পড়ালেখা নষ্টের জাদুর রুকইয়াহ

বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত জাদুগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে পড়ালেখা ব্যহত করা বা নষ্টের জাদু। কিছু অতি হিংসুক মানুষ এই ধরনের জাদু করে থাকে। যখন তারা দেখে যে, তাদের ছেলেমেয়ে পড়ালেখায় ভালো না, আর আত্মীয় বা কারো সন্তানাদী খুবই মেধাবী ও পড়ালেখায় ভালো, অথবা যখন দেখে যে তার ছেলেমেয়ে দেখতে অতটা সুন্দর না হয়, কিন্তু অন্যের ছেলে মেয়ে পড়ালেখায় ভালো, দেখতেও মোটামুটি সুন্দর; তখন হিংসায় জ্বলে উঠে। 

তাদের ক্যারিয়ার নষ্ট করার জন্য; যেন ভালো চাকরিবাকরি না হয়, ভালো জায়গায় বিয়ে না হয় এরকম বিভিন্ন উদ্দেশ্য পড়ালেখা নষ্টের জাদু করার জন্য অভিশপ্ত কবিরাজ যাদুকরের কাছে যায়। আর সেই কবিরাজ তাদের কাছে যাকে জাদু করাতে চায় তার কলম, খাতা, বই বা নোটবুক কিংবা তার ছবি ইত্যাদি এনে দিতে বলে। তারপর কবিরাজ এইগুলো দিয়ে জাদু করে। এই জাদুতেও সাধারণত জ্বীনের আশ্রয় নেয়া হয় ক্ষতি করার জন্য। 

বদনজর হাসাদের কারণেও পড়ালেখা ব্যহত হয়। কখনও জ্বীনও হিংসায় জ্বলে ওঠে কেউ ভালো পড়ালেখা করলে। ফলে এই জ্বীন শয়তান পড়ালেখা নষ্ট করার জন্য ভিকটিম কে আছর করে। বিশেষ করে মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি জ্বীন শয়তানের হিংসা বেশি থাকে। কারণ কেউ মাদ্রাসায় পড়ুক, কুরআন হাদীস পড়ুক, হাফেজ হোক এটা শয়তানরা চায়না। এজন্যই দেখা যায় অনেক ছাত্র মাদ্রাসায় যেতে চায় না। এমনকি পিঠালেও যেতে চায় না, মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে বাসায় চলে।

পড়ালেখা নষ্টের জাদুর লক্ষণসমূহ-

১। পড়ালেখায় হঠাৎ অবনতি, স্মৃতিশক্তি অস্বাভাবিক লোপ পাওয়া।
২পড়তে বসলেই ঘুম আসা, মাথাব্যথা শুরু হওয়া।
৩। পড়ার সময় অস্থিরতা লাগা, পড়তে ইচ্ছা না হওয়া।
৪। পড়তে বসলে ক্লান্তিবোধ, অলসতা বেড়ে যাওয়া।
৫। কন্ঠস্বর ভার ভার হয়ে যাওয়া, স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে পরিবর্তন হয়ে যাওয়া।
৬। ক্লাশে বা পড়ার ক্ষেত্রে অমনোযোগিতা কাজ করা।
৭। পড়ার সময় বেশি বেশি হাম/হায়/হামি আসা
৮। পড়ার সময় শরীর চুলকানি, চাবানি কামরানি
৯। পড়তে বসলে মাথা গরম হয়ে যাওয়া
১০। পড়তে বসলেই sphocation বা শ্বাস কষ্ট হওয়া।
১১। পড়তে বসলে মাথা ঘুরানো , মাথায় কষ্ট হওয়া।
১২। পড়ার সময় বুকে চাপ ব্যথা অনুভব হওয়া।
১৩। মেজাজ খিটমিটে স্বভাবের হয়ে যাওয়া।
১৪। পড়া সহজে মুখস্থ না হওয়া, আর মুখস্থ করলেও পড়া মনে না থাকা।
১৫। পরিক্ষা আসলেই অসুস্থ হয়ে যাওয়া।
১৬। পরিক্ষার হলে যাওয়ার পূর্বে মাথাব্যথা শুরু হয়ে যাওয়া বা কোনো ধরনের অসুস্থবোধ করা।
১৭। পরিক্ষার পূর্বে সেন্সলস বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
১৮। ভালোভাবে পড়ে গেলেও উত্তর মনে না থাকা, উত্তরের শুরু, মাঝে কিংবা শেষের দিকে ভুলে যাওয়া।
১৯। পরিক্ষা দিতে গেলে ঘাড়, পিঠ ব্যথা করা, অস্বস্তি লাগা।
২০। পরিক্ষার হলে আগের মতো দ্রুত লিখতে না পারা।
২১। আশানুরূপ রেজাল্ট ভালো না হওয়া।
ঘুমের মধ্যে ভয়ংকর স্বপ্ন দেখা।
২২। স্বপ্নে দেখা যে, পরিক্ষা দিতে যেতে পারছেন না, লিখতে পারছেন না, খাতা জমা দিতে পারছেন না।
২৩। কলম হারিয়ে যাওয়া বা ভেঙ্গে যাওয়ার স্বপ্ন দেখা, ইত্যাদি।

এই লক্ষণগুলো শুধু যে জাদুর কারণেই হয় তা নয়, বরং পড়ালেখায় বাধা সৃষ্টিকারী জ্বীন এবং পড়ালেখার উপর বদনজর হাসাদের কারণেও হতে পারে। এগুলোর সবগুলোই যে একজনের মধ্যে থাকবে এমন নয়। এখান থেকে কয়েকটা লক্ষণ মিলে গেলে জ্বীন, জাদু বা বদনজর হাসাদের সমস্যা থাকার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

পড়ালেখা নষ্টের জাদুর রুকইয়াহ

যদি আপনার সাথে এগুলোর কিছু লক্ষণ মিলে যায় বা পড়ালেখা সংক্রান্ত সমস্যা ফিল করেন নিম্নোক্ত নিয়মে রুকইয়াহ করুন।

১. প্রথমে সাতদিন বদনজরের রুকইয়াহ করবেন। এরপরও সমস্যা আছে মনে হলে সিহরের রুকইয়াহ করুন বা নিচের পদ্ধতিতে রুকইয়াহ করুন।

২. সিহরের আয়াত গুলো প্রতিদিন একবার পাঠ করবেন। সব আয়াত পড়া সম্ভব না হলে সিহর নষ্টের কমন আয়াত গুলো প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট বা ৪৫ মিনিট করে ১/২ বার তিলাওয়াত করবেন। 

৩. কুরআনে “ইলম এবং হিকমাহ” সংক্রান্ত আয়াত গুলো সম্ভব হলে প্রতিদিন একবার পড়বেন। সবগুলো আয়াত সম্ভব না হলে অন্তত নিচের আয়াত গুলো পড়বেন—

সূরা নাহাল ৪৩
সূরা ত্বা-হা- ১১৪
সূরা ইউনুস- ৫
সূরা কাহাফ- ৬৬
সূরা নামল- ১৫
সূরা কাসাস- ১৪
সূরা আনকাবুত- ৪৩, ৪৯
সূরা সাবা- ৬
সূরা ফাতির- ২৮
সূরা যুমার- ৯
সূরা জুমআহ- ২
সূরা মুজাদালাহ- ১১
সূরা আলাক্ব- ১-৫

৪. উপরোক্ত আয়াত এবং সিহর নষ্টের কমন আয়াত গুলো ৩/৭ বার করে পড়ে পানি ও মধুতে ফুঁ দিয়ে রাখবেন। প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস পানি ও এক চা-চামচ মধু মিশিয়ে খালি পেটে খাবেন। আর উক্ত পানি থেকে দৈনিক ৩-৪ বা আরো বেশি পরিমাণে পান করবেন।

৫. অলিভ অয়েলে ফুঁ দিয়ে মাথায় ও ব্যথার জায়গায় ব্যবহার করবেন।
৫. সূরা ইয়াসিন, সফফাত ও বাকারাহ সম্ভব হলে প্রতিদিন বা মাঝেমধ্যে পড়বেন।

৬. সেই সাথে অবশ্যই হিজামা করবেন। বিশেষ করে মাথায়, হাতে ও পায়ে। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই যাদুর খাদেম জ্বিন শয়তান মাথা, মস্তিষ্ক, পেট ও পায়ে অবস্থান করে। যাতে রোগী প্যারালাইজড ও বুঝবুদ্ধিহীন হয়ে যায়।

৭. জ্বীন-জাদু থেকে নিরাপত্তা ও হেফাজতের মাসনুন আমল গুলো প্রতিদিন গুরুত্বসহকারে পালন করবেন।

আরও কিছু পরামর্শ

যাদের এমন সমস্যা এবং পড়া মনে থাকে না তাঁরা পড়তে বসার পূর্বে নিম্নোক্ত আমলগুলো করে নিবেন— মেধাশক্তি বা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং পড়া মনে থাকবে—ইনশাআল্লাহ্।

১। পড়তে বসার পূর্বে ওযূর করে বসবেন ।
২। পড়া শুরু করার পূর্বে- দরুদ শরীফ ১/৩ বার
৩। আউযুবিল্লাহ.. বিসমিল্লাহ.. ১ বার
৪। রাব্বি যিদনী ইল্.মা ৭ বার
৫। সূরা ত্বা-হা ২৫-২৮ নং আয়াত ৩ বার
৬। সূরা বাকারাহ ৩২ নং আয়াত ৩ বার
৭। ইক্বারা বিসমি রাব্বিকাল্লাঝি খালাক্ব— ৩ বার
৮। সূরা ক্বিয়ামাহ ১৭ নং আয়াত ৭ বার
৯। সূরা আ’লা ৬,৭,৮ নং আয়াত ৩ বার
১০। দরুদ শরীফ ১/৩ বার

পড়ার মাঝে যদি মাঝেমধ্যে ৪/৫ মিনিট রেস্ট করেন বা বিরতি দেন তখন আবার সবগুলো পড়া জরুরী নয়। বরং আপনার সময় ও সুবিধা মতো দুয়েকটি আমল করে নিলেই হবে। যেমন ৩,৪ ও ৮ নং পয়েন্টের আমল গুলো করে নিতে পারেন।

এতদাসত্ত্বেও পড়ার মাঝে ঘুম ঘুম ভাব বা অনিহা, অস্থিরতা বা কোনো অসুবিধা মনে হলে তখনই নিম্নোক্ত আয়াত ও দোয়াগুলো বারবার পড়ে নিবেন।

> সূরা ফালাক বিশেষ করে ৪ নম্বর আয়াত

> আঊযুবি কালিমাতিল্লাহিত তাম্মাহ, মিন কুল্লি শাইত্বনিন ওয়া হাম্মাহ, ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাহ্

পরিক্ষার হলে প্রবেশের পরও পরিক্ষা শুরু হওয়ার পূর্বেই উপরোক্ত আমল গুলো করে নিবেন। আর মাঝেমধ্যে সূরা ফালাক ও উল্লেখিত দুআটি পড়তে পারেন। তাহলে পরিক্ষার হলে উত্তর স্মৃতি থেকে হারিয়ে যাবে না ইনশাআল্লাহ।

এভাবে ১৫-২০ দিন বা ১ মাস রুকইয়াহ করলে সুস্থ হয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ। এরপরও যদি সমস্যা থাকে তাহলে একজন অভিজ্ঞ রাক্বীর সরণাপন্ন হয়ে পরামর্শ নিন এবং সরাসরি রুকইয়াহ করুন।

শেয়ার করুন -

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top