১) নিজের নজর হাসাদ যেন অন্য কারো বা কোনো কিছুর ওপর না লাগে এজন্য কোনো নেয়ামত দেখলে বা কারো ভালো কিছু দেখলে বা শুনলে কিংবা আপনি নিজে তার ব্যপারে কিছু বললে তখন আল্লাহর প্রশংসা ও বরকতের দুআ করুন। যেমন – ماشاء الله لا قوة إلا بالله ইত্যাদি।
২) আর নিজেকে অন্যের বদনজর হাসাদ থেকে বাঁচানো জন্য নিচের বিষয়গুলো খেয়াল করুন –
ক) ফেসবুক বা এরকম সোশ্যাল মিডিয়ায় অনর্থক শো-অফ না করা। অহেতুক ছবি বা ঘটনা পোস্ট দিয়ে নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের ছবি মানুষকে দেখিয়ে না বেড়ানো। অর্থাৎ সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা।
খ) কোনো নেয়ামত বা সফলতা লাভ করার পূর্বে, কোনো প্রয়োজন পূরণ হওয়ার পূর্বে বা কোনো কাজ ইত্যাদি সম্পন্ন হওয়ার পূর্বে তা গোপন রাখুন। অযথা নিজের কোনো বিষয়ে কারো সামনে বলে বেড়াবেন না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিজের প্রয়োজন পূরণ হওয়ার ক্ষেত্রে ‘সেটা গোপন এবং লুকায়িত রাখার’ মাধ্যমে সাহায্য লাভ করো। কেননা, প্রতিটা নিয়ামত লাভকারী হিংসার স্বীকার হয়ে থাকে। (তাবারানী-আওসাতঃ২৫২৯)
গ) সকাল-সন্ধ্যার হেফাজতের মাসনুন আমল গুলো গুরুত্বসহকারে পালন করা। যেন ভুলেও কোনদিন মিস না হয়।
ঘ) ছেলে মেয়ে উভয়রই অবশ্যই শরীয়তের বিধান অনুযায়ী পর্দা করা। ছেলে হলে দৃষ্টি অবনত রাখা। আর মেয়ে হলে মাহরাম ও গায়রে মাহরাম মেনে পর্দা করা।
ঙ) মাঝেমধ্যে সম্ভব হলে প্রতিদিন সূরা ফালাক নাস ও হাদিসে বর্ণিত দুআ গুলো পড়ে কিছুক্ষণ রুকইয়াহ করা। অর্থাৎ রুকইয়াহ’র নিয়তে তিলাওয়াত করা। পাশাপাশি পানিতে ফুঁ দিয়ে পান করা এবং গোসলের পানিতে মিশিয়ে গোসল করে নেওয়া।
بِسْمِ اللهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ العَلِيمُ
বিসমিল্লা-হিল্লাযি লা-ইয়াদুররু মা‘আসমিহি শাইউং ফিলআরদি ওয়ালা-ফিসসামা-ই, ওয়াহুওয়াস সামি‘উল ‘আলিম।
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
আ‘উযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মা-তি, মিং-শাররি মা-খলাক্ব।
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ
উচ্চারণ: আউযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মাহ। মিং কুল্লি শাইত্বা-নিন- ওয়াহা-ম্মাহ। ওয়ামিং কুল্লি আইনিন লা-ম্মাহ। (এই দুআটি পড়ে রাসূল সাঃ তাঁর দুই নাতী হাসান হুসাইন রাঃ কে রুকইয়াহ করে দিতেন। সুবাহানাল্লাহ)
চ) অন্য কেউ আপনার বা আপনার কোনো কিছুর প্রশংসা করলে করলে, ভালো বললে তখন তিনি যিকির বা আল্লাহর প্রশংসা বা দুআ না করলে আপনি উচিত হবে যিকির, দুআ ও আল্লাহর প্রশংসা করা। উদাহরণস্বরুপ: কেউ বলল, আপনার ছেলেটা তো অনেক কিউট!’ আপনি বলুন,‘আলহামদুলিল্লাহ।’
সম্ভব হলে তার ওযুর পানি দিয়ে গোসলের পানিতে মিশিয়ে ছেলেকে গোসল করিয়ে নিন বা আপনার ব্যপারে বলে আপনি গোসল করে নিন। কিংবা দ্রুত রুকইয়াহ করে নিন।
৩) নিজের নজর যেন নিজের ও নিজের কোনো কিছু যেমন সন্তানাদী ও সম্পদ ইত্যাদির ওপর না লাগে এজন্য অহেতুক অন্যের সামনে নিজের কোনো নিয়ামতের আলোচনা না করাই উত্তম।
দ্বিতীয়ত প্রসঙ্গক্রমে আলোচনা করলেও কথার মাঝে যিকর করতে হবে। যেমন: ‘আলহামদুলিল্লাহ, এ বছর ব্যবসায় কোনো লস যায়নি’,‘আল্লাহর রহমতে আমার ছেলে বেশ ভালো রেজাল্ট করেছে’, ‘মা-শা-আল্লাহ!
৪) আর বাচ্চাদের সুরক্ষার জন্য কর্তব্য হচ্ছে, মাঝেমধ্যেই সূরা ফালাক, নাস পড়ে বাচ্চাদের গায়ে ফুঁ দেওয়া, যেমনটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও করেছেন। বদনজর থেকে বাঁচতে তাবীজ-কবচ অথবা নজর টিপের দরকার হবেনা। আল্লাহই হেফাজত করবেন।
এছাড়াও বদনজর হাসাদ নষ্টের নিয়তে মাঝেমধ্যে বদনজরের রুকইয়াহ করুন এবং বদনজরের রুকইয়াহর গোসল করুন।
আর অধিক পরিমাণে সালামের প্রচলন করুন, ইনশাআল্লাহ হিংসা দূর হয়ে যাবে।
সর্বোপরি আল্লাহর কাছে দুআ করুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,‘তোমরা বদনজর থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাও। কেননা বদনজর সত্য।’ (ইবনে মাজাহঃ ৩৫০৮)
দ্রষ্টব্য: অন্যের জন্য পড়লে أَعُوذُ (আউযু) এর জায়গায় أُعِيْذُكَ (উইয়ীযু) বলা ভালো, দু’জনের ক্ষেত্রে أُعِيْذُكُمَا আর অনেকজনের জন্য পড়লে أُعِيْذُكُمْ বলা ভালো। তবে সাধারণভাবে ‘আউযুবিকালিমাতিল্লাহ…’ বললেও সমস্যা নেই, এক্ষেত্রে নিয়ত করে নিতে হবে, কার জন্য পড়ছেন।