বদনজর কী? বদনজর কাকে বলে?

১. বদনজর হচ্ছে- প্রশংসা, মুগ্ধতা বা ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে কোনো কিছুর প্রতি তাকানো বা দৃষ্টি নিক্ষেপ করাকেই বদনজর বলে।

২. হাফেজ ইবনে হাজার রহ বলেন, “বদনজর বলতে বুঝায়, কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি কোনো খারাপ লোকের হিংসা মিশ্রিত দৃষ্টিপাত, যার ফলে উক্ত ব্যক্তি বা বস্তুর ক্ষতিসাধন হয়!

৩. ইবনু কাইয়্যিম রহ. বলেন বদনজর হচ্ছে একটি বিষাক্ত তীর যা হিংসুক বা বদনজরদাতার আত্মা থেকে বের হয়ে দৃষ্ট বা হিংসা কৃত ব্যক্তি বা বস্তুর দিকে নির্গত হয়। কখনও তা আঘাত করে আবার কখনও ভুল হয়।

৪. আল্লাহ তাআলার প্রশংসা বা বরকতের দুআ ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর গুণাগুণ বর্ণনা বা প্রশংসা করার মন্দ প্রভাবকেই বদনজর বলে।

৫. আল্লাহ তাআলা প্রশংসা ও বরকতের দুআ ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি মুগ্ধতা ও আশ্চর্যান্বিত হওয়ার দ্বারা যে ক্ষতি হয় তাকেই বদনজর বলা হয়।

৬. কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি হিংসা মিশ্রিত নিয়ে বা আশ্চর্য হয়ে হিংসার দৃষ্টি নিক্ষেপ করাকেই বদনজর বলে।

৭. অন্যত্র ইবনুল কাইয়্যিম রহ. বলেন বদনজর বলা হয় কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে মুগ্ধতা বা ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখা, অতঃপর তার থেকে অদৃশ্য সূক্ষ্ম প্রভাব নির্গত হয়ে দৃষ্টিপাতকৃত ব্যক্তি বা বস্তুর দিকে পৌঁছে, যার ফলে ক্ষতিসাধন হয়। অন্ধ ব্যক্তির দেখার উপর প্রভাব নির্ভর করে না, বরং সে অন্ধ হতে পারে, তবে তার কাছে বিষয়টি বর্ণনা করা হয় এবং তার আত্মা তাতে প্রভাবিত হয়, যদিও সে এটি দেখতে না পায়।

হাসাদ (হিংসা) এর সংজ্ঞা

১. হাসাদ বলা হয় কারো থেকে তার নেয়ামত বা সফলতা ধ্বংস হয়ে যাওয়া এবং তা আর তার কাছে ফিরে না আসার আকাঙ্ক্ষা করা।

২. কেউ কেউ বলেন, কোনো ব্যক্তির কোনো নেয়ামত বা সফলতা দূর হয়ে হিংসা কারী ব্যক্তি তা অর্জিত হওয়ার কামনা করা।

৩. রাগিব ইস্পাহানী রহ. বলেন কোনো নেয়ামত বা লাভ তার প্রাপ্য ব্যক্তি থেকে দূর হয়ে যাওয়ার কামনা করা। কখনও হয়তো সেটি ধ্বংস বা দূর হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ায়তেই ছিল।

৪. ইবনুল কাইয়্যিম রহ বলেন, হাসাদের মূল হচ্ছে আল্লাহ তাআলার নেয়ামত কোনো ব্যক্তির অর্জিত হওয়ার ওপর ঘৃনা এবং তা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশা করা।

বদনজরের প্রভাব এতই মারাত্মক যে এর দ্বারা মূহুর্তের মধ্যেই একজন সুস্থ মানুষ অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। এমনকি বদনজরের কারণে মৃত্যু পর্যন্তও হতে পারে।

একটি ভুল ধারণা: বদনজর শুধু খারাপ মানুষের দ্বারা লাগতে পারে এমন নয়। বরং নেককার মানুষের দ্বারাও বদনজর লাগতে পারে। তাই কখনো কখনো ভালোবাসার মানুষ, পিতা-মাতার নজরও লাগতে পারে। এমনকি নিজের ওপর নিজের নজরও লাগতে পারে।

বদনজর দুই প্রকার
১. মানুষের বদনজর
২. জ্বীনের বদনজর

এমনিভাবে হাসাদও দুই প্রকার; মানুষের হাসাদ ও জ্বীনের হাসাদ।

বদনজরের ক্ষেত্রও দুটি
১. ব্যক্তির ওপর বদনজর
২. বস্তুর ওপর বদনজর

বদনজর ও হাসাদের পার্থক্য

১. হাসাদ ব্যাপক নজর থেকে। অর্থাৎ প্রত্যেক বদনজরওয়ালা হিংসুক; কিন্তু প্রত্যেক হিংসুক বদ নজর ওয়ালা নয়। ফলে হাসাদ থেকে আশ্রয় চাওয়ার দ্বারা নজর থেকেও মুক্ত হওয়া যাবে। এজন্যই আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূল সাঃ কে হিংসুকের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাইতে আদেশ করেছেন। আর এটিই হলো কুরআনের ব্যাপকতা, মোজেযা ও অলংকারিত্ব।

২. হিংসার মূল বিষয় হল বিদ্ধেষ এবং অপরের নেয়ামত ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। আর বদনজরের মূল বিষয় হল মুগ্ধতা এবং অন্যের কোন কিছুকে খুব ভাল মনে করা, ভালো লাগা।

৩. হিংসার উৎস অন্তরের জ্বলন এবং হিংসাকৃত ব্যক্তির সম্পদের আধিক্য। আর বদনজরের উৎস হলো মুগ্ধতা এবং চোখের বা খারাপ আত্মার মন্দ দৃষ্টি।

৪. বদনজর হয় এমন জিনিসের ওপর যা দেখা যায়, চোখে সামনে থাকে এবং বাস্তবে বিদ্যমান। কিন্তু হাসাদের এটি শর্ত নয়, হিংসুক যা দেখেনি সে বিষয়েও হিংসা করতে পারে।

৬. ভবিষ্যতের বিষয়েও হিংসা হয়ে থাকে, অর্থাৎ যে বিষয়টি এখনও সংঘটিত হয়নি বা বাস্তবে রূপ নেয় নি সে বিষয়েও হিংসুক হিংসা করতে পারে। কিন্তু বদনজর এর বিপরীত, তথা বদনজরের প্রভাব বর্তমান উপস্থিত বিষয়ের উপর হয়ে থাকে।

৭. হিংসার প্রভাব হিংসুকের এমন বিষয়ের ওপর লাগে না যা সে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াকে অপছন্দ করে যেমন সম্পদ ও সন্তানাদী ইত্যাদি। কিন্তু এমন বিষয়ের ওপরও বদনজর লাগে যা সে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াকে অপছন্দ করে। যেমন সম্পদ ও সন্তানাদী ইত্যাদি।

৮. হিংসা নিকৃষ্ট হৃদয়ের মানুষ থেকেই হয়। প্রকারান্তরে বদনজর ভালো মানুষ ও নেককার ব্যক্তির দ্বারাও হয়ে থাকে। এজন্য নিজের ওপরও নিজের নজর লাগতে পারে।

৯. হাসাদ থেকেও বদনজর বেশি মারাত্মক ও ক্ষতিকর।

বদনজরের কারণে যেসব রোগ হতে পারে

১. জ্বর সর্দি ২. শরীরে বিভিন্ন স্থানে ব্যথা ৩. শ্বাসকষ্ট ৪. হাঁপানি ৫. এলার্জি ৬. হাই ব্লাড প্রেশার ৭. ক্যান্সার ৮. হার্ট অ্যাটাক ৯. ডায়াবেটিস ১০. বন্ধ্যাত্ব ১১. প্যারালাইসিস ১২. তোতলামি ১৩. সাময়িক বা স্থায়ী বোবা হয়ে যাওয়া ১৪. অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। এছাড়াও মহিলাদের অনিয়মিত মাসিক ও বিভিন্ন মেয়েলি সমস্যাসহ শারীরিক মানসিক যেকোনো সমস্যা হতে পারে।

এ সম্পর্কে দলিল প্রমাণ ইতিপূর্বে বিভিন্ন হাদিস থেকে জেনে এসেছেন। যেমন সাহল ইবনে হুনাইফ রা এর জ্বর আক্রান্ত হওয়া. হাসান হুসাইন রাঃ এর বদনজর আক্রান্ত হওয়া এবং এক বালিকার মুখে ব্রণ বা কালো দাগ হওয়ার হাদিস।

শেয়ার করুন -

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top