মুসলিম প্রতিটি মানুষের জন্যই জাদুকে অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। জাদুর বাস্তবতা ও প্রভাবকে বিশ্বাস করতে হবে। যদি কেউ অস্বীকার করে তাহলে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যেতে পারে। ক্রিয়া ও ধাতু মূল সহ কুরআনে প্রায় ৩৮ জায়গায় সিহর(জাদু) শব্দটি এসেছে। কোরআনুল কারিমের অনেক যায়গায় যাদুর কথা রয়েছে। অন্তত ৪-৫ প্রকারের যাদুর কথা বলা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৫০এরও বেশি স্থানে জাদুর আলোচনা করা হয়েছে কুরআনে!
কোরআনে রাসূল সাঃ কে জাদু করার বিষয়টি আল্লাহ তাআলা আলোচনা করেছেন, তারও আগের নবী মূসা ও ফেরাউনের মধ্যকার জাদুর ঘটনাও বর্ণণা করেছেন, তারও আগের নবী সুলাইমান আলাইহিস সালাম এর যুগে মানুষ ও জ্বীন শয়তানদের জাদু চর্চার বিষয়েও আলোচনা করেছেন আল্লাহ তায়ালা।
এছাড়াও অধিকাংশ আয়াতে এরকম এসেছে যে, কোনো নবী তাঁর কওমের কাছে দাওয়াত নিয়ে গেছেন, আর তারা নবীকে যাদুকর বলেছে, নবীর ওপর যাদুকর হওয়ার অপবাদ দিয়েছে, অথবা বলেছে তোমাকে কেউ যাদু করেছে তাই তুমি এসব বকছো!(নাউযুবিল্লাহ)
এথেকে বুঝা যায়, মানব সভ্যতার শুরু থেকেই যাদু চর্চা রয়েছে, শুধু যে এই যুগেই যাদু আছে তা নয়। কিংবা জাদুটোনা আগের যুগে ছিল, বর্তমান আধুনিক যুগে নেই তাও নয়। বরং এই যুগে যাদুর চর্চা আরো বেশি। আর এটাও সুস্পষ্ট যে যাদু একটি ঘৃণিত বিষয়; একটি অভিশপ্ত শাস্ত্র!
এবার আসুন আমরা কুরআন ও হাদীস থেকে জাদুর বাস্তবতা ও প্রমাণ বিস্তারিত জেনে নিই।
কুরআন থেকে জাদুর প্রমাণঃ
দলিল —১
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَاتَّبَعُوا مَا تَتْلُو الشَّيَاطِينُ عَلَىٰ مُلْكِ سُلَيْمَانَ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلَٰكِنَّ الشَّيَاطِينَ كَفَرُوا يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ وَمَا أُنْزِلَ عَلَى الْمَلَكَيْنِ بِبَابِلَ هَارُوتَ وَمَارُوتَ وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّىٰ يَقُولَا إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلَا تَكْفُرْ ۖ فَيَتَعَلَّمُونَ مِنْهُمَا مَا يُفَرِّقُونَ بِهِ بَيْنَ الْمَرْءِ وَزَوْجِهِ وَمَا هُمْ بِضَارِّينَ بِهِ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ وَيَتَعَلَّمُونَ مَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ وَلَقَدْ عَلِمُوا لَمَنِ اشْتَرَاهُ مَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ وَلَبِئْسَ مَا شَرَوْا بِهِ أَنْفُسَهُمْ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ
অর্থঃ “এবং সুলাইমানের রাজত্বকালে শয়তানরা যা আবৃত্তি করতো, তারা তারই অনুসরণ করছে এবং সুলাইমান কুফুরী করেননি কিন্তু শয়তানরাই কুফুরী করেছিল। তারা লোকদেরকে যাদু বিদ্যা এবং যা বাবেল শহরে হারূত-মারত ফেরেশতাদ্বয়ের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছিল তা শিক্ষা দিতো, এবং তারা উভয়ে কাউকেও ওটা শিক্ষা দিতো না, যে পর্যন্ত তারা না বলতো যে, আমরা পরীক্ষা স্বরূপ, অতএব তুমি কুফরী করো না; অনন্তর যাতে স্বামী ও তদীয় স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ সংঘটিত হয়, তারা উভয়ের নিকট তা শিক্ষা করতো এবং তারা আল্লাহর হুকুম ব্যতীত তদ্বারা কারও অনিষ্ট সাধন করতে পারতো না এবং তারা ওটাই শিক্ষা করছে যাতে তাদের ক্ষতি হয় এবং তাদের কোন উপকার সাধিত হয় না এবং নিশ্চয় তারা জ্ঞাত আছে যে, অবশ্য যে কেউ ওটা ক্রয় করেছে, তার জন্যে পরকালে কোনই অংশ নেই এবং যার বিনিময়ে তারা যে আত্ম-বিক্রয় করেছে তা নিকৃষ্ট, যদি তারা তা জানতো!” (সূরা বাকারাঃ ১০২)
দলিল—২
মহান আল্লাহ বলেনঃ
قَالَ مُوسَىٰ أَتَقُولُونَ لِلْحَقِّ لَمَّا جَاءَكُمْ أَسِحْرٌ هَٰذَا وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُونَ
অর্থঃ “মূসা বললেনঃ তোমরা কি এ হক সম্পর্কে এমন কথা বলছো, যখন ওটা তোমাদের নিকট পৌছলো? এটা কি যাদু? অথচ যাদুকররা তো সফলকাম হয় না!” (সূরা ইউনুসঃ ৭৭)
দলিল —৩
মহান আল্লাহ বলেনঃ
فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَىٰ مَا جِئْتُمْ بِهِ السِّحْرُ إِنَّ اللَّهَ سَيُبْطِلُهُ إِنَّ اللَّهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ وَيُحِقُّ اللَّهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ
অর্থঃ “অতঃপর যখন তারা নিক্ষেপ করলো, তখন মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ যাদু এটাই; নিশ্চয়ই আল্লাহ এখনই এটাকে বানচাল করে দিবেন; (কেননা) আল্লাহ এমন বিপর্যয় সৃষ্টিকারী কাজ সম্পন্ন হতে দেন না। আর আল্লাহ স্বীয় অঙ্গীকার অনুযায়ী হক প্রতিষ্ঠিত করে দেন, যদিও পাপাচারীরা তা অপ্রীতিকর মনে করে ” (সূরা ইউনুসঃ ৮১-৮২)
দলিল —৪
তিনি আরো বলেনঃ
فَأَوْجَسَ فِي نَفْسِهِ خِيفَةً مُوسَىٰ قُلْنَا لَا تَخَفْ إِنَّكَ أَنْتَ الْأَعْلَىٰ وَأَلْقِ مَا فِي يَمِينِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوا إِنَّمَا صَنَعُوا كَيْدُ سَاحِرٍ وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتَىٰ
অর্থঃ “মূসা (আলাইহিস সালাম) তার অন্তরে কিছু ভীতি অনুভব করলো। আমি বললামঃ ভয় করো না, তুমিই প্রবল। তোমার ডান হাতে যা আছে তা নিক্ষেপ করো, এটা তারা যা করেছে তা গ্রাস করে ফেলবে, তারা যা করেছে তা তো শুধু যাদুকরের কৌশল; যাদুকর যেখানেই আসুক সফল হবে না।” (সূরা ত্ত্বো-হাঃ ৬৭-৬৯)
দলিল — ৫
মহান আল্লাহ বলেনঃ
وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ فَغُلِبُوا هُنَالِكَ وَانْقَلَبُوا صَاغِرِينَ وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِينَ قَالُوا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِينَ رَبِّ مُوسَىٰ وَهَارُونَ
অর্থঃ “তখন আমি মূসা-এর নিকট এই প্রত্যাদেশ পাঠালামঃ তুমি তোমার লাঠিখানা নিক্ষেপ কর, মূসা (আলাইহিস সালাম) তা নিক্ষেপ করলে ওটা একটা বিরাট সাপ হয়ে সহসা ওদের অলীক (মিথ্যা) সৃষ্টিগুলোকে গিলে ফেলল। পরিশেষে যা হক ছিল তা সত্য প্রমাণিত হলো, আর যা কিছু বানানো হয়েছিল তা বাতিল প্রমাণিত হলো। আর ফিরাউন ও তার দলবলের লোকেরা মুকাবিলার ময়দানে পরাজিত হলো এবং লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়ে গেল। যাদুকরগণ তখন সিজদায় পড়ে গেল। তারা পরিস্কার ভাষায় বললোঃ আমরা বিশ্ব প্রতিপালকের প্রতি অকপটে ঈমান আনলাম। (জিজ্ঞেস করা হলো— কোন বিশ্ব প্রতিপালকের প্রতি? তারা উত্তরে বললো) মূসা ও হারূনের প্রতিপালকের প্রতি।” (সূরা আরাফঃ ১১৭-১২২)
দলিল — ৬
মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ
অর্থঃ “বলঃ আমি আশ্রয় নিচ্ছি উষার স্রষ্টার, তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট হতে, অনিষ্ট হতে অন্ধকার রাত্রির যখন তা’ আচ্ছন্ন হয় এবং গিরায় ফুকদান কারিণীর এবং হিংসুকের অনিষ্ট হতেও যখন সে হিংসা করে।” (সূরা ফালাকঃ ১-৫)
ইমাম কুরতুবী (রাহেমাহুল্লাহ) বলেনঃ وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ অর্থাৎ ঐ সমস্ত যাদুকারিনীর যারা সুতার গ্রন্থীতে ফুৎকার দেয় যখন তারা মন্ত্র পড়ে তাতে। (তাফসীর কুরতুবীঃ ২০/২৫৭)
হাফেজ ইবনে কাসীর (রাহেমাহুল্লাহ) বলেনঃ وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ এর তাফসীরে মুজাহিদ, ইকরিমাহ, হাসান, কার্তাদাহ ও জাহহাক বলেনঃ যাদুকারিনীদের। (তাফসীর ইবনে কাসীরঃ ৪/৫৭৩)
ইবনে জারীর আততাবারী বলেনঃ অর্থাৎ ঐ সমস্ত যাদুকারিনীর অনিষ্ট হতে যারা সুতার গ্রন্থীতে ফুৎকার দেয় তখন তারা তার উপর মন্ত্র পড়ে। (তাফসীর আল-কাসেমীঃ ১০/৩০২)
কুরআনে এত বেশি জাদুর বর্ণনা এসেছে যে যাদুর অস্তিত্বের প্রমাণের জন্য আর হাদীস উল্লেখ করার কোনো প্রয়োজন নেই। যদি কুরআনে শুধুমাত্র একটি আয়াত ও থাকতো তবুও তা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ ছিল না। এরপরও আমরা কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করবো ইনশাআল্লাহ।
হাদিসে জাদুর বাস্তবতা ও প্রমাণঃ
দলিল—১
আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” اجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ ”. قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَمَا هُنَّ قَالَ ” الشِّرْكُ بِاللَّهِ، وَالسِّحْرُ، وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ، وَأَكْلُ الرِّبَا، وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيمِ، وَالتَّوَلِّي يَوْمَ الزَّحْفِ، وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلاَتِ ”.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় থেকে বিরত থেকো। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেগুলো কী? তিনি বললেন, (১) আল্লাহ্র সাঙ্গে শরীক করা (২) জাদু করা (৩) আল্লাহ তা‘আলা যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, শরীয়তসম্মত কারণ ব্যতিরেকে অন্যায়ভাবে তাকে হত্যা করা (৪) সুদ খাওয়া (৫) ইয়াতীমের সম্পদ গ্রাস করা (৬) রণক্ষেত্র (জিহাদের ময়দান) থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং (৭) সরলা, সতী-সাধ্বী ও পবিত্র চরিত্রের অধিকারীনি মু’মিন নারীর ( যিনা-ব্যভিচারের মিথ্যা ) অপবাদ দেয়া।
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৭৬৬; সহীহ মুসলিম- ১৬৩
দলিল—২
সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রা. থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন,
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ تَصَبَّحَ كُلَّ يَوْمٍ سَبْعَ تَمَرَاتٍ عَجْوَةً لَمْ يَضُرَّه“ فِي ذ‘لِكَ الْيَوْمِ سُمٌّ وَلاَ سِحْرٌ.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে সাতটি করে আজওয়া খেজুর (মদীনার উৎপন্ন এক জাতীয় উৎকৃষ্ট মানের খেজুর) আহার করে, সেদিন তাকে কোন বিষ বা যাদু ক্ষতি করতে পারে না । (বুখারী- ৫৪৪৫; মুসলিম ৫২৩৪)
দলিল —৩
আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ مَنِ اقْتَبَسَ عِلْمًا مِنَ النُّجُومِ اقْتَبَسَ شُعْبَةً مِنَ السِّحْرِ زَادَ مَا زَادَ
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জ্যোতিষ বিদ্যার কিছু শিক্ষা করলো, সে যেন যাদু বিদ্যার একটা শাখা আয়ত্ত করলো, এখন তা যত বাড়ায় বাড়াক।( অর্থাৎ তা যতো বৃদ্ধি পাবে যাদুবিদ্যাও ততো বাড়বে।)
আহমাদ, সুনানু আবি দাউদ ৩৯০৫; সুনানু ইবনি মাজাহ ৩৭২৬; রিয়াদুস সলিহিন ১৬৮০
দলিল —৪
ইমরান বিন হুসাইন রা. থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন,
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْسَ مِنَّا مَنْ تطيَّرَ أو تُطيِّر له أو تَكَهَّن أو تُكهِّن له أو سَحَر أو سُحِر له ومَن عقد عقدةً ومَن أتَى كاهنًا فصدَّقه بما قال فقد كفر بما أُنزِلَ على محمدٍ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم
রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন- যে কুলক্ষণ নির্ণয় করে, আর যার জন্য নির্ণয় করা হয়। যে ভবিষ্যদ্বাণী করে এবং যে ভবিষ্যদ্বাণী করায়, যে যাদু করে,আর যে যাদু করায়, যে যাদুর গিঁট দেয় এবং যার আবেদনে গিঁট দেয়া হয়, আর যে গণকের নিকট এলো এবং তাঁর কথা বিশ্বাস করলো সে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওপর নাযীলকৃত দ্বীন ইসলামকে অস্বীকার করলো। (নাউযুবিল্লাহ)
(মুসনাদে বাযযার ৩৫৭৮)
দলিল —৫
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কোনো এক স্ত্রী হতে বর্ণিত।
عَنْ صَفِيَّةَ، عَنْ بَعْضِ، أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ مَنْ أَتَى عَرَّافًا فَسَأَلَهُ عَنْ شَىْءٍ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةٌ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে লোক ‘গণকের’ নিকট গেল এবং তাকে কোন ব্যাপারে প্রশ্ন করল চল্লিশ রাত্রি তার কোন সলাত কবুল হবে না।
মুসলিম, হাদিস নং ৫৭১৪
দলিল —৬
আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ وَالْحَسَنِ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ مَنْ أَتَى كَاهِنًا أَوْ عَرَّافًا فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُولُ فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জ্যোতিষী অথবা কবিরাজের কাছে আসলো এবং তার কথা সত্য বলে বিশ্বাস করলো সে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপর যা (কুরআন মাজীদ) অবতীর্ণ হয়েছে তাকে অস্বীকার করল’
(মুসনাদু আহমাদ ৯৫৩৬; সুনানু আবি দাউদ ৩৯০৪; তিরমিযী ১৩৫)
অত্র হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হাতের রাশি দেখে ভাগ্যের ভবিষ্যৎ প্রকাশ করা, হাত চালিয়ে হারিয়ে যাওয়া বস্তুর সংবাদ দেয়া, টিয়া পাখির মাধ্যমে ভাগ্যের ভবিষ্যৎ প্রকাশ করা গণকের নিকট হারিয়ে যাওয়া বস্তু জানতে চাওয়া এগুলো সবই কুফর ও শিরক।
দলিল —৭
রাসুল স.কে যাদু করার ব্যপারে বিখ্যাত ও প্রসিদ্ধ হাদীস যা আয়িশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ যুরাইক গোত্রের লাবীদ ইবনু আ‘সাম নামক এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে যাদু করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মনে হতো যেন তিনি একটি কাজ করেছেন, অথচ তা তিনি করেননি। একদিন বা একরাত্রি তিনি আমার কাছে ছিলেন। তিনি বার বার দু‘আ করতে থাকেন। তারপর তিনি বলেনঃ হে ‘আয়িশাহ! তুমি কি বুঝতে পেরেছ যে, আমি আল্লাহর কাছে যা জানতে চেয়েছিলাম, তিনি আমাকে তা জানিয়ে দিয়েছেন। স্বপ্নে দেখি) আমার নিকট দু’জন লোক আসেন। তাদের একজন আমার মাথার কাছে এবং অপরজন দু’পায়ের কাছে বসেন। একজন তাঁর সঙ্গীকে বলেনঃ এ লোকটির কী ব্যথা? তিনি বলেনঃ যাদু করা হয়েছে। প্রথম জন বলেনঃ কে যাদু করেছে? দ্বিতীয় জন বলেন, লাবীদ বিন আ’সাম। প্রথম জন জিজ্ঞেস করেনঃ কিসের মধ্যে? দ্বিতীয় জন উত্তর দেনঃ চিরুনী, মাথা আঁচড়ানোর সময় উঠা চুল এবং এক পুং খেজুর গাছের ‘জুব’-এর মধ্যে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকজন সহাবী সাথে নিয়ে সেখানে যান। পরে ফিরে এসে বলেনঃ হে ‘আয়িশাহ! সে কূপের পানি মেহদীর পানির মত লাল) এবং তার পাড়ের খেজুর গাছের মাথাগুলো শয়তানের মাথার মত। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি এ কথা প্রকাশ করে দিবেন না? তিনি বললেনঃ আল্লাহ আমাকে আরোগ্য দান করেছেন, আমি মানুষকে এমন বিষয়ে প্ররোচিত করতে পছন্দ করি না, যাতে অকল্যাণ রয়েছে। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলে সেগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়।
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৭৬৩, সহীহ মুসলিম ৫৫৯৬।
জাদুর ব্যপারে এরকম আরো অসংখ্য হাদিস রয়েছে, এখানে শুধু কয়েকটি উল্লেখ করেছি। আশাকরি কুরআন ও হাদীসের দলীল প্রমাণ দ্বারা ইসলাম যাদুর অস্তিত্ব স্বীকার করে কিনা, জাদুর বাস্তবতা আছে কিনা বুঝতে পেরেছেন এবং এব্যাপারে আর কারো দ্বিমত নেই।