বদনজর শুধু মানুষের উপরেই নয়— গবাদি পশু, , গাছপালা, ইত্যাদিতেও লাগতে পারে।
অনেকেই মনে করে শুধু মানুষের উপর নজর লাগে! এটা ভুল ধারণা- বদনজর শুধু মানুষের উপরেই নয়- বদনজর-হাসাদ যেমন মানুষের উপর লাগে তেমনি প্রাণী, গাছপালা, ফলফলাদি, কারখানা,ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর, ক্ষেতখামার, কাজকর্ম, গাড়ি, আয় রুজি, ক্রয়- বিক্রয় ইত্যাদির উপরও লাগতে পারে।
গ্রামে অনেক সময় হয়তো দেখে থাকবেন কোনো গাছে ভালো বা প্রচুর ফল আসছে আর কেউ বলেছে আয়/হায় আল্লাহ/হায়! গাছে এত ফল এসেছে! বা গাছে তো অনেক ফল হয়েছে, কিংবা কেউ ফল চুরি করে নিয়ে গেছে ইত্যাদি। আর কয়েদিদের মধ্যেই ফল নষ্ট হওয়া বা ঝরে পড়া শুরু হয়ে গেছে, বা ফলের মধ্যে চোখের মত হয়ে কিছু পরিমাণ পঁচে যায় কিংবা এর পরের বছর থেকে আর তেমন ফল আসছে না।
অনেক সময় দেখবেন গ্রামে মা-চাচিরা পিঠা বানাচ্ছেন বা রান্না করছেন তখন কেউ এসে দেখে ফেললে তখন পিঠা আর আগের মতো হয়না।
কোরআন ও হাদিসে এর প্রমাণ বিদ্যমান রয়েছে –
১) হযরত সুহাইম ইবনে নাওফাল থেকে বর্ণিত তিনি বলেন একবার আমরা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ এর নিকটে ছিলাম- এমন সময় একটি গ্রাম্য মেয়ে তার মনীবের কাছে আসলো , তখন আমরা তাঁর ( ইবনে মাসউদ এর ) সামনে একটি মুসহাফ পেশ করছিলাম। মেয়েটি এসে বলল আপনি এখানে বসে আছেন আর অমুক ঘোড়ার বাচ্চাটিকে বদনজর দিয়েছে। ফলে সেটি সবকিছু ছেড়ে দিয়ে ঘরে ঘোরাঘুরি করছে। উঠুন এবং একজন রাক্বির তালাশ করুন।
অতঃপর আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ বললেন রাক্বি খুঁজতে হবেনা, নিচের দোয়া টি পড়ে নাকের ডান ছিদ্রে চারটি এবং বাম ছিদ্রে তিনটি ফুঁ দাও।
لا بأس ، أذهب البأس ، رب الناس ، اشف أنت الشافي ، لا يكشف الضر إلا أنت
বর্ণনা করী বলেন অতঃপর তিনি চলে গেলেন এবং এসে বললেন আপনি আমাকে যা আদেশ করেছেন আমি তা বলেছি। আর আমি এখানে আসলাম এর পুর্বেই সে মলত্যাগ করছে , প্রস্রাব করছে এবং খাচ্ছে। ( রেফারেন্স আল মুসান্নাফ ১০/২৮০ , আত তামহীদ ৬/২৩৯ , আল ইসতিজকার ৮/৪০২)
২) বনী ইসরাইলের দুই ভাইয়ের একজন কাফের ছিল। নিজের আত্ম-অহংকার বা হাসাদের কারণে তার বাগানের সমস্ত সম্পদ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। বিস্তারিত ঘটনা পড়ুন সূরা কাহাফ ৩২-৪৪ নং আয়াতে। ৩৯ নং আয়াতে এর প্রতিকার বা চিকিৎসাও বর্ণিত হয়েছে, সেখানে আছে যে মাশাআল্লাহ লা-ক্বুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ বললে ধ্বংস হতো না।
পশুপাখি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, গাছপালা ও ক্ষেত খামার ইত্যাদিতে বদনজর লাগলে যেভাবে রুকইয়াহ করবেন –
মানুষ ও বিভিন্ন প্রাণী ও জিনিসের রুকইয়ার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। কেননা এইগুলোর কারণ বা সবব এক তাই রুকইয়াহ ও একই।
ক)- যদি জানা যায় কার নজর লেগেছে তাহলে তার অযুর পানি নিবেন যদি সম্ভব হয়। এরপর সেই পানি দিয়ে পশুপাখিকে বা কোনো অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গোসল করিয়ে দিবেন বা ধৌত করে দিবেন। এমনিভাবে গাছপালা ও সবকিছুই ধৌত করে দিবেন বা পানি ছিটিয়ে দিবেন।
খ)- আর জানা না যায় কার নজর লেগেছে বা তার অযুর পানি আনা সম্ভব না হয় তাহলে বদনজর ও হাসাদ সংক্রান্ত নিচের দুআ ও সূরা গুলো পড়ে আক্রান্ত ব্যক্তি, পশুপাখি ও গাছপালায় ফুঁ দিবেন।
এই সূরা ও দুয়াগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে সেই পানি ঘরে, অফিসে, দোকানে, গাছে, খামারে ইত্যাদিতে ছিটিয়ে দিবেন। পশুপাখি হলে পান করাবেন। খাবারের সাথে মিশিয়ে দিবেন। গাছের গোড়ায় পানি ঢেলে দিবেন। ইংশা আল্লাহ বদনজর কেটে যাবে।
১.
أُعِيْذُكُمْ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّةِ ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ
উ”ঈযুকুম বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মাহ। মিং কুল্লি শাইত্বা-নিও- ওয়াহা-ম্মাহ। ওয়ামিং কুল্লি “আঈনিল্লা-ম্মাহ।
২.
بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللَّهُ يَشْفِيكَ، بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ
বিসমিল্লা-হি আরকীক। মিং কুল্লি শাইয়িই ইউ’যীক। মিং শাররি কুল্লি নাফসিন আও “আইনি হাসিদ। আল্লা-হু ইয়াশফীক। বিসমিল্লা-হি আরকীক।
৩.
بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ، وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ، وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ، وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ
বিসমিল্লা-হি ইউবরীক। ওয়ামিং কুল্লি দা-ঈই ইয়াশফীক। ওয়ামিং শাররি হাসিদিন ইযা- হাসাদ। ওয়া শাররি কুল্লি যী “আঈন ।
৪.
اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبْ الْبَاسَ، اشْفِ وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا
আল্লা-হুম্মা রাব্বান না-স। আযহিবিল বা’স । ইশফি ওয়াআংতাশ শা-ফী। লা-শিফাআ ইল্লা-শিফাউক। শিফাআল লা-ইউগা-দিরু সাক্বামা-।
৫. সূরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সূরা মু’মিনুন ১১৫-১১৮ নং আয়াত, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস।
পরপর কয়েকদিন এভাবে রুকইয়াহ করবেন। ব্যবসা-বাণিজ্য, আয় রোজগার ও রিজিকের উপর বদনজর ও জ্বীন জাদু এবং রুকইয়াহ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত লেখা সামনে আসবে ইনশাআল্লাহ।
গ)- আর কোনো কিছুর উপর নিজের নজর হাসাদ যেন না লাগে এর জন্য বরকতের দোয়া করা ও মাশাআল্লাহ ইত্যাদি বলা।