শিশুদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল থাকে অর্থাৎ বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, এজন্য তাদের অনেক বেশি অসুখবিসুখ হয়। বদনজরও বাচ্চাদের ওপর বেশি লাগে। বাচ্চাদের ওপর খুব দ্রুত বদনজর লেগে যায়। বড়দের তুলনায় বাচ্চারা বদনজরে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। বাচ্চা বদনজরে আক্রান্ত হলে তাদের মধ্যে বিভিন্ন লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা যায়।
শিশুরা বদনজরে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষ্মণসমূহ
১. হঠাৎ করেই বাচ্চা মায়ের বুকের দুধ খেতে না চাওয়া।
২. রাতে না ঘুমানো, ঘুমালেও খুব সামান্য।
৩. অস্বাভাবিক অতিরিক্ত কান্নাকাটি করা
৪. হঠাৎ করে গায়ের রঙ পরিবর্তন হয়ে যাওয়া।
৫. মায়ের কোলে গেলেই কান্না করা।
৬. সুস্থ থাকলেও হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে যাওয়া।
৭. একেরপর এক বিভিন্ন অসুখ বিসুখ লেগেই থাকা।
৮. খাবার খেতে না চাওয়া, হঠাৎ করে খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেওয়া।
৯. বয়সের তুলনায় কথা বলতে না পারা।
১০. আগে ভালোভাবে কথা বললেও এখন তোতলায়।
১১. অকারণে ভয় পাওয়া, দুঃস্বপ্ন দেখা।
১২. ঘরের কোনো দিকে বা দেয়ালের কোনো দিকে বা জানালার দিকে তাকিয়ে থাকা।
১৩. একা একা কথা বলা, হাসা, খেলাধুলা করা।
১৪. রেগে গেলে শরীরে অস্বাভাবিক শক্তি চলে আসে।
১৫. মাঝেমাঝে বড়দের মত কন্ঠে কথা বলে
১৬. শিশু তার সমবয়সী বা কারো সাথে খেলতে না চাওয়া।
১৭. রাগ-জেদ বেড়ে যাওয়া বা অতিরিক্ত রাগ করা।
১৮. মাত্রাতিরিক্ত দুষ্টামি করা। দিন দিন দুষ্টুমির পরিমান বেড়ে যাওয়া।
১৯. অটিজমে আক্রান্ত হওয়া।
২০. হুট করেই বা অকারণে স্বাস্থ্যহানি হওয়া, দূর্বল হয়ে যাওয়া।
২১. লেখাপড়াতে আগ্রহ না থাকা, লেখাপড়া করতে না চাওয়া।
এই সমস্যা গুলোই সাধারণত বাচ্চাদের বেশিরভাগ হয়ে থাকে। বাচ্চাদের এই সমস্যা গুলো শারীরিক কারণেও হতে পারে আবার বদনজর, জ্বীন ও জাদুর কারণেও হতে পারে। শারীরিক সমস্যা হলে অভিজ্ঞ শিশুবিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাবেন বা মেডিক্যাল চিকিৎসা নিবেন। আর যদি বদনজর, হাসাদ, জ্বীনের আছর বা জাদুর সমস্যা থাকে তাহলে রুকইয়াহ করাবেন। প্রয়োজনে রাক্বীর সরণাপন্ন হবেন।
এখন কথা হচ্ছে বুঝবেন কিভাবে যে, মেডিক্যাল সমস্যা নাকি বদনজরের সমস্যা?
প্রথমত- জ্বীন, জাদু ও বদনজরের কিছু লক্ষণ আছে এমন যা থেকে প্রায় নিশ্চিত বোঝা যায় তার সমস্যা আছে। যেমন-
বারবার স্বপ্নে খাওয়া। কেউ যদি বারবার বা স্বপ্নে খেতে দেখে আর এর ফলে কোনো ফিল করে , যেমন পেট ব্যথা করা, পেট ভরা ভরা লাগা, অল্প খেলেই পেট ভরে যাওয়া, বমি ভাব হওয়া, বমি হওয়া, মুখে খাবারের স্বাদ অনুভব হওয়া, কোমর ব্যথা করা, কোষ্টকাঠিন্য, লোজ মোশন ইত্যাদি; তাহলে নিশ্চিত তার জ্বীন বা যাদু ও জ্বীনের সমস্যা এবং পেটে যাদু আছে।
এমনিভাবে স্বপ্নে বারবার উপর থেকে নিচে পড়ে যেতে দেখা, কিংবা আকাশে উড়তে দেখা, জ্বর হওয়া কিন্তু থার্মোমিটারে না ওঠা ইত্যাদি এরকম আরো অনেক লক্ষণ আছে যা দ্বারা বোঝা যায় বদনজর হাসাদ জাদু ও জ্বীন আছরের সমস্যা আছে।
কোনো এক বা একাধিক সমস্যা বারবার বা প্রায়ই হওয়া এটাও অনেক বড় একটি উপায় প্যারানরমাল সমস্যা আছে কিনা বুঝার।
দ্বিতীয়ত— হঠাৎ বা অস্বাভাবিক অথবা কোনো অবস্থা বা দিক বিবেচনায় সমস্যা অনুভব করা। যেমন- বাচ্চা মায়ের বুকের দুধ খেতে চায় না, খেতে কান্না করে কিন্তু অন্যকারো বুকের ঠিকই খায়। বাচ্চা মায়ের কোলে থাকতে চায় না, কিন্তু বাবার কোলে যেতে আগ্রহী বা বাবার কোলে গেলেই আর কান্না করে না।
বাচ্চা আগে ঠিকঠাক কথা বললেও হঠাৎ করে দিন দিন কথা কম বলে, বা কথায় জড়তা আসে, তোতলায়। সুস্থ থাকলেও হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ইত্যাদি
বাচ্চার সবকিছুই স্বাভাবিক। ঠিকঠাক ভাবেই খায়। আর কোথাও গেছেন বা কেউ আসলো আপনার বাসায়, এমন সময় আপনার বাচ্চা খাচ্ছে এটা কেউ দেখলো এবং মনে মনে মুগ্ধ হলো বা দেখে বললো দেখছো বাচ্চাটা কত সুন্দর খাচ্ছে আর এরপর থেকেই আপনার বাচ্চা তেমন খাওয়া দাওয়া করছে না। তখন বুঝতে হবে যে তার বদনজর লেগেছে।
এটা হচ্ছে কোনো ডাক্তার বা রাকির কাছে যাওয়া বা পরীক্ষা কিংবা ডায়াগনোসিস করা ছাড়াই বুঝার উপায়।
তৃতীয়ত— কেউ যদি ডাক্তারের কাছে যায়, মেডিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কিন্তু কোনো সমস্যা বা সমস্যার কারণ ধরা না পড়ে, রিপোর্ট নরমাল আসে, বা ডাক্তার বলে এরকম একটু সমস্যা আছে তবে এটার জন্য তো এই সমস্যা হওয়ার কথা নয় কিংবা ওষুধ খেয়েও সমস্যা ভালো না হয় তাহলে এর মানে হচ্ছে মূলত তার প্যারানরমাল সমস্যা আছে।
মেডিকেল টেস্টে সমস্যা ধরা না পাড়া, রিপোর্ট নরমাল আসা, মেডিসিন ব্যবহার করেও সমস্যা ভালো না হওয়া বদনজর, জ্বীন ও জাদু আক্রান্ত হওয়ার সবচেয়ে বড় একটি উপায়। কারণ প্যারানরমাল সমস্যায় আক্রান্ত হলে মেডিকেল পরীক্ষায় সমস্যা বা সমস্যার কারণ ধরা পড়ে না আর ওষুধ খেয়েও রোগ ভালো হয়না।
সুতরাং যদি বাচ্চার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু দেখেন বা হঠাৎ করেই কোনো সমস্যা হয় কিংবা মেডিক্যাল টেস্টে সমস্যা ধরা না পড়ে বা ওষুধ খেয়েও ভালো না হয় তাহলে ধরে নিতে পারেন বাচ্চার বদনজর লেগেছে বা বদনজর বা জ্বীন-জাদুর কারণে সমস্যা গুলো হচ্ছে।
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বদনজরে আক্রান্ত হওয়ার কমন একটি লক্ষণ হচ্ছে অতিরিক্ত দুষ্টামি করা। এটা হয়তো অনেকেই মানতে চাইবেন না, কিন্তু বাস্তবতা এটাই। তবে কিছু বাচ্চার ক্ষেত্রে এটা ভিন্ন হতে পারে। আর যেকোনো বাচ্চা বদনজর বা প্যারানরমাল সমস্যায় আক্রান্ত হলেই যে তার মধ্যে এই লক্ষণটি থাকবে বিষয়টা এমন নয়। অর্থাৎ যে অতিরিক্ত দুষ্টামি করে সে বদনজরে আক্রান্ত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
এখন দু-একটি হাদিস উল্লেখ করছি-
উম্মুল মু’মিনীন উম্মে সালমা রাদিআল্লাহু থেকে বর্ণিতঃ-
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ ـ رضى الله عنها ـ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم رَأَى فِي بَيْتِهَا جَارِيَةً فِي وَجْهِهَا سَفْعَةٌ فَقَالَ “ اسْتَرْقُوا لَهَا، فَإِنَّ بِهَا النَّظْرَةَ ”.
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ঘরে একটি বালিকা মেয়ের চেহারায় দাগ বা মলিনতা দেখলেন। তখন তিনি বললেনঃ তাকে ঝাড়ফুঁক করাও, কেননা তার উপর নযর লেগেছে। (বুখারী ৫৭৩৯, মুসলিম ৫৬১৮।)
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ، قَالَ وَأَخْبَرَنِي أَبُو الزُّبَيْرِ، أَنَّهُ سَمِعَ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ، يَقُولُ رَخَّصَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لآلِ حَزْمٍ فِي رُقْيَةِ الْحَيَّةِ وَقَالَ لأَسْمَاءَ بِنْتِ عُمَيْسٍ ” مَا لِي أَرَى أَجْسَامَ بَنِي أَخِي ضَارِعَةً تُصِيبُهُمُ الْحَاجَةُ ” . قَالَتْ لاَ وَلَكِنِ الْعَيْنُ تُسْرِعُ إِلَيْهِمْ . قَالَ ” ارْقِيهِمْ ” . قَالَتْ فَعَرَضْتُ عَلَيْهِ فَقَالَ ” ارْقِيهِمْ ” .
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাযম পরিবারকে সাপের ছোবলে আঘাতপ্রাপ্ত রোগীকে ঝাড়ফুঁক করার অনুমতি দেন এবং আসমা বিনতু ‘উমায়স (রাঃ) -কে বললেন, আমার ভাই [জা‘ফার (রাঃ)] এর ছেলে-মেয়েদের কি হলো যে, তাদের শরীর আমি দুর্বল দেখতে পাচ্ছি? তাদের কি অভাব দেখা দিয়েছে? তিনি (আসমা) বললেন, না কিন্তু তাদের উপর তাড়াতাড়ি কুনযর লেগে যায়। তিনি বললেন, তুমি তাদের ঝাড়-ফুঁক কর। তিনি বললেন, তখন আমি তাঁর নিকট (দু‘আটি) উপস্থাপন করলাম। তিনি বললেন, (ঠিক আছে) তুমি তাদের ঝাড়ফুঁক করে দাও। (মুসলিম, হাদিস নং ৫৬১৯)
এখানে খেয়াল করে দেখুন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বাচ্চা মেয়ের চেহারায় দাগ বা মলিনতা দেখেই বুঝে গিয়েছেন যে মেয়েটির বদনজর লেগেছে। জাফর রাদিআল্লাহু আনহু এর সন্তানাদীর জীর্ণশীর্ণ ও দূর্বল শরীর দেখে রাসূল সাঃ জিজ্ঞেস করলেন যে তাদের অভাব দেখা দিয়েছে কিনা, ঠিকমতো খেতে না পেরে এরকম হয়েছে কিনা। তখন তাদের মা আসমা রাঃ বললেন জি না, এরকম না , তবে তাদের ওপর খুব দ্রুত বদনজর লেগে যায়। অর্থাৎ বদনজরের কারণে তাদের এই অবস্থা। তখন রাসূল সাঃ তাদের রুকইয়াহ করানোর আদেশ করলেন।
বাচ্চাদের বদনজর বা প্যারানরমাল সমস্যা আছে কিনা বুঝার নিশ্চিত কোনো উপায় আছে কী? রুকইয়াহ করে কি বুঝা যাবে?
দুই-তিন বছর পর্যন্ত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সাধারণত নিশ্চিত বুঝার কোনো উপায় নেই, রুকইয়াহ করেও বুঝা কঠিন। কারণ তারা কিছু প্রকাশ করতে পারে না বা বুঝে না। আর বাহ্যিক রিয়েকশ যা কিছু হয় যেমন কান্না করা বা ঘুমিয়ে যাওয়া এইগুলো যেহেতু ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কমন ব্যাপার তাই বদনজরের সমস্যা আছে কিনা বুঝার নিশ্চিত কোনো উপায় নেই।
লক্ষণীয় যে, বুঝার নিশ্চিত কোনো উপায় নেই বলতে রাকিও বুঝতে পারবে না এমন না। সাধারণত রাকি অভিজ্ঞতার আলোকে অনেক সময় বা অভিজ্ঞ রাকি হলে তিনি বুঝতে পারেন। কিন্তু বাহ্যিক ভিন্ন কোনো ইফেক্ট যেহেতু হয় না আর বাচ্চাও কথা বলতে পারে না তাই তার পরিবার বুঝতে না ও পারেন জ্বীন জাদু বদনজর সম্পর্কে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে। এজন্য পরিবারকে নিশ্চিত করে বুঝানোর বা বুঝার কোনো উপায় নেই।
৩ থেকে ৫ বছরের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অনেক সময় বুঝা যায়। রুকইয়াহ করলে বিভিন্ন ইফেক্ট হয়, যেমন- প্রচুর হায় আসা, ঘুম আসা, দুষ্টামি করা, অস্থিরতা করা, কান্নাকাটি করা, চেহারা বা শরীরে লাল, কালো বা হলুদ দাগ পড়ে যাওয়া, শরীর দূর্বল লাগা, মেজমেজ করা, হাত ঝাকি বা কাপাকপি করা ইত্যাদি। সবগুলোই যে হবে এমন নয়। এক দুই টা বা দুই তিনটা লক্ষণ প্রকাশ হতে পারে বা আরো বেশি।
এক্ষেত্রেও অনেক সময় অনেক পরিবারের লোকজন বুঝতে পারেন না বা নিশ্চিন্ত হতে পারেন না। বিশেষ করে যারা বর্তমান সাইন্সে বেশি আগ্রহী বা রুকইয়াহ সম্পর্কিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা কম। তারা অনেকেই মনে করেন দূর এই গুলো কিছু না। মেডিকেল সমস্যা, রুকইয়াহ করে কিছু হবেনা। ইত্যাদি।
আর ৫ বছরের বেশি বয়সের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সাধারণত মোটামুটি স্পষ্টভাবেই বুঝা যায়। যেহেতু তারা মোটামুটি বুঝে , কথা বলতে পারে, নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে। এজন্য রুকইয়াহ করলে কি ইফেক্ট হচ্ছে না হচ্ছে তা বলতে পারে। আর ছোট বাচ্চাদের তুলনায় এদের ইফেক্ট ও একটু বেশি হয়। বাহ্যিকভাবেও বিভিন্ন রিয়েকশন হয় বা অপ্রকাশ্যভাবে কি ইফেক্ট হচ্ছে তা অনেক সময় বাহ্যিকভাবে বুঝা যায়। আর তারা তো বলতেই পারে ইফেক্ট হচ্ছে নাকি হচ্ছে না এবং কি কি ইফেক্ট হচ্ছে।
এখন আসুন তাহলে করণীয় কি তা জানি
যদি বাচ্চার বদনজর, হাসাদ বা প্যারানরমাল সমস্যা থাকে তাহলে রুকইয়াহ করলে সুস্থ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। আপনি বুঝতে পারেন বা না পারেন সেটা ব্যবহার না।
আপনাকে বুঝতে হবে বা বিশ্বাস করতে হবে যে বদনজরের সমস্যা হতে পারে, বাচ্চার যদি সমস্যা থাকে রুকইয়াহ করলে ভালো হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ, অতএব রুকইয়াহ করতে হবে। আর যে সব বাচ্চারা একটু বড় তাদের ক্ষেত্রে তো অনেক সময় বুঝাই যায় তাই সমস্যা থাকলে রুকইয়াহ করতে হবে। ইনশাআল্লাহ আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে যাবে।
দ্বিতীয়ত বাচ্চার না শুধু বরং যে কারোরই বদনজর বা প্যারানরমাল সমস্যা থাকলে রুকইয়াহ করলে তা থেকে তো অবশ্যই ইনশাআল্লাহ, যদি শারীরিক মানসিক কোনো সমস্যা থাকে তবুও তার জন্যও রুকইয়াহ করতে পারেন, ইনশাআল্লাহ উপকৃত হবে। কারণ কুরআনে রয়েছে আরোগ্য ও নিরাময়। এখানে আল্লাহ তাআলা নির্দিষ্ট কোনো রোগের জন্য কুরআন আরোগ্য তা বলেন নি। তবে সমস্যা যখন প্রাকৃতিক হবে তখন রুকইয়াহ’র পাশাপাশি প্রাকৃতিক চিকিৎসা বা মেডিক্যাল চিকিৎসাও নিতে হবে।
বাচ্চার সমস্যা থাকলে মা’য়েরও সমস্যা থাকতে পারে
অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় বাচ্চার সমস্যা থাকলে মা’য়ের অথবা বাবার কিংবা উভয়েরই সমস্যা থাকে। বিশেষ করে মা’য়ের। অর্থাৎ যেসব বাচ্চারা বদনজর বা জ্বীন-জাদুতে আক্রান্ত হয় তাদের বাবা-মায়ের কারো বা উভয়েরও জ্বীন জাদু বা বদনজরের সমস্যা থাকে। মূলত তারা বাবা-মা থেকেই আক্রান্ত হয়। যেসব মা-বাবার সমস্যা থাকে তাদের সন্তানাদীও আক্রান্ত হয়ে যায়। বদনজর বা জ্বীন-জাদু আক্রান্ত অধিকাংশ বাচ্চাদের মা-বাবারও সমস্যা থাকে। আক্রান্ত সব বাচ্চারই যে মা-বাবাও আক্রান্ত এমন নয়। বরং বাচ্চারা স্বতন্ত্রভাবেও আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু যে সব বাবা-মায়ের সমস্যা আছে তাদের বাচ্চাদেরও সমস্যা আছে বা থাকবেই। কিংবা এখন আক্রান্ত না থাকলেও পরবর্তীতে হয়ে যাবে।
এটাকে বলে বংশীয় বা বংশগত যাদু। আরবীতে বলে সিহরুন মাউরুস। বদনজর হলে বলে আইন মাউরুসাহ। এই সমস্যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলতে থাকে। এটা আশিক জ্বীনের সমস্যার চেয়েও জটিল। এর প্রভাবে যেসব রোগব্যাধি হয় সেগুলো কে ডাক্তাররা বলে বংশগত রোগ। এইগুলোর সঠিক কোনো চিকিৎসা মেডিক্যালে নেই। আসলে বাস্তবতা হচ্ছে যাদের কে ডাক্তাররা এসব বলে তাদের অধিকাংশই বংশীয় প্যারানরমাল সমস্যায় আক্রান্ত।
সুতরাং বাচ্চার সমস্যা দুই ভাবে হতে পারে। ১. স্বতন্ত্রভাবে ২. বংশগতভাবে। অতএব বাচ্চার বদনজর বা প্যারানরমাল সমস্যা থাকলে মা-বাবার সমস্যা আছে কিনা সেটাও দেখা উচিত। যদি মা-বাবা বা কারো সমস্যা থাকে তাহলে বাচ্চার সুস্থতার জন্য তাদেরও রুকইয়াহ করা আবশ্যক।
বিশেষ জ্ঞাতব্যঃ
রুকইয়াহ শুরু করার পূর্বে কিছু বিষয় জেনে নেওয়া জরুরী। অন্যথায় ভুল পদ্ধতিতে বা অসম্পূর্ণ ভাবে রুকইয়াহ করলে পরিপূর্ণ ফলাফল নাও পেতে পারেন।
১) বাচ্চাদের গায়ে কোন তাবিজ-কবচ, নজর লাগার টিপ থাকলে নষ্ট করে ফেলবেন। ঘরে তাবিজ থাকলেও সবগুলো নষ্ট করে ফেলবেন। কিংবা না থাকলে এইগুলো ব্যবহার করবেন না। কোন সমস্যা না থাকলেও এসবের কারণে সমস্যা তৈরি হয়। এইগুলো উল্টো আরো জ্বীন দাওয়াত দিয়ে আনার মাধ্যম।
২) ঘরে কোন প্রাণীর ছবি, পুতুল, বাদ্যযন্ত্র রাখবেন না। খেলার জন্যও পুতুল দিবেন না। এমন কিছু যেন না থাকে, যা রহমতের ফেরেশতা প্রবেশে প্রতিবন্ধক। পরিবারের কোনো ছবি থাকলেও সেগুলো লুকিয়ে রাখবেন।
৩) একই যায়গায় বা একইভাবে বসে থাকতে বাধ্য করবেন না। এমন কোন কাজ করবেন না, যাতে সে ঘাবড়ে যাবে বা অস্বস্তি বোধ করে। রুকইয়াহ করার সময় বাচ্চা যেন পরিপূর্ণ আরামদায়ক ও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কোলে নিয়ে হেঁটে হেঁটেও রুকইয়াহ করতে পারবেন।
৪) রুকইয়াহ’র সময় বাচ্চাদের কখনোই প্রহার বা মারধর করবেন না। জিন বা শয়তানের ব্যাপারে ভয়ও দেখাবেন না। প্রহার করলে বা ভয় দেখালে রুকইয়াহ না-ও করতে পারে। বরং ভয় না দেখিয়ে সাহস দিন। তার মন থেকে শয়তান জ্বিনের ভয় দূর করুন। গল্পে গল্পে আল্লাহর কালামের শ্রেষ্ঠত্ব এবং শয়তানদের দূর্বলতা বোঝান। তাকে বুঝান শয়ত্বান জ্বিন কিভাবে কুর’আনের ভয়ে পালিয়ে যায়।
৫) যদি বাচ্চা বয়সে বড় হয় আর জ্বীন হাজির হয়েই যায় এবং কথাও বলা শুরু করে, তাহলে ভয় পাবেন না এবং জ্বীনের সাথে অপ্রয়োজনীয় ও বেশি কথা বার্তা বলবেন না। জ্বীনকে “ইসলাম গ্রহণ করে বের” হয়ে যেতে বলবেন। আর যদি “ইসলাম” গ্রহণ করতে না চায়, তাহলে বলবেন যেন “চলে যায় এবং আর ফিরে না আসে।” জ্বিনের কোন গাল-গল্পই বিশ্বাস করবেন না, তাদের সাথে কোন বোঝাপড়াতেও যাবেন না।
৬) রুকইয়াহ করার জন্য নির্দিষ্ট কোন ধরাবাঁধা সময় নেই। কিন্তু আপনি যদি দেখেন কোন নির্দিষ্ট সময়ে বাচ্চার মধ্যে লক্ষণগুলো প্রকট হয় (যেমনঃ মাগরিবের পর), তাহলে সে সময়ে রুকইয়াহ করাটাই সবচেয়ে ভালো। অন্যথায় যে সময় বাচ্চা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, সে সময়ই রুকইয়াহ করবেন।
৭) যদি দুষ্টামির কারণে জাগ্রত অবস্থায় রুকইয়াহ করা না যায় তাহলে ঘুমিয়ে গেলে রুকইয়াহ করবেন। ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে গেলে তখন বুঝিয়ে-শুনিয়ে জাগ্রত অবস্থায়ও রুকইয়াহ করতে পারবেন। খুব বেশি সমস্যা হলে পাশাপাশি হিজামা করাবেন। ডাক্তারী সমস্যার জন্য অবশ্যই এর পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
৮) মাগরিবের ২০-৩০ মিনিট পূর্ব থেকে মাগরিবের ২০-২৫ মিনিট পর পর্যন্ত বাচ্চাদের নিয়ে বের হবেন না। মাগরিবের ২০মিনিট পুর্বে দরজা ও জানালা বিসমিল্লাহ বলে বন্ধ করে দিবেন এবং মাগরিবের ১৫-২০ মিনিট পর খুলে দিতে পারবেন যদি প্রয়োজন হয়। খোলার সময় বিসমিল্লাহ বলে খুলবেন।
৯) অভিভাবকদেরও হেফাজত বা সুরক্ষার সকাল-সন্ধ্যার আমলগুলো করা উচিত। বাচ্চাকেও সুরক্ষার আমলগুলো করাবেন। আর সে নিজে না করতে পারলে অন্য কেউ পড়ে ফুঁ দিয়ে দিবেন। বড় হওয়ার সাথে সাথে আস্তে আস্তে আমলগুলো শিখিয়ে দিবেন এবং নিজেকেই আমলগুলো করতে বলবেন। ছোট বেলা থেকেই যদি নিরাপত্তার আমলগুলো নিয়মিত করে তাহলে বড় আর আক্রান্ত হবেনা। ইনশাআল্লাহ।
১০) পরিবারের সবাই পাক-পবিত্র থাকার প্রতি গুরুত্ব দিন। অভিভাবকদের ফরজ, ওয়াজিব আমলগুলো ভালভাবে আদায় করা উচিত। আর ছোট থেকেই বাচ্চাকে মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। আর মেয়ে বাচ্চা হলে ঘরে নিজেদের সাথে নামাজ পড়ার অভ্যাস করুন।
১১) বাচ্চার কিছু সমস্যা বাবা কিংবা মায়ের কারনেও হতে পারে। তাই নিজেদেরও সমস্যা আছে কিনা যাচাই করে রুকইয়াহ করা আবশ্যক। বিশেষ করে মায়ের স্তন্যপান না করতে চাইলে মায়েরও উচিত রুকইয়াহ করা। সমস্যা না থাকলেও রুকইয়াহ করা উচিত। এতে বাচ্চার দ্রুত বেশি উপকার হবে, ইনশাআল্লাহ। এক্ষেত্রে বদনজরের সেলফ রুকইয়াহ করতে পারেন।
রুকইয়াহর ইফেক্টঃ
বাচ্চাদের রুকইয়াহ করলে অনেক সময় সাথে সাথে টয়লেট হতে পারে, বমি হতে পারে। এমন হলে ইনশাআল্লাহ দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে। আবার অনেক সময় জ্বর, সর্দি ইত্যাদি হতে পারে। অনেক সময় রুকইয়াহ করলে চেহারায় বা শরীরে লাল, হলুদ বা কালো দাগ হয়ে যেতে পারে। আবার রুকইয়াহ’র সময় খুব বেশি কান্নাকাটি করতে পারে। এমন হলে ভয়ের কিছু নেই। বরং রুকইয়াহ চালিয়ে যাবেন। নিয়মিত রুকইয়াহ করতে থাকলে সমস্যাও কমে আসবে আর ইফেক্টও কমে আসবে। দাগ হয়ে গেলেও তা কয়েকদিন পর এমনিতেই মিলিয়ে যাবে। কখনও কখনও কোনো ধরনের ইফেক্ট না হয়ে বরং তাৎক্ষণিক উন্নতিও টের পেতে পারেন। এটাও এক ধরনের রিয়াকশন। মোট কথা রুকইয়াহ করার পর যদি কোন অবস্থার অবনতি হয় তাহলে বুঝতে হবে রুকইয়াহ কাজ করা শুরু করেছে। তখন আরও ধৈর্য্যের সাথে যত্ন নিয়ে রুকইয়াহ চালিয়ে যেতে হবে পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। ভয় পাওয়ার বা ঘাবড়ানোর কিছু নেই।
আমার এক ক্লাসমেট এর ভাগিনার বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছিল এবং খুব বেশি দুষ্টামি করতো ও পড়ালেখা করতে চাইতো না। তারা ধারণা করলেন যে, বদনজর লেগেছে। তো আমি রুকইয়াহ করি জানতে পেরে আমার সাথে যোগাযোগ করেন। তখন আমি বলে দেই এভাবে এভাবে আধা ঘন্টা করে দৈনিক দুই বার রুকইয়াহ করেন। সাথে এটাও বলে দিয়েছি যে বিভিন্ন ইফেক্ট হতে পারে, খুব বেশি কান্নাকাটি করতে পারে, চেহারায় বা শরীরে দাগ প্রকাশ পেতে পারে। যদি এমন হয় তাহলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আর তখন রুকইয়াহও বন্ধ করবেন না বরং চালিয়ে যাবেন।
উনি আধা ঘন্টা রুকইয়াহ করেন। রুকইয়াহ’র সময় পুর্বে উল্লেখিত সেইম রিয়্যাকশন হয়। কল দিয়ে জানান যে রুকইয়াহ’র পুরো সময় কান্না করেছে, রুকইয়াহ অফ করে দেওয়ার পর আর কান্না করেনি এবং শরীরে বিভিন্ন জায়গায় দাগ পড়ে গেছে। তখন আমি বললাম এর মানে নিশ্চিত বদনজরের সমস্যা আছে। চিন্তার কিছু নেই। দাগগুলো এমনিতেই চলে যাবে। আরো এক সপ্তাহের মতো রুকইয়াহ করেন। এরপর ৫/৬ দিন রুকইয়াহ করেন। এরমধ্যে আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ হয়ে যায়। এরপর তার বোনের জীনের সমস্যার জন্য রুকইয়াহ করেন এবং মায়ের পুরো শরীরে ব্যথার জন্য হিজামা করেন। এখন আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো আছেন।
বাচ্চাদের বদনজরের রুকইয়াহ
বাচ্চারা সাধারণত বদনজরে আক্রান্ত হয় বেশি। এদের বেশিরভাগ সমস্যা বদনজরের কারণেই হয়ে থাকে। ছোট বাচ্চাদের জ্বীন আছরের সমস্যা হয় খুব কম। বাচ্চারা পাক পবিত্র থাকে বিধায় ৪-৫ বছরের আগে সাধারণত তাদেরকে জ্বীন আছর করতে পারে না, অর্থাৎ শরীরে প্রবেশ করতে পারে না। অভিজ্ঞতায় এমনটাই পেয়েছি। আর বড়দের তুলনায় বাচ্চাদের রুকইয়াহ বেশ সহজ। সুস্থও হয়ে যায় খুব সহজেই। কোনো বাচ্চার প্যারানরমাল সমস্যা হয়েছে মনে করলে নিম্নোক্ত নিয়মে রুকইয়াহ করুন। ইনশাআল্লাহ খুব সহজেই সুস্থ হয়ে যাবে।
১) রুকইয়াহ পদ্ধতি
বাবুর মাথায় হাত রেখে নিম্নোক্ত দুআ, সূরা ও আয়াত গুলো কয়েকবার করে পড়বেন এবং মাঝেমাঝে বা সবগুলো পড়া শেষে বাবুর গায়ে সামান্য থুথু মিশ্রিত ফুঁ দিবেন। হাতেও ফুঁ দিয়ে পুরো শরীর মুছে দিবেন। সকাল বিকাল দৈনিক দুইবার বা তিন চারবার এভাবে রুকইয়াহ করবেন।
১.
أُعِيْذُكُمْ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّةِ ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ
উ”ঈযুকুম বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মাহ। মিং কুল্লি শাইত্বা-নিও- ওয়াহা-ম্মাহ। ওয়ামিং কুল্লি “আঈনিল্লা-ম্মাহ।
২.
بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللَّهُ يَشْفِيكَ، بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ
বিসমিল্লা-হি আরকীক। মিং কুল্লি শাইয়িই ইউ’যীক। মিং শাররি কুল্লি নাফসিন আও “আইনি হাসিদ। আল্লা-হু ইয়াশফীক। বিসমিল্লা-হি আরকীক।
৩.
بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ، وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ، وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ، وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ
বিসমিল্লা-হি ইউবরীক। ওয়ামিং কুল্লি দা-ঈই ইয়াশফীক। ওয়ামিং শাররি হাসিদিন ইযা- হাসাদ। ওয়া শাররি কুল্লি যী “আঈন ।
৪.
امْسَحِ الْبَأْسَ رَبَّ النَّاسِ، بِيَدِكَ الشِّفَاءُ، لَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا أَنْتَ
ইমসাহিল বা’সা রাব্বান নাস, বিইয়াদিকাশ শিফা, লা কাশিফা লাহু ইল্লা আংতা।
৫.
اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبْ الْبَاسَ، اشْفِ وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا
আল্লা-হুম্মা রাব্বান না-স। আযহিবিল বা’স । ইশফি ওয়াআংতাশ শা-ফী। লা-শিফাআ ইল্লা-শিফাউক। শিফাআল লা-ইউগা-দিরু সাক্বামা-।
৫. সূরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সূরা মু’মিনুন ১১৫-১১৮ নং আয়াত, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস।
দৃষ্টি আকর্ষণঃ বাংলা বা অনারবী কোনো ভাষায় আরবীর বিশুদ্ধ উচ্চারণ সম্ভব নয়। তাই আরবী পড়তে পারে এমন কারো থেকে উচ্চারণ শিখে নিবেন। ইউটিউব বা কোনো অ্যাপের সহযোগিতাও নিতে পারেন তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে উচ্চারণ শুদ্ধ আছে কিনা।
২) পড়া পানি পান
উপরোক্ত দুআ, সূরা ও আয়াত গুলো ৩/৭ বার করে পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে দৈনিক কয়েকবার পান করাবেন।
৩) রুকইয়াহ গোসল
উক্ত সূরা, আয়াত ও দুআ গুলো ৩/৭ বার করে পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে গোসল করাবেন। কখনও বা বাচ্চা একদম ছোট হলে গোসল করানো না গেলে পরিষ্কার টাওয়েল ভিজিয়ে পুরো শরীর মুছে দিবেন।
গোসল ও পান করার জন্য পড়া পানি চাইলে বেশি পরিমাণ একসাথে তৈরি করে রেখে দিতে পারেন। তারপর যখন পান করা বা গোসলের প্রয়োজন হয় তখন এখান থেকে পরিমাণ মতো নিতে পারেন।
বাচ্চা যদি নিজেই পড়তে পারে তাহলে সে নিজে এইগুলো করবে। দুআ ও সূরা গুলো তিলাওয়াত করবে, পড়ার পর গায়ে ফুঁ দিবে, হাতে ফুঁ পুরো মুছে দিবে, পড়া পানি পান করবে ও রুকইয়াহ গোসল করবে। আর সে নিজে করতে না চাইলে আপনারাই এভাবে রুকইয়াহ করে দিবেন। এভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত রুকইয়াহ করে যাবেন।
উপরোক্ত নিয়মে ৩ দিন থেকে ৭ দিন বা ১০/১২ দিন রুকইয়াহ করুন। এতেই ইনশাআল্লাহ সুস্থ হয়ে যাবে। আর সুস্থ হয়ে গেলেও নিরাপত্তার গুলো স্থায়ীভাবে চালিয়ে যেতে হবে এবং মাঝেমধ্যেও রুকইয়াহ করবেন। এরপরও যদি সুস্থ না হয় তাহলে একজন অভিজ্ঞ আলিম রাকীর সরণাপন্ন হয়ে সরাসরি রুকইয়াহ করুন। নিজেদের সমস্যা থাকলে নিজেদের জন্যও রুকইয়াহ করবেন। আপনার সন্তানের সুস্থতার জন্য আপনার সুস্থতাও জরুরী। আল্লাহ তাআলা সবাইকে দ্রুত পরিপূর্ণ সুস্থতা দান করুন এবং সুস্থ রাখুন। আমীন।