর প্রতিক্রিয়ার অবস্থা সক্রিয় ও উদ্দীপ্ত করে, ফলে আক্রান্ত অঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মস্তিস্কের মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।
★ দেহের ভিতরে শক্তি চলাচলের পথ পরিষ্কার করে জীবনী শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে-৫০০০ বছর আগে চীন ও জাপানীরা এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে।
★ রোগীর মানসিক অবস্থার উন্নতি ঘটায়। এতে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি হয়। ঔষধের প্রতি দেহের দ্রুত সারা নিশ্চিত করে এবং আল্লাহর ইচ্ছায় রোগী দ্রুত সুস্থ্য হয়ে ওঠে। ইত্যাদি।
সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে এই চিকিৎসা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত এবং একে উত্তম চিকিৎসা বলা হয়েছে, সুতরাং এর জন্য আর কোনো ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ এর প্রয়োজন নেই। অতএব এতে অবশ্যই শিফা আছে ইনশাআল্লাহ।
দূষিত রক্ত (Toxin) কি?
টক্সিন শরিরের নিরব ঘাতক।টক্সিন হল জৈব বিষ যা মানব দেহে প্রতি মুহূর্তে তৈরি হয়,আবার শরিরের নিজস্ব প্রতিরোধ ব্যবস্থায় মল, মূত্র,ঘাম এবং নিঃশ্বাসের সাথে টক্সিন বের হয়ে যায়।যদি উৎপন্ন বর্জ্যের পরিমান নির্গত বর্জ্যের থেকে বেশি হয় তবে কিছু পরিমান এই দূষিত দেহে জমতে জমতে টক্সিনে পরিনত হয়।হজমে সমস্যা থাকলে,মলত্যাগে সমস্যা হলে,ঘাম না হলে,পরিমিত পানি পান না করলে শরিরে টক্সিন জমতে শুরু করে বা টক্সিন উৎপন্ন হওয়া সহজ হয়ে যায়।
টক্সিন শরিরের কোষগুলোকে দূর্বল করে দেয়। যার ফলে আমরা অল্পতেই অসুস্থ হয়ে পড়ি।প্রতিদিন আমাদের শরীরে বিভিন্ন ভাবে এই টক্সিন গুলো উৎপন্ন হয়,যেমনঃ খাবার খাওয়ার মাধ্যমে,বাহিরের ভাজাপুড়া,মাছে বা ফলে থাকা ফরমালিন,পানিতে থাকা আয়রন বা আর্সেনিক,ধুমপানের অভ্যাস থাকলে,বায়ূ দুষণের কারনে আমাদের শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে আমাদের দেহে প্রবেশ করছে সীসা,অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদি এর মত ক্ষতিকারক বস্তু সমুহ।
মোটকথা প্রায় সকল মানব দেহেই টক্সিন বিদ্যমান,কারো পরিমানে কম অথবা বেশি।হিজামা/কাপিং এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট পয়েন্ট থেকে ঐ সমস্যা লুকিয়া থাকা টক্সিনগুলো বের করে ফেলা হয়।যার ফলে আপনি হবেন সুস্থ,সবল এবং শক্তিশালী।এই জন্যই সুস্থ অবস্থায় প্রতি চার মাস অন্তর হিজামা/কাপিং করা উত্তম।
হিজামা নিয়ে কিছু হাদিস
১/ হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত : রাসূল (সা) বলেছেন, “জিবরীল (আ) আমাকে জানিয়েছেন যে, মানুষ চিকিৎসার জন্য যতসব উপায় অবলম্বন করে, তম্মধ্যে হিজামাই হল সর্বোত্তম।” আল-হাকিম, হাদীছ নম্বর : ৭৪৭০
২/ হযরত হুমাইদ (রা) থেকে বর্ণিত: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
তোমরা যেসব পদ্ধতিতে চিকিৎসা করাও হিজামা সেগুলোর মধ্যে উত্তম ব্যবস্থা অথবা (বলেছেন) এটি তোমাদের ঔষধের মধ্যে অধিক ফলদায়ক’। মুসলিম হা/৩৯৩০।
৩/ আছেম ইবনে ওমর বিন ক্বাতাদা থেকে বর্ণিত আছে যে, জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) অসুস্থ মুকান্নাকে দেখতে যান। এরপর তিনি বলেন, আমি প্রত্যাবর্তন করবো না, যতক্ষণ না তুমি হিজামা লাগাবে। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই এর (হিজামার) মধ্যে নিরাময় রয়েছে’। বুখারী হা/৫৬৯৭।
৪/ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মি‘রাজে যাওয়ার সময় তিনি ফিরিশতাদের যে দলের নিকট দিয়ে অতিক্রম করেছেন তারাই বলেছেন, ‘আপনি অবশ্যই হিজামা করাবেন’। তিরমিযী, হা/৩৪৬২।
৫/ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, মি‘রাজের রাত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন যে, এই রাতে ফিরিশতাদের যে দলের সম্মুখ দিয়েই তিনি যাচ্ছিলেন তারা বলেছেন, ‘আপনার উম্মতকে হিজামার নির্দেশ দিন’। ইবনু মাজাহ হা/৩৪৭৯; তিরমিযী হা/২০৫২; মিশকাত হা/৪৫৪৪, সনদ ছহীহ।
৬/ হযরত আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন কেউ হিজামা করতে চাইলে সে যেন আরবি মাসের ১৭, ১৯ কিংবা ২১ তম দিনকে নির্বাচিত করে। রক্তচাপের কারণে তোমাদের কারো যেন মৃত্যু না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবে। সুনানে ইবনে মাজাহ, হা/৩৪৮৬
৭/ খালি পেটে হিজামাই সর্বোত্তম, এতে শেফা ও বরকত রয়েছে এবং এর মাধ্যমে বোধ ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়(ইবনে মাজাহঃ৩৪৮৭)
৮/ জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, নবী করিম (সা.)-এর (পায়ে) যে ব্যথা ছিল, তার জন্য তিনি ইহরাম অবস্থায় হিজামা লাগিয়েছিলেন। (নাসায়ি, হাদিস : ২৮৫২)
৯/ গরম বৃদ্ধি পেলে হিজামার সাহায্য নাও,কারন কারো রক্তচাপ বৃদ্ধি পেলে তার মৃত্যু হতে পারে(৭৪৮২)
হিজামা কেন করবেন?
হিজামা শব্দের অভিধান থেকেই বুঝা যায় হিজামার মাধ্যমে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করে রোগকে কমিয়ে আনা যায় এবং বিভিন্ন অর্গানকে ডিটক্স করে অর্গানের কার্যক্ষমতা পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়।
আমরা জানি সব ধরনের মেডিসিন নেওয়ার ফলে সেগুলো আমাদের কিডনি ও লিভার হয়ে বাই পাস করে। অতিরিক্ত অথবা দীর্ঘ সময় ধরে যেকোনো মেডিসিন নেওয়ার ফলে আস্তে আস্তে আমাদের কিডনি, লিভার ও আরো বিভিন্ন অর্গান তাদের কার্যকর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং একসময় বিভিন্ন ডিজিজে আক্রান্ত হয়। প্রপার ডায়াগনোসিসের মাধ্যমে হিজামা করলে আস্তে আস্তে মেডিসিন নেওয়ার প্রয়োজন কমে আসে, সাথে সাথে কিডনি, লিভার, হার্টের মতো বিভিন্ন অর্গান গুলো সুস্থ থাকে এবং এদের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
তাছাড়া প্রাকৃতিকভাবে প্রতিনিয়ত আমাদের দেহে মেটাবলিক বাই প্রোডাক্ট তৈরি হচ্ছে। এগুলো আমাদের লোমকূপ দিয়ে ঘামের মাধ্যমে, মল-মুত্রের মাধ্যমে এমনকি শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে দেহ থেকে নিষ্কাশিত হয়। কিন্তু কখনো কখনো নিয়মিত এক্সারসাইজ না করলে, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করলে, ঠিকমতো খাবারদাবার না খেলে, পরিমিত ঘুম না হলে, তাছাড়া আরো বিভিন্ন কারণে মেটাবলিক বাই প্রোডাক্ট গুলো দেহ থেকে নিষ্কাশিত হতে পারে না। ফলে এগুলো বিভিন্ন অর্গানে ও ত্বকের নিচে জমা হয়ে অর্গানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, শরীরের বিভিন্ন স্থানে পেইন সৃষ্টি করে ও টিউমার এবং ক্যান্সার সেল তৈরি করে।
এছাড়াও বয়স বাড়ার সাথে সাথে মেটাবলিক বাই প্রোডাক্ট গুলো শরীরের বিভিন্ন মাসল ও টিস্যুর মধ্যে জমা হয়ে ছোট ছোট রক্তনালী (Capillary), ও নার্ভ (Neuron)-কে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে রক্তনালী গুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত প্রবাহিত হতে পারে না।
তাছাড়া আমরা জানি রক্ত উপাদান গুলোর মধ্যে লোহিত রক্ত কণিকা (RBC) সংখ্যা বেশি থাকে। আর এগুলোর আয়ুষ্কাল ৯০-১২০ দিন। ৯০-১২০ দিন পর এই মৃত্যু লোহিত রক্ত কণিকা গুলো রক্তনালিতে জমা হয়ে রক্তের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে, ফলে রক্ত প্রবাহে বাঁধার সৃষ্টি হয়।
হিজামার মাধ্যমে রোগ অনুযায়ী শরীরের বিভিন্ন স্থানে নেগেটিভ প্রেসার ক্রিয়েট করে ঐ স্থান থেকে কৈশিক জালিকা, আন্তঃকোষীয় লাসিকাজালী থেকে ফোটায় ফোটায় রক্ত (টক্সিস সাবটেন্স কনটেইনিং ব্লাড) ও রস (প্লাজমা বা ফ্লুইড) এর মাধ্যমে মেটাবলিক বাই প্রোডাক্ট গুলো দেহ থেকে নিষ্কাশিত করা হয়। ফলে ঐ স্থানে স্নায়ুর চাপ, ব্যথা ও তাপ গ্রহণকারী রিসেপ্টর গুলো উত্তেজিত হয় ও আন্তঃকোষীয় ব্যথা সৃষ্টিকারী রাসায়নিক উপাদান (ইউরিয়া, ইউরিক অ্যাসিড ইত্যাদি) গুলো নিষ্কাশিত হয়। অচল বা বন্ধ হয়ে যাওয়া শিরা গুলো পুনরুজ্জীবিত হয় এবং কৃত্রিম প্রদাহের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সাম্যাবস্তা সৃষ্টি হওয়ায় কোষের সতেজতা ও কার্যক্ষমতা বৃষ্টি পায়। মাংসপেশিতে রক্ত প্রবাহ দ্রুততর হয় ফলে শরীর সতেজ, উদ্যমী ও শক্তিশালী হয়।
মধ্য প্রাচ্যের দেশ গুলোতে হিজামা এন্টি এইজিং ট্রিটমেন্ট (বয়স ধরে রাখতে) ও স্ট্যামিনা বাড়াতে বহুল জনপ্রিয় চিকিৎসা ব্যবস্থা।
হিজামা যেমন রোগাক্রান্ত রোগীর জন্য একটি প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি, তেমনি সুস্থ মানুষের জন্য রোগ প্রতিরোধক হিসেবেও কাজ করে।
যেহেতু এটি একটি সম্পূর্ণই প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি তাই এর কোনো সাইড ইফেক্ট নেই। এবং এই চিকিৎসা ব্যবস্থায় কোনো মেডিসিনও নেওয়ার প্রয়োজন নেই। এটি কম সময়ে, সল্প খরচে দীর্ঘস্থায়ী একটি চিকিৎসা পদ্ধতি।
তাছাড়াও কেন হিজামা করবেন জানেন?
রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে হিজামা নিতেন ও এই ব্যাপারে সাহাবি-সাহাবাদেরও উৎসাহিত করতেন।
এক কথায় হিজামা হচ্ছে একটি চিকিৎসা পদ্ধতি, এমনকি উত্তম চিকিৎসা পদ্ধতি এবং প্রাকৃতিক চিকিৎসা, নববী চিকিৎসা, তাই আপনি যেকোনো রোগ থেকে সুস্থতার জন্য এই হিজামা চিকিৎসা নিতে পারেন।
হিজামার জন্য যোগাযোগ করুন – Sunnah Cure Prophetic Healing & Cupping Centre Banasree, Dhaka
হিজামা যেসব রোগের জন্য উপকারী
১. মাথা ব্যথা, ঘাড় ব্যথা, পিঠের ব্যথা, কোমর ব্যথা পায়ের ব্যথা, জয়েন্ট পেইন (আর্থ্রাইটিস) সহ সকল ধরনের ব্যথায়।
২. চুল পড়া, মুখে ব্রণ, এলার্জি, এ্যাজমা, ব্রংকাইটিস, COPD, সাইনুসাইটিস, টনসিলাইটিস, ফ্যারিঞ্জাইটিস, নিউমোনিয়া, লাং ইনফেকশান।
৩. হাই কোলেস্টেরল, হাই ট্রাইগ্লিসারাইড, হার্ট ব্লক, হাইপ্রেশার, অতিরিক্ত ওজন।
৪. গ্যাস্ট্রাইটিস (গ্যাসের সমস্যা), বুক জ্বালা পোড়া, পেটের ব্যথা, ফিসার, পাইলস, ফ্যাটি লিভার, IBS বা কোষ্টকাঠিন্য ।
৫. এটি হেপাটাইটিস বি এর ভাইরাল লোড কমায়।
৬. ঘুমের সমস্যা, স্ট্রেস, পারকিনসন্স ডিজিজ, মানসিক সমস্যা।
৭. স্পোর্টস ইনজুরি
৮. Erectyle dysfunction, ejaculatory dysfunction, অন্যান্য যৌন সমস্যা।
৯. থাইরয়েডের সমস্যা।
১০. Gout
১১. রক্তশুন্যতা, থ্যালাসেমিয়াতে আয়রন ওভারলোড কমাতে
১২. PCOS বা ওভারিয়ান সিস্ট, বন্ধ্যাত্ব সমস্যা, মাসিকের সমস্যা সহ মেয়েদের অন্যান্য সমস্যা
১৩. অস্টিওপোরোসিস, রিউমাটয়েট আর্থ্রাইটিস সহ আরও অনেক রোগের জন্য হিজামা খুবই উপকারী ও উত্তম একটি চিকিৎসা।
মাথায় হিজামা
মাথায় হিজামা করে যে সকল সমস্যায় উপকার হয়ঃ
১। সাধারণ মাথাব্যাথা
২। মাইগ্রেন
৩। উচ্চরক্তচাপ (Hypertension)
৪। ঘুমের ব্যাঘাত (insomnia)
৫। স্মৃতিভ্রষ্টতা (Memory loss)
৬। ঘাড়ে ব্যাথা
৭। মাংসপেশীর ব্যাথা (muscle strain), মাসল পুল
৮। থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা
৯। সাইনুসাইটিস
১০। দাঁত/মুখের/জিহ্বার সংক্রমন
১১। মুটিয়ে যাওয়া (obesity)
১২। ভার্টিব্রাল ডিস্ক প্রোল্যাপ্স/ হারনিয়েশান
১৩। মানসিক সমস্যা (Psychological disorder)
১৪। চুল পড়া (Hair fall)
১৫। পারকিনসন্স ডিজিজ
১৬। কানের সমস্যা
১৭। স্পোর্টস ইঞ্জুরি (খেলোয়াড়, আর্মি, কনট্যাক্ট স্পোর্টস)
১৮। ব্রেইন ডিজিজ ও ডিজঅর্ডার
১৯। ব্রন
২০। অনিয়মিত মাসিক ও অন্যান্য মেয়েলী সমস্যা
২১। এডিকশান/ ডিপেন্ডেন্সি (স্লিপিং পিল, ড্রাগস, কফ সিরাপ, জর্দা, সিগারেট, এলকোহল ও অন্যান্য নেশাদ্রব্য)
২২। TMJ Dysfunction Syndrome
২৩। প্যারালাইসিস (স্ট্রোক, মেরুদন্ডে আঘাত, গিয়েন বারে সিন্ড্রোম, ফেসিয়াল প্যারালাইসিস বা বেল’স পলসি প্রভৃতি)
২৪। ক্যান্সারের ব্যাথা নিয়ন্ত্রন
২৫। Erectile Dysfunction (ED), ও অন্যান্য যৌন সমস্যা
২৬। হরমোনাল সমস্যা
২৭। চোখের সমস্যা
২৮। সিজোফ্রেনিয়া
…এবং আরও অনেক রোগ।
হিজামা কিভাবে এত রোগের জন্য কাজ করে?
অনেকেই বলতে পারেন: “হিজামা কিভাবে এত রোগ ভাল করে?”
হিজামা শরীরের একটি বেসিক মেকানিজম এক্টিভেট করে। তা হচ্ছে এন্ডোজেনাস নাইট্রিক অক্সাইড পাথওয়েকে বুস্ট করে দেয়। এই নাইট্রিক অক্সাইডকেই বিজ্ঞানীরা মিরাকল মলিকিউল বা হিলিং মলিকিউল নাম দিয়েছেন। যেকোন ডিজিজের নাম এর সাথে effect of nitric oxide লিখে গুগোল সার্চ করলেই আমদের কথা সত্যতা পাবেন।
হিজামাতে যে লাইট স্ক্র্যাচ হয় এতে ক্যাপিলারি ইনজুরি হয়, এবং এই ক্যাপিলারির এন্ডোথেলিয়াম থেকেই নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি হয়।
রোগ ভালো হতে কয়টা সেশন লাগে?
রোগ অনুযায়ী কয়েক সেশন হিজামা নিতে হয়। অনেকে সুন্নাহ সম্মত চিকিৎসা বলে এক বা দুই সেশন নিয়েই হতাশ হয়ে পড়েন। কিন্তু রোগের প্রকারভেদ ও স্থায়িত্ব এর জন্য একের অধিক সেশন নিতে হতে পারে।
পৃথিবী জুড়ে বর্তমানে যেসব রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে অথচ বিজ্ঞান কোন কার্যকরী ফল দিতে পারেনি ( neck pain, frozen shoulder, immune disorder, hypertension, low back pain, IHD-ischemic heart disease, Asthma etc) সেসব রোগের একক চিকিৎসা হিসেবেও হিজামা ব্যবহৃত হচ্ছে। রোগের মেয়াদ যত দিনের চিকিৎসার জন্য তো সেরকম সময়ই লাগবে।
কতদিন পরপর হিজামা করা যায়?
হিজামার জন্য যেসব আচড় কিংবা স্ক্র্যাচ দেয়া হয়,
সেটা যদি ঠিক ভাবে হয় তবে তা প্রাইমারি হিলিং মেকানিজম মানে ২৪ ঘন্টার মধ্যে হিল (heal) হয়ে যাবে।
তাই প্রয়োজনে ২৪ ঘন্টা পরই একই স্থানে ইনশাল্লাহ হিজামা করা যাবে।
তই আমরা সমস্যা অনুযায়ী আমরা বিভিন্ন বিরতি দিয়ে হিজামা করার পরামর্শ দিয়ে থাকি,
এইক্ষেত্রে দেখা যায় কারও ৭ দিন,
কারও ১৫ দিন আবার কারও বা মাসে একবার।
একজন সুস্থ মানুষ কতদিন পর পর হিজামা নিতে পারবে?
সুস্থ মানুষের জন্য বছরে একবার, মতান্তরে দুই বা তিনবার হিজামা করা ভাল। এটা রোগের প্রতিষেধক (Prophylaxis) হিসেবে কাজ করে।
সুস্থ ব্যাক্তি হিজামা করলে একদিকে যেমন সুন্নাহ্ আদায় হবে, অন্যদিকে শরীরে ব্লাড সার্কুলেশন দ্রুততর হবে, শরীর সতেজ ও সুস্থ থাকবে, রোগে আক্রান্ত কম হবে। মোটকথা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, ইং শা আল্লহ্।
জাদুর চিকিৎসায় হিজামা
ইবনুল কায়্যিম বলেন— রাসূল (ﷺ) যাদুতে আক্রান্ত হওয়ার পর হিজামা করেছিলেন। আর এটা হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ চিকিৎসা, যদি সঠিকভাবে তা প্রয়োগ করা যায়।” [যাদুল মা’আদ ৪/১২৫-১২৬]
হিজামা ও কিছু কমন জিজ্ঞাসা
জী লাগবে । তবে এতটাই সামান্ন যে সেটাকে ব্যাথা না বলে অসস্তি বলা যায়।
১ থেকে ১.৫ ঘন্টা।
না। দাগ একদমিই থাকবেনা ইনশাআল্লাহ।
কালার নরমাল হবে ৩-৭ ঘন্টাএবং দাগ যাবে ৩-৭ দিনের মধ্যে ইনশাআল্লাহ্।
যে কোন রোগিকে কম পক্ষে দুইটা তবে রোগ ও তার উপশন অনুযায়ী সেশন সংখ্যা ভিন্ন হয়।
না কাটলেও করা যায় তবে চুল কাটলে/ছোট থাকলে ভালো।
ডায়বেটিসের রোগীরা কী হিজামা করতে পারবে?
অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন ডায়বেটিসের রোগীরা হিজামা করলে কোনো সমস্যা আছে নাকি? কোনো কাঁটা ছাড়া হবে নাকি ইত্যাদি!
উত্তর হচ্ছে, না ডায়বেটিসের রোগীরা হিজামা করলে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ হিজামায় বড় ধরণের কোনো কাঁটা-ছেড়া করা হয় না, হিজামাতে যে লাইট স্ক্র্যাচ হয় এতে ক্যাপিলারি ইনজুরি হয় এবং এই ক্যাপিলারির এন্ডোথেলিয়াম থেকেই নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি হয়।
যার ফলে হিজামা রোগীদের রক্তে সুগারের মাত্রা কমে আসতে সাহায্য করে। হিজামা যেকোনো রোগের ক্ষেত্রেই উপকারী, এর কোনো সাইড ইফেক্ট নেই, কোনো ক্ষতি নেই যদি অভিজ্ঞ থেরাপিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী করা হয়।
হিজামা করার ক্ষেত্রে কিছু দিক নির্দেশনা
১। নিয়তকে একেবারে পরিশুদ্ধ রাখা যে শিফা/রোগ মুক্তি শুধু মাত্র আল্লাহ্সুবহানাহু ওয়া ওয়ালার পক্ষ থেকে আশে।
২। সকালে বাসি মুখে খালি পেটে হিজামা করা উওম ।
৩। অন্য খাবারের অন্তত তিন ঘণ্টা পর হিজামা করা ভালো।
৪। গোসল করে হিজামা করাটা ভালো, তবে গোসলের তিন ঘণ্টা পর হিজামা করতে হবে।
৫। হিজামা করার আগের দিন সঙ্গম না করা ভালো
৬। স্বাভাবিক অবস্থায় আরবি মাসের ১৭, ১৯ ও ২১ তারিখ রোজ সোম মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার হিজামা করানো উওম। এছাড়াও সপ্তাহের মোম, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার হিজামা করা ভালো।
উল্লেখ্য, তারিখ ও দিনের মধ্যে বিরোধ হলে তারিখকে অগ্রাধিকার দিবে। আর জরুরি প্রয়োজনে যে কোন দিন যে কোন সময়েও হিজামা করা যাবে।
আপনি অসুস্থ অথচ হিজামার দ্বারা সুস্থ হওয়ার চেষ্টা করছেন না! ফলে আপনি এমন কিছু মিস করছেন যা আসলে আপনার করা উচিত নয়। এটা এমন এক মিরাকল যা একমাত্র উপকৃত ব্যক্তি ব্যতীত আর কেউ এর মিরাকলিক ক্ষমতা সঠিকভাবে অনুধাবন করতে সক্ষম নন। হিজামা করুন, সুস্থ থাকুন।