কোরআন সুন্নাহ থেকে বদনজরের প্রামাণিকা

১. আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেনঃ

وَقَالَ يَا بَنِيَّ لَا تَدْخُلُوا مِنْ بَابٍ وَاحِدٍ وَادْخُلُوا مِنْ أَبْوَابٍ مُتَفَرِّقَةٍ وَمَا أُغْنِي عَنْكُمْ مِنَ اللَّهِ مِنْ شَيْءٍ إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَعَلَيْهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُتَوَكِّلُونَ
এবং (নবী ইয়াকুব সেই সঙ্গে একথাও) বলল যে, হে আমার পুত্রগণ! তোমরা শহরে প্রবেশকালে সকলে এক দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না; বরং ভিন্ন-ভিন্ন দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। আল্লাহর কোন বিধান থেকে আমি তোমাদেরকে রক্ষা করতে পারি না, আল্লাহর নির্দেশই কেবল কার্যকর হয়। তাঁরই উপর আমি ভরসা করি, আর ভরসাকারীদের তাঁর উপরেই ভরসা করা উচিত ।” (সুরা ইউসুফ আয়াত ৬৭)

ইয়াকুব আলাইহিস সালাম যখন বিনইয়ামিন সহ তাঁর পুত্রদের মিশরে পাঠাচ্ছিলেন, তখন বাড়তি করে এ কথা বলে দিয়েছিলেন।

ইবনে আব্বাস রা. ইমাম মুজাহিদ রহ. কাতাদাহ রহ. সহ সকল মুফাসসিরকারকগণ নবি ইয়াকুব আলাইহিস সালামের ‘এক দরোজা দিয়ে প্রবেশ করো না, বরং ভিন্ন ভিন্ন দরোজা দিয়ে প্রবেশ করবে’— এই কথার ব্যাখ্যায় বলেছেন যে— ছেলেদের ব্যাপারে তিনি বদ-নজরের আশঙ্কা করেছিলেন। কারণ নবি ইয়াকুব আলাইহিস সালামের সকল সন্তানেরাই ছিলো অত্যন্ত স্বাস্থ্যবান, সুঠাম দেহের অধিকারী এবং অধিকন্তু অত্যন্ত সু-দর্শন। লোকজন যখন জানবে যে এই সবগুলো (ইউসুফ আলাইহিস সালাম ব্যতীত বাকি এগারোজন) একই পিতার সন্তানাদি, তখন বদ-নজর লেগে যেতে পারে। তাই ইয়াকুব আলাইহিস সালাম আগ থেকেই সন্তানদের সাবধান ও সতর্ক করে দিয়েছেন। পাশাপাশি এটাও উল্লেখ করে দিয়েছেন ‘এসব (বদনজর) তো আসলে আল্লাহর তৈরি সিস্টেম, এখানে আমার কিছু করার নাই.. আল্লাহর ওপর ভরসা ছাড়া!” পরিশেষে তা তাদের জন্য বদনজর হতে প্রতিরোধক হিসেবেই আল্লাহর হুকুমে কাজ হয়েছিল——- সংক্ষিপ্ত । (তাফসীর ইবনে কাসীরঃ ২/৪৮৫)
(বিস্তারিত জানতে তাফসীরে ইবনে কাসির অথবা বয়ানুল কোরআনে আয়াতের প্রাসঙ্গিক আলোচনা দেখা যেতে পারে..)

২. অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

وَإِنْ يَكَادُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَيُزْلِقُونَكَ بِأَبْصَارِهِمْ لَمَّا سَمِعُوا الذِّكْرَ وَيَقُولُونَ إِنَّهُ لَمَجْنُونٌ

অর্থঃ কাফিররা যখন উপদেশ বাণী (কুরআন) শ্রবণ করে তখন তারা যেন তাদের তীক্ষ্ম দৃষ্টি দ্বারা তোমাকে আছড়িয়ে ফেলতে চায় এবং বলেঃ সে তো এক পাগল। (সূরা কলামঃ ৫১)

হাফেজ ইবনে কাসীর (রাহেমাহুল্লাহ) ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) এবং মুজাহিদ থেকে বর্ণনা করেন যে, (لَيُزْلِقُونَكَ) এর উদ্দেশ্য হলো “তারা তোমার প্রতি বদনজর দিবে।” অর্থাৎ তারা তোমাকে হিংসার প্রতিফলন ঘটিয়ে রোগী বানিয়ে দিতে চায়।

হাফেজ ইবনে কাসীর, ইমাম বগভী প্রমুখ তফসীরবিদ এসব আয়াতের সাথে সম্পর্কিত একটি বিশেষ ঘটনাও বর্ণনা করেছেন। মক্কায় জনৈক ব্যক্তি নযর লাগানোর কাজে খুবই প্রসিদ্ধ ছিল। সে উট ইত্যাদি জন্তু-জানোয়ারকে নযর লাগালে তৎক্ষণা সেটি মরে যেত। মক্কার কাফিররা রসূলুল্লাহ্ (সা)-কে হত্যা করার জন্য সর্বপ্রযত্নে চেষ্টা করত তারা রসূলুল্লা (সা)-কে নযর লাগানোর উদ্দেশ্যে সে ব্যক্তিকে ডেকে আনল। সে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে নযর লাগানোর চেষ্টা করতো। কিন্তু আল্লাহ তা’আলা স্বীয় পয়গম্বরের হিফাযত করলেন। ফলে তাঁর কোন ক্ষতি হল না। শেষে যখন কাজ হতো না, তখন বলতো ধুর! এতো পাগল (নাউযুবিল্লাহ) এজন্য এর কিছু হচ্ছেনা..!! আর এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই আলোচ্য আয়াতসমূহ অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং আয়াতটি প্রমাণ বহন করে যে, বদনজরের কুপ্রভাবের বাস্তবতা রয়েছে, আল্লাহর হুকুমে। এ ব্যাপারে অনেক হাদীসও রয়েছে। (তাফসীর ইবনে কাসীরঃ ৪/৪১০)

৩. সূরা কাহাফে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,
وَلَوْلَا إِذْ دَخَلْتَ جَنَّتَكَ قُلْتَ مَا شَاءَ اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ ۚ إِن تَرَنِ أَنَا أَقَلَّ مِنكَ مَالًا وَوَلَدًا [ الكهف: 39]
তবে যখন তুমি তোমার বাগানে প্রবেশ করলে, তখন কেন “মা-শা-আল্লাহ, লা-ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” বললে না?” (সুরা কাহফ, আয়াত ৩৯)

এই আয়াতকে আলেমরা এ কথার প্রমাণ হিসেবে পেশ করেন যে, কোনো কিছু দেখে মুগ্ধ হলে সাথেসাথে মাশা-আল্লাহ, সুবহানাল্লাহ অথবা আলহামদুলিল্লাহ্‌ এসব বলতে হয়। যদি আলোচ্য আয়াতে উল্লেখিত ব্যক্তি নিজের বাগান দেখে মুগ্ধ হয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতো, আল্লাহকে স্মরণ করতো তাহলে ওর বাগান হয়তো নষ্ট হতো না।
এব্যাপারে বায়হাকী শরিফের হাদিস উল্লেখযোগ্য, আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন- “কোনো পছন্দনীয় বস্তু দেখার পর যদি কেউ বলে,
مَا شَاء اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّه
ِ (আল্লাহ যা চেয়েছে তেমন হয়েছে, আল্লাহ ছাড়া কারো ক্ষমতা নেই) তাহলে কোনো (বদনজর ইত্যাদি) বস্তু সেটার ক্ষতি করতে পারবে না।”

সুতরাং বুঝা গেল বদনজর ও এর কারণে ক্ষতি হওয়া সত্য ও বাস্তব। আলোচ্য আয়াত থেকে এটাও প্রমাণ হয় যে, নিজের নজর নিজেকেই লাগতে পারে, নিজের সম্পদে বা নিজ সন্তানদেরও লাগতে পারে। (বিস্তারিত জানতে দুররে মানসুর অথবা ইবনে কাসির দেখা যেতে পারে)

৪. আল্লাহ তাআলা তার নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে হিংসুকের হিংসার অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতে আদেশ করেছেন-
আল্লাহ তাআলা বলেন- وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَد
(হে নবী! আপনি বলুন এবং হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই) হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে। সূরা ফালাক ৫

আমরা প্রায় সবাই এই সূরাটি বিভিন্ন সময় বিশেষ করে নামাজে করে থাকি। কিন্তু কখনও এর অর্থ ও ব্যাখ্যা পড়ার ও চিন্তা করার সময় পাইনা এবং চেষ্টাও করিনা। অথচ এই সূরার অর্থ ও ব্যাখ্যা পড়লেই আমরা বুঝতে পারতাম বদনজর সত্য কি না? তাহলে আর কোনো সন্দেহ থাকতো না।

বদনজরের প্রমাণ হাদীস থেকে

১। আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেনঃ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “‏ الْعَيْنُ حَقٌّ ‏”‏‏.
বদ নজর সত্য। (বুখারীঃ ৫৭৪০, ৫৯৪৪) অর্থাৎ এর বাস্তবতা রয়েছে, এর কুপ্রভাব লেগে থাকে।

২। আয়েশা সিদ্দীকা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বর্ণনা করেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ “‏ اسْتَعِيذُوا بِاللَّهِ فَإِنَّ الْعَيْنَ حَقٌّ ‏”‏ ‏.‏

তোমরা বদ নজরের ক্রিয়া (খারাপ প্রভাব) থেকে রক্ষার জন্যে আল্লাহ তায়ালার সাহায্য প্রার্থনা কর। কেননা তা সত্য। (ইবনে মাযাহঃ ৩৫০৮)

৩। ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বর্ণনা করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ , قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْعَيْنُ حَقٌّ , لَوْ كَانَ شَيْءٌ سَابَقَ الْقَدَرَ سَبَقَتْهُ الْعَيْنُ فَإِذَا اسْتُغْسِلْتُمْ فَاغْسِلُوا» .

বদ নজর (এর খারাপ প্রভাব) সত্য এমনকি যদি কোন বস্তু ত্বাকদীরকে অতিক্রম করত তবে বদ নজর তা অতিক্রম করত। সুতরাং তোমাদেরকে যখন (এর প্রভাবমুক্ত হওয়ার জন্যে) গোসল করতে বলা হয় তখন তোমরা গোসল কর । (মুসলিমঃ 5595)

৪। আসমা বিনতে উসাইম (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত যে, তিনি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট আবেদন করনে যে, জাফরের সন্তানদের নজর লাগে আমি কি তাদের জন্যে ঝাড়ফুঁক করব? উত্তর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ

عَنْ عُبَيْدِ بْنِ رِفَاعَةَ الزُّرَقِيِّ، أَنَّ أَسْمَاءَ بِنْتَ عُمَيْسٍ، قَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ وَلَدَ جَعْفَرٍ تُسْرِعُ إِلَيْهِمُ الْعَيْنُ أَفَأَسْتَرْقِي لَهُمْ فَقَالَ ‏ “‏ نَعَمْ فَإِنَّهُ لَوْ كَانَ شَيْءٌ سَابَقَ الْقَدَرَ لَسَبَقَتْهُ الْعَيْنُ ‏”‏ ‏.‏

অর্থঃ হ্যাঁ! কোন বস্তু যদি তাকদীরকে অতিক্রম করত তবে বদ নজর তা অতিক্রম করত। (তিরমিযীঃ ২০৫৯, আহমদঃ ৬/৪৩৮) ৫।

৫। উম্মে সালমা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত যে,
وعن أم سلمة رضي الله عنها أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لجارية في بيتها رأى في وجهها سَفعة: ((بها نظرة، استرقوا لها))

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার ঘরে এক মেয়ে শিশুর চেহারায় দাগ দেখে তিনি বলেছেন যে, তার চেহারায় বদ নজরের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। তাকে ঝাড়-ফুক করাও। (বুখারীঃ ১/১৭১, মুসলিমঃ ৯৭)

৬। জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ

عن جابر بن عبد الله رضي الله عنهما، أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: العين تدخل الرجل القبر، وتدخل الجمل القدر

অর্থঃ বদ নজর মানুষকে কবর পর্যন্ত আর উটকে পাতিল পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। (সহীহুল জামেঃ ৪১৪৪, মুসনাদে শিহাব ৯৯০)

অর্থাৎ মানুষের নজর লাগায় সে মৃত্যুবরণ করে, যার ফলে তাকে কবরে দাফন করা হয়। আর উটকে যখন বদ নজর লাগে তখন তা মৃত্যু পর্যায়ে পৌছে যায় তখন সেটা যবাই করে পাতিলে পাকানো হয় ।

৭। জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ

عن جابر رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: أكثر من يموت من أمتي بعد قضاء الله وقدره بالعين

অর্থঃ আমার উম্মতের মধ্যে তাকদীরের মৃত্যুর পর সর্বাধিক বেশি মৃত্যু হবে বদনজরের কারণে। (মুসনাদে বাযযার, মুসনাদে তয়াদুসী ৩/৩১৭,/১৮৫৮, সহীহুল জামে ১২০৬)

৮। আবু যর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন যে, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ

وعن أبي ذر رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إنَّ العينَ لَتُولَعُ بِالرَّجُلِ بِإذنِ اللهِ تعالى ، حتى يَصْعَدَ حَالِقًا ثُمَّ يَتَرَدَّى منه

কোন ব্যক্তির যখন নজর লাগে আল্লাহর হুকুমে তখন এত বেশি প্রভাবিত হয় যে, সে যেন কোন উচু স্থানে চড়ল অতঃপর কোন নজর দ্বারা হঠাৎ করে নীচে পড়ে গেল। ( সহীহুল জামে ১৬৭৭)

৯। ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : ” الْعَيْنُ حَقٌّ، تَسْتَنْزِلُ الْحَالِقَ “.

অর্থঃ বদ নজর সত্য, তা যেন মানুষকে উপর থেকে নীচে ফেলে দেয়। (মুসনাদে ইমাম আহমদ ২৪৭৭, ২৬৮১)

১০। আয়েশা সিদীকা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত,
عن عائشة رضي الله عنها قالت: “كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يأمرني أن أسترقي من العين”

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বদ নজর থেকে বাচার জন্যে ঝাড়-ফুক করার নির্দেশ দিতেন। (বুখারীঃ ১০/১৭০, মুসলিমঃ ২১৯৫)

১১। আনাস বিন মালেক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত যে,
وعن أنس بن مالك رضي الله عنه قال: “رخَّص رسول الله صلى الله عليه وسلم في الرُّقْيَة من العين والحُمَة والنملة”.

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নজর থেকে হেফাযত ও বিষাক্ত প্রাণীর দংশন ও ক্ষত বিশিষ্ট রোগ থেকে রক্ষার জন্যে ঝাড়-ফুকের অনুমতি প্রদান করেছেন। (মুসলিমঃ ২১৯৬)

১২। জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত যে,

وعن جابر رضي الله عنه قال: رخص رسول الله صلى الله عليه وسلم لآل حزم في رُقية الحية، وقال لأسماء بنت عميس: ((ما لي أرى أجسام بني أخي ضارعة – نحيفة – تصيبهم الحاجة؟)) قالت: لا، ولكن العين تُسرِع إليهم، فقال: ((ارْقِيهم))، قالت: فعرَضْتُ عليه، فقال: ((ارقيهم))

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আলে হাযমকে সাপে দংশিত ব্যক্তির ঝাড়-ফুকের অনুমতি প্রদান করেছেন। আর আসমা বিনতে উমাইসকে বললেন, কি ব্যাপার আমার ভাইয়ের সান্তানদেরকে দুর্বল দেখছি, তাদের কি কিছু হয়েছে? আসমা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বললেন না, কিছু হয়নি তবে বদ নজর তাদেরকে দ্রুত লেগে যায়। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাদেরকে ঝাড়-ফুক করাও অতঃপর তাকে তার সামনে নিয়ে আসা হলোঃ তিনি বলেন, তাদেরকে ঝাড়-ফুক কর। ( সহীহ মুসলিম ২১৯৮)

১৪. এক সাহাবীর প্রসিদ্ধ ঘটনা
আবূ উমামা ইবনু সহল ইব্নু হুনাইফ (র) থেকে বর্ণিতঃ
(জুহফার নিকটবর্তী) খাররার নামক স্থানে আমার পিতা সহল ইবনু হুনাইফ গোসল করার মনস্থ করে জুব্বা খুলে ফেললেন। আমির ইবনু রবীয়া দেখতেছিলেন। আমার পিতা সহল সুন্দর ও সুদর্শন লোক ছিলেন। আমির বললেন, আজকের মতো আর কোনদিন আমি এত সুন্দর মানুষ দেখিনি, এমন কি এত সুন্দর দেহবিশিষ্ট কোন যুবতী নারীও দেখিনি। (আমিরের এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই) তৎক্ষণাৎ সহলের গায়ে জ্বর চলে আসে এবং জ্বরের মাত্রা তীব্র হয়ে যায়। অতঃপর এক সাহাবী এসে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এ অবস্থা জানালেন যে, সহলের জ্বর এসেছে এবং সে আপনার সাথে যেতে পারবে না। সংবাদ পেয়ে তখন রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহল রাদিআল্লাহু কে দেখতে এলেন, সহল রা. কে হঠাৎ করে এমনটা হবার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি পুরো ঘটনা খুলে বললেন। এটা শুনে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, তোমাদের কেউ নিজের ভাইকে কেন এভাবে নজর দিয়ে হত্যা করে ? তুমি যখন তাকে দেখলে তখন কেন বরকতের দুআ করলে না? নিশ্চয় বদনজর সত্য। তুমি সহলের জন্য ওযূ করো, তাকেও ওযুর পানি দাও। অতঃপর আমির রাদিআল্লাহু সহল রাদিআল্লাহুর জন্য ওযূ করলেন। তারপর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশে ওযুর পানি তার গায়ে ঢেলে দিলেন। তখন সহল রাদিআল্লাহু পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলেন। অতঃপর তিনি (সাহল) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে গেলেন, আর তাঁর কোন অসুবিধা তখন ছিল না। (মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হাদিস ১৬৮৮) হাদিসের মান: সহিহ হাদিস))

১৫. আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত,
عن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يَتَعَوَّذُ مِنَ الجَانِّ، وعَيْنِ الإنسان، حتى نَزَلَتْ المُعَوِّذتان، فلمَّا نَزَلَتا، أخذ بهما وتركَ ما سواهما.

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জ্বিন ও মানুষের কু-দৃষ্টি হতে আশ্রয় চাইতেন। তারপর সূরা ফালাক ও সূরা নাস নাযিল হলে তিনি এ সূরা দুটি গ্রহণ করেন এবং বাকীগুলো পরিত্যাগ করেন। (তিরমিজি, হাদিস নং ২০৫৮, ইবনু মা-জাহ (৩৫১১)। হাদিস সহিহ।

শেয়ার করুন -

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top